To be yourself in a world that is constantly trying to make you something else is the greatest accomplishment.

— Ralph Waldo Emerson

ছড়িয়ে দাও ক্ষমা -শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়

আজ ভোরবেলা উঠে বারবার আমার ক্যানিং স্টেশনের কথা মনে পড়ছিল। কুড়েদের জীবনে দুটি একটি ভোর আসে এইরকম যার রং ফুরফুরে নীল। মৃতদেহের ওপর সেই সব ফুল ঝরার শব্দ হয়, যারা ক্ষুদ্র লঘু, যাদের রং টগর ফুলের মতন সাদা।
চমকে ভাঙে ঘুম। কারও কাছে ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে করে। কোনও অপরাধের কথা মনে পড়ে না, শুধু নিজের শরীর থেকে অদ্ভুত দুর্গন্ধ বেরোয় এক রকম, মনে হয়, পচা বাড়িটা থেকে বেরিয়ে কোথাও ঘাসের ওপর বসি।
যেন কাল রাত্রে ঘুমের মধ্যে কোনও গুরুজনের গায়ে পা লেগে গেছে। পায়ের আঙুলে তাই চন্দনের গন্ধ— আমার ভাল লাগে না। অনুশোচনায় পিছল হয়ে যায় মুখ। মাথার ভেতর থেকে অজস্র কীট-পতঙ্গ বেরিয়ে সারা বিছানায় খুঁজে বেড়ায় আক্রমণের চিহ্ন, খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়, ফিরতে পারে না আর।
একটি একটি করে ওদের গুছিয়ে তুলতে চেষ্টা করি। বলি, দেখ দেখ, কেমন ফুরফুরে নীল এই ভোরবেলা। সন্ধান নয়, এখন ক্ষমা চাইবার সময়। পৃথিবীর সব নিরপরাধ মানুষ এই সময়ে প্রার্থনা করে। বলি, তোমরা আমার সঙ্গে এসো ওই ঠান্ডা ঘাসের ওপর। আমরা নতজানু হয়ে বসি।
অনেক দিন আগে ক্যানিং স্টেশনে যেমন আমরা একদল যুবক প্রার্থনা করেছিলাম, হে মহাদ্যুতি, আমাদের শরীর থেকে রাত্রি মুছিয়ে দাও, – তেমনি আজ আবার করজোড়ে বলতে ইচ্ছে করছিল, আমাদের প্রসারিত বুকের ওপর ছড়িয়ে দাও ক্ষমা: অজস্র লঘু সাদা নিঃশব্দ টগরফুল।

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0