Category: নিবন্ধ

article নিবন্ধ লেখা গল্প কবিতা

  • ভব সাগর তারণ কারণ হে

    গুরুমন্ত্র:

    ভব সাগর তারণ কারণ হে
    রবি নন্দন বন্ধন খন্ডন হে
    শরনাগত কিঙ্কর ভীত মনে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে

    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে
    হৃদি কন্দর তামস ভাস্কর হে
    তুমি বিষ্ণু প্রজাপতি শঙ্কর হে

    পরব্রহ্ম পরাৎপর বেদ ভণে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে
    মন বারণ শাসন অঙ্কুশ হে
    নরত্রান তরে হরি চাক্ষুষ হে

    গুণগান পরায়ণ দেবগণে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে

    কুলকুণ্ডলিনী ঘুম ভঞ্জক হে
    হৃদিগ্রন্থি বিদারণ কারক হে
    মম মানস চঞ্চল রাত্র দিনে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে

    রিপুসূদন মঙ্গলনায়ক হে
    সুখ শান্তি বরাভয় দায়ক হে
    ত্রয় তাপ হরে তব নাম গুনে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে

    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে
    তব নাম সদা শুভ সাধক হে
    পতিতাধাম মানব পাবক হে

    মহিমা তব গোচর শুদ্ধমনে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে
    জয় সদ্গুরু ঈশ্বর প্রাপক হে
    ভব রোগ বিকার বিনাশক হে

    মন যেন রহে তব শ্রীচরণে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে

    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে
    গুরুদেব দয়া কর দীন জনে

    Bhabo Sagaro Tarono #Gurumantro #গুরুমন্ত্র #ভবসাগরতারণকারণহে #Devotional #ভক্তিমূলক #BengaliLyricalJukebox#Ramthakur#BaidehiSengupta

    LoknathBaba #AnukulThakul #SriRamKrishna

  • ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো, দেখো তো চিনতে পারো কি না

    কণ্ঠঃ লতা মুঙ্গেশকার
    সুর ও সঙ্গীতঃ ভূপেন হাজারিকা
    গীতিকারঃ শিবদাস ব্যাণার্জী

    গানের কথাঃ

    ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো
    দেখো তো চিনতে পারো কি না
    ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো
    দেখো তো চিনতে পারো কি না
    আমার দুচোখে চোখ রেখে দেখো
    বাজে কি বাজে না মনোবীণা
    ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো
    দেখো তো চিনতে পারো কি না।।

    সোনালি বিকেলে গাছের ছায়ায়
    মুখোমুখি বসে নীল সন্ধ্যায়
    সোনালি বিকেলে গাছের ছায়ায়
    মুখোমুখি বসে নীল সন্ধ্যায়
    জীবনানন্দ তুমি তো শোনাতে
    জীবনানন্দ তুমি তো শোনাতে
    ভেবে দেখো মনে পড়ে কি না
    আমার দুচোখে চোখ রেখে দেখো
    বাজে কি বাজে না মনোবীণা
    ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো
    দেখো তো চিনতে পারো কি না।।

    পটভূমিকায় শহীদ মিনার
    নাগরিক চাঁদ উঠেছে আবার
    পটভূমিকায় শহীদ মিনার
    নাগরিক চাঁদ উঠেছে আবার
    বনলতা সেন শোনাবে কে আর
    বনলতা সেন শোনাবে কে আর
    এই আমি আজ তুমি হীনা
    আমার দুচোখে চোখ রেখে দেখো
    বাজে কি বাজে না মনোবীণা
    ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো
    দেখো তো চিনতে পারো কি না।।

    Bhalo Kore Tumi Cheye Dekho (Lyrics) by Lata Mangeshkar l ভালো করে তুমি চেয়ে দেখো

    Provided to YouTube by Sa Re Ga Ma

    Bhalo Kore Tumi Cheye Dekho · Lata Mangeshkar

  • সরস্বতী নদী তীরে, কল্পনায় ঘিরে ঘিরে । Saraswati Nodi (Salil Chowdhury 1982)

    Sarawsati Nodi song originated by Salil Chowdhury in the year of 1982.

    lyrics –
    সরস্বতী নদী তীরে,
    কল্পনায় ঘিরে ঘিরে।
    সরস্বতী নদী তীরে,
    কল্পনায় ঘিরে ঘিরে।
    আল্পনায় আঁকা উঠোন পেরিয়ে যদি উঠতে দাওয়ায়
    তাহলে দেখতে পেতে,
    আমার প্রেয়সী তুমি সিঁদুর দিয়ে।

    ভ্রমর কৃষ্ণ চোখ দুটি,
    ঠোঁট গোলাপ যেন খুটি খুঁটি।
    বসতে দিতো সে শীতলপাটিতে কত যত্ন করে
    শুধাতো মৃদু হেসে আবার কবে আমি যাবো ফিরে।
    হায়রে আর তো কখনো,
    সে গাঁয়ে তে ফিরে আর যাবো না
    যা কিছু হারালো আর তো ফিরে তাকে পাবো না।

    পুবের আলো ফুটতে না ফুটতে
    রোজ তাকে হতো যে উঠতে।
    পান্তা ভাতে কাঁচা লঙ্কা মেখে দিয়ে জারক লেবু
    দিতো সে পিড়ি পেতে খেতে,
    পাখার হাওয়া দিতে দিতে।
    কি জানি কি ভেবে কি হলো,
    চিরকালের মতো সে গেলো
    কি জানি কি ভেবে কি হলো,
    চিরকালের মতো সে গেলো।
    দু চোখে মিনতি করে,
    কেঁদে সে হাত ধরে বলে গেলো
    জনমে জনমে যেন তোমাকে পাই আমি ফিরে ফিরে।
    হায়রে আর তো কখনো,
    সে গাঁয়ে তে ফিরে আর যাবো না
    যা কিছু হারালো আর তো ফিরে তাকে পাবো না

  • আমি যদি পঁচিশ বছর বাঁচতাম রে

    Lyrics:
    আমি যদি পঁচিশ বছর বাঁচতাম রে
    তবে তোমার কাছে আসতাম না
    তোমায় ভালোবাসতাম না
    কেন আমি পৃথিবীতে আসলাম রে
    কিসের আশায় তোমায় ভালোবাসলাম রে।

    আমি যদি জন্মের আগে মরতাম রে
    তবে তোমার দেখা পাইতাম না
    তোমার ভালোবাসতাম না,
    কেন আমি পৃথিবীতে আসলাম রে
    কিসের আশায় তোমায় ভালোবাসলাম রে।

    তবু কেন এতো মায়া রে
    আমায় বেঁধে সুতো গিট খায়
    আমার বেঁধে সুতো গিট খায়
    প্রতি স্টেশন থামি কার আশায় রে
    তোমার স্টেশন কখনো তো আসেনা।

    আমি যদি পঁচিশ বছর বাঁচতাম রে
    তবে তোমার কাছে আসতাম না
    তোমায় ভালোবাসতাম না
    কেন আমি পৃথিবীতে আসলাম রে
    কিসের আশায় তোমায় ভালোবাসলাম রে।

    Bagdhara are:
    Vocal | Guitar: Kazi Zohad Yazdani
    Bass Guitar : G.M. Faruk Johny
    Drums | Percussions: Pantha Singha

    Audio Production: Studio Chanachur
    Creative Production: Redugraphy
    Video Production: Maa-Babar Dowa Production
    Post Production: Clarte Studios
    Animation: Md.Toriqul Islam

    Mixed & Mastered : Taawkir Tajammul Nisshobdo
    Recordist: Taawkir Tajammul Nisshobdo | Tawfiq Taj Niervik | Rakib Mahmud Ovee
    Art Designer : Reduanul Islam Maruf
    Editing : Md.Toriqul Islam | Pantha Singha | Reduanul Islam Maruf
    Official Photographer : Meherab Shanto | Muhammad Rokibul Hasan
    Official Merchandise Partner: Heavy Metal T-Shirt

    Bagdhara – Pochish Bochor(পঁচিশ বছর) | (Official Audio)

    ami jodi poshish bochor bastam re

    “Pochish Bochhor” is the title track from Bagdhara’s debut album “Pochish Bochhor”.

    Lyrics & Tune : Kazi Zohad Yazdani
    Composed : Bagdhara

  • E Ruher Tole (এ রুহের তলে) | Penoa | এ রুহের তলে | Official Music Video

    Lyrics :

    এ রুহের তলে এক ফালি রাত্রি ঘুমায়
    মৃদু শান্ত বাতাস ও পবিত্র আঁধার
    ঘিরে রয়… (২)

    যেন এক নিরাধার উপকূল এ হৃদয়; (২)
    শুধু ঢেউ আসে, আর ফিরে না

    এ রুহের তলে এক ফালি রাত্রি ঘুমায়
    মৃদু শান্ত বাতাস ও পবিত্র আঁধার
    ঘিরে রয়…

    যে তোমার সাথে, গোল পৃথিবীর ভ্রমণে (২)
    বারেবার দেখা হয় যে অনন্ত পথে

    সে তোমার মোহে ঘুরতে আবার এসেছি
    এ সমস্ত পথের পরে ঘর বেঁধেছি
    এ রুহের তলে…

    যতোবার গেছি সেই পথে শ্রান্ত হয়ে (২)
    পৃথিবীর প্রতি ঘূর্ণনে মূর্ত হয়ে
    ভালোবাসতে তোমায় বলে বুদ্ধ-পাখি
    যে পাখির মতো মৌন তোমার সে আঁখি (২)
    ঘিরে রয়…

    এ রুহের তলে এক ফালি রাত্রি ঘুমায়
    মৃদু শান্ত বাতাস ও পবিত্র আঁধার
    ঘিরে রয়

    যেন এক নিরাধার উপকূল এ হৃদয়; (২)
    শুধু ঢেউ আসে, আর ফিরে না

    এ রুহের তলে এক ফালি রাত্রি ঘুমায়
    মৃদু শান্ত বাতাস ও পবিত্র আঁধার
    ঘিরে রয়…

    Original: E Ruher Tole (এ রুহের তলে) | PENOA
    Album: E RUHER TOLE
    Band: PENOA
    Lyrics: Yeaseer Arafat
    Tune: Vogoban Rudra
    Vocal, Guitar: Rathin Paul
    Drums: Anindya Paul Jit
    Bass: Moung Cho
    Music producer: Farmin Faisal
    Mixing & Mastering: Farmin Faisal

    Video:

    Director: Shahdat Hossain
    Cinematographer: Pankaj Chowduri Roni
    Art Direction: Hrifat Mollik
    Camera Assistant: Abdul Khalek
    Audio support: Niloy Paul

  • জ্বর কেন হয়?

    জ্বর হল শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়া। একজন সুস্থ মানুষের শরীরের তাপমাত্রা সাধারণত ৩৬.১ থেকে ৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯৬.৮ থেকে ৯৮.৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) থাকে। যখন শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বা তার বেশি হয়, তখন তাকে জ্বর বলা হয়।

    জ্বর আসলে কোনো রোগ নয়, বরং এটি রোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ। অনেক কারণে জ্বর হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

    সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা পরজীবীর সংক্রমণ জ্বর হতে পারে। যেসব সংক্রমণ জ্বর হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে সর্দি-কাশি, ফ্লু, টনসিলাইটি, গলাব্যথা, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ইত্যাদি।
    অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থা: জ্বর অন্যান্য চিকিৎসা অবস্থার কারণেও হতে পারে, যেমন:
    ক্যান্সার
    থাইরয়েড সমস্যা
    দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা
    নির্দিষ্ট ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
    প্লাজমা থাইরয়েডোস্টেরয়েড (পিটিএস) এর উচ্চ মাত্রা
    অন্যান্য কারণ: জ্বর অন্যান্য কারণগুলির কারণেও হতে পারে, যেমন:
    তীব্র তাপমাত্রা
    হিট স্ট্রোক
    অ্যালকোহল উইথড্রয়াল
    মানসিক চাপ
    জ্বরের কারণ নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসক রোগীর লক্ষণ, ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে একটি সম্ভাব্য নির্ণয় তৈরি করবেন। নির্ণয় নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা, মূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে বা অন্যান্য পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন।

    জ্বরের চিকিৎসা নির্ভর করে এর কারণ এবং তীব্রতার উপর। সাধারণত, জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে, আরও জটিল চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

    জ্বরের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত:

    জ্বর সাধারণত একটি ভালো লক্ষণ। এটি শরীরের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া।
    জ্বর হলে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা জরুরি।
    জ্বর বেশি হলে বা অন্যান্য কোনও লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

  • কিভাবে লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়া যাবে?

    লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার জন্য এখানে কিছু টিপস দেওয়া হল:

    একটি শান্ত এবং মনোরম পরিবেশ তৈরি করুন। টেবিল পরিষ্কার করুন, আপনার ফোন এবং অন্যান্য বিঘ্নকারীগুলিকে দূরে রাখুন এবং একটি উজ্জ্বল এবং আরামদায়ক আলোর উৎসের ব্যবস্থা করুন।

    সঠিক সময়ে পড়ুন। আপনি যখন সবচেয়ে সজাগ এবং ফোকাস করতে পারেন তখন পড়ুন। বেশিরভাগ লোক সকালে বা বিকেলে পড়ার সময় পায়।

    সঠিক সময়ে পড়ুন

    ছোট ছোট অংশে পড়ুন। একবারে অনেক কিছু পড়তে চেষ্টা করার পরিবর্তে, প্রতিটি 30-45 মিনিটের পরে ছোট ছোট অংশে পড়ুন। এর ফলে আপনার মনোযোগ বজায় রাখা সহজ হবে।

    ছোট ছোট অংশে পড়ুন

    অনুচ্ছেদগুলির মূল বিষয়বস্তু বুঝুন। প্রতিটি অনুচ্ছেদের মূল বিষয়বস্তু বুঝতে চেষ্টা করুন এবং এটিকে আপনার নিজের শব্দে সংক্ষেপিত করুন। এটি আপনাকে পঠিত তথ্যটিকে আরও ভালভাবে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করবে।

    সমস্যাগুলি সমাধান করুন বা প্রশ্নের উত্তর দিন। আপনি পড়ার সময় যেকোনো সমস্যা বা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। এটি আপনাকে তথ্যটি আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে আরও মনোযোগী রাখবে।

    পড়ার পরে রিভিউ করুন। আপনি যে তথ্যটি পড়েছেন তা পুনরাবৃত্তি করার জন্য সময় নিন। এটি আপনাকে তথ্যটিকে আরও ভালভাবে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করবে এবং আপনাকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করবে।

    এখানে কিছু অতিরিক্ত টিপস রয়েছে যা আপনাকে লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে সাহায্য করতে পারে:

    আপনার পড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনি কী শিখতে বা বুঝতে চান তা ভেবে দেখুন। এটি আপনাকে পড়ার সময় ফোকাস করতে সাহায্য করবে।
    আপনার পড়ার উপাদানকে সংক্ষিপ্ত করুন। প্রতিটি অধ্যায় বা বিষয়ের জন্য একটি সংক্ষিপ্তসার তৈরি করুন। এটি আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলিকে মনে রাখতে সাহায্য করবে।
    একটি স্টাডি গ্রুপ তৈরি করুন। অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে পড়ার সময় এবং প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার মাধ্যমে আপনি আরও মনোযোগী থাকতে পারেন।
    পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করুন। আপনার সময়সূচীতে পড়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করুন এবং সেই সময়সূচী মেনে চলুন।
    লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়া একটি দক্ষতা যা অনুশীলনের মাধ্যমে উন্নত করা যেতে পারে। উপরে দেওয়া টিপসগুলি অনুসরণ করে আপনি আপনার পড়ার দক্ষতা উন্নত করতে এবং আপনার শিক্ষার বিষয়বস্তুতে আরও ভালভাবে মনোযোগ দিতে পারেন।

  • কিভাবে মোবাইল আসক্তি কমানো যাবে?

    মোবাইল আসক্তি একটি গুরুতর সমস্যা যা জীবনের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করতে পারে। মোবাইল আসক্তি কমাতে কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে।

    ১. আপনার ব্যবহারের সময় সীমা নির্ধারণ করুন। প্রতিদিন মোবাইল ফোনে ব্যয় করার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করুন এবং সেই সময়সীমা মেনে চলুন।

    মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময়সীমা নির্ধারণ করুন

    ২. আপনার ফোনে নোটিফিকেশন বন্ধ করুন। অনাকাঙ্ক্ষিত নোটিফিকেশন আপনাকে আপনার ফোন পরীক্ষা করতে উত্সাহিত করতে পারে। তাই, আপনার ফোনে অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করুন।

    আপনার ফোনে নোটিফিকেশন বন্ধ করুন

    ৩. আপনার ফোনটিকে আপনার হাতের নাগালের বাইরে রাখুন। যখন আপনি কাজ করছেন, পড়াশোনা করছেন বা অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিচ্ছেন তখন আপনার ফোনটিকে আপনার হাতের নাগালের বাইরে রাখুন।

    ৪. আপনার ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় সীমা নির্ধারণ করুন। প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করুন এবং সেই সময়সীমা মেনে চলুন।

    ৫. আপনার ফোনে ব্যবহারের জন্য অ্যাপগুলি সীমিত করুন। আপনার ফোনে আপনার প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলি ছাড়া অন্য অ্যাপগুলি অপসারণ করুন।

    ৬. আপনার ফোনে ব্যয় করা সময় পর্যবেক্ষণ করুন। আপনার ফোনে ব্যয় করা সময় পর্যবেক্ষণ করতে একটি অ্যাপ ব্যবহার করুন। এটি আপনাকে আপনার ব্যবহারের প্রবণতাগুলি বুঝতে এবং সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে।

    ৭. আপনার ফোনের পরিবর্তে অন্যান্য কার্যকলাপগুলিতে জড়িত হন। আপনার ফোনের পরিবর্তে অন্যান্য কার্যকলাপগুলিতে জড়িত হওয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার ফোনের ব্যবহার কমাতে পারেন। যেমন, আপনি আপনার বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পারেন, বই পড়তে পারেন, বা খেলাধুলা করতে পারেন।

    ৮. পেশাদার সাহায্য নিন। যদি আপনার মোবাইল আসক্তি আপনার জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে থাকে, তাহলে পেশাদার সাহায্য নেওয়ার কথা বিবেচনা করুন। একজন থেরাপিস্ট আপনাকে আপনার আসক্তি মোকাবেলায় এবং স্বাস্থ্যকর ব্যবহারের প্যাটার্ন বিকাশে সহায়তা করতে পারে।

    মোবাইল আসক্তি একটি জটিল সমস্যা, তবে এটি প্রতিরোধ বা মোকাবেলা করা সম্ভব। উপরে উল্লিখিত টিপসগুলি অনুসরণ করে আপনি আপনার ফোনের ব্যবহার কমাতে এবং আপনার জীবনের অন্যান্য দিকগুলিতে ফোকাস করতে পারেন।

  • ইনসুলিন কী? ইনসুলিন কেন প্রয়োজন?

    ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন যা অগ্ন্যাশয়ের বিটা কোষ থেকে নিঃসৃত হয়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইনসুলিন রক্তে থাকা গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। কোষ গ্লুকোজকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করে।

    ইনসুলিন প্রয়োজন কারণ:

    ইনসুলিন রক্তে থাকা গ্লুকোজকে কোষে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।
    কোষ গ্লুকোজকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করে।
    ইনসুলিন রক্তে থাকা গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
    ইনসুলিনের অভাবে রক্তে থাকা গ্লুকোজ কোষে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এ অবস্থাকে বলা হয় হাইপারগ্লাইসেমিয়া। হাইপারগ্লাইসেমিয়া গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন:

    কিডনি রোগ
    অন্ধত্ব
    স্ট্রোক
    হার্ট অ্যাটাক
    ইনসুলিন প্রয়োজন এমন কিছু রোগ হলো:

    টাইপ ১ ডায়াবেটিস: এই রোগে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না।
    টাইপ ২ ডায়াবেটিস: এই রোগে অগ্ন্যাশয় ইনসুলিন তৈরি করতে পারে, তবে শরীর সেই ইনসুলিন ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না।
    ইনসুলিন বিভিন্ন উপায়ে দেওয়া যেতে পারে, যেমন:

    ইনজেকশন
    ইনসুলিন পম্প
    ইনহেলার
    ইনসুলিন ব্যবহারকারীদের অবশ্যই রক্তে থাকা গ্লুকোজের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ইনসুলিনের মাত্রা সামঞ্জস্য করতে হবে।

  • শরীফ থেকে শরিফা হয়ে ওঠার গল্প

    শরীফা

    শরীফা বললেন, যখন আমি তোোমাদের স্কুলে পড়তাম তখন আমার নাম ছিল শরীফ আহমেদ। আনুচিং অবাক
    হয়ে বলল, আপনি ছেলে থেকে মেয়ে হলেন কী করে? শরীফা বললেন, আমি তখনও যা ছিলাম এখনও তাই
    আছি। নামটা কেবল বদলেছি। ওরা শরীফার কথা যেন ঠিকঠাক বুঝতে পারল না।
    আনাই তাকে জিজ্ঞেস করল, আপনার বাড়ি কোোথায়? শরীফা বললেন, আমার বাড়ি বেশ কাছে। কিন্তু আমি
    এখন দূরে থাকি। আনাই মাথা নেড়ে বলল, বুঝেছি, আমার পরিবার যেমন অন্য জায়গা থেকে এখানে এসেছে,
    আপনার পরিবারও তেমনি এখান থেকে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে। শরীফা বললেন, তা নয়। আমার পরিবার
    এখানেই আছে। আমি তাদের ছেড়ে দূরে গিয়ে অচেনা মানুষদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেছি। এখন সেটাই
    আমার পরিবার। তাদের অবাক হতে দেখে শরীফা এবার নিজের জীবনের কথা বলতে শুরু করলেন।

    শরীফার গল্প

    ছোটবেলায় সবাই আমাকে ছেলে বলত। কিন্তু আমি নিজে একসময়ে বুঝলাম, আমার শরীরটা ছেলেদের
    মতো হলেও আমি মনে মনে একজন মেয়ে। আমি মেয়েদের মতো পোশাক পরতে ভালোোবাসতাম। কিন্তু
    বাড়ির কেউ আমাকে পছন্দের পোশাক কিনে দিতে রাজি হতো না। বোনদের সাজবার জিনিস দিয়ে লুকিয়ে
    লুকিয়ে সাজতাম। ধরা পড়লে বকাঝকা, এমনকি মারও জুটত কপালে। মেয়েদের সঙ্গে খেলতেই আমার
    বেশি ইচ্ছে করত। কিন্তু মেয়েরা আমাকে খেলায় নিতে চাইত না। ছেলেদের সঙ্গে খেলতে গেলেও তারা
    আমার কথাবার্তা , চালচলন নিয়ে হাসাহাসি করত। স্কুলের সবাই, পাড়া-পড়শি এমনকি বাড়ির লোকজনও
    আমাকে ভীষণ অবহেলা করত। আমি কেন এ রকম একথা ভেবে আমার নিজেরও খুব কষ্ট হতো, নিজেকে
    ভীষণ একা লাগত।
    একদিন এমন একজনের সঙ্গে পরিচয় হলো যাকে সমাজের সবাই মেয়ে বলে কিন্তু সে নিজেকে ছেলে বলেই
    মনে করে। আমার মনে হলো, এই মানুষটাও আমার মতন। সে আমাকে বলল, আমরা নারী বা পুরুষ নই,
    আমরা হলাম তৃতীয় লিঙ্গ (থার্ড জেন্ডার)। সেই মানুষটা আমাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেল, যেখানে
    নারী-পুরুষের বাইরে আরও নানা রকমের মানুষ আছেন। তাদের বলা হয় ‘হিজড়া’ জনগোষ্ঠী। তাদের
    সবাইকে দেখেশুনে রাখেন তাদের ‘গুরু মা’। আমার সেখানে গিয়ে নিজেকে আর একলা লাগল না, মনে হলো
    না যে আমি সবার চেয়ে আলাদা। সেই মানুষগুলোর কাছেই থেকে গেলাম। এখানকার নিয়ম-কানুন, ভাষা,
    রীতিনীতি আমাদের বাড়ির চেয়ে অনেক আলাদা। আমরা সবার সুখ-দুুঃখ ভাগ করে নিয়ে একটা পরিবারের
    মতনই থাকি। বাড়ির লোকজনের জন্যও খুব মন খারাপ হয়। তাই মাঝে মাঝে বাড়িতেও যাই।

    আজ থেকে বিশ বছর আগে বাড়ি ছেড়েছি। সেই থেকে আমি আমার নতুন বাড়ির লোকদের সঙ্গে শহরের
    বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে, নতুন শিশু আর নতুন বর-বউকে দোয়া-আশীর্বাদ করে পয়সা রোজগার করি। কখনো
    কখনো লোকের কাছে চেয়ে টাকা সংগ্রহ করি। আমাদেরও ইচ্ছে করে সমাজের আর দশটা স্বাভাবিক
    মানুষের মতো জীবন কাটাতে, পড়াশোনা, চাকরি-ব্যবসা করতে। এখনও বেশির ভাগ মানুষ আমাদের সঙ্গে
    মিশতে চায় না, যোগ্যতা থাকলেও কাজ দিতে চায় না। তবে আজকাল অনেক মানুষ আমাদের প্রতি যথেষ্ট
    সহানুভুতিশীল। ইদানীং আমাদের মতো অনেক মানুষ নিজ বাড়িতে থেকে লেখা পড়া করছে।
    আমাদের মতো মানুষ পৃথিবীর সব দেশেই আছে। অনেক দেশেই তারা সমাজের বাকি মানুষের মতনই
    জীবন কাটায়। তবে আমাদের দেশের অবস্থারও বদল হচ্ছে। ২০১৩ সালে সরকার আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে।
    বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমাদের জন্য কাজ করছে। শিক্ষার ব্যবস্থা করছে, কর্মসংস্থানের
    ব্যবস্থা করছে। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর প্রচেষ্টা নিচ্ছে। নজরুল ইসলাম ঋতু, শাম্মী রানী চৌধুরী,
    বিপুল বর্মনের মতো বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীর অনেক মানুষ সমাজজীবনে এবং পেশাগত জীবনে
    সাফল্য পেয়েছেন।

    শরীফ থেকে শরিফা গল্প shorif theke sharifa golpo

    নতুন প্রশ্ন
    ওরা এতদিন জানত, মানুষ ছেলে হয় অথবা মেয়ে হয়। এখানেও যে বৈচিত্রর্য থাকতে পারে, সে কথা ওরা
    কখনো শোনেনি, ভাবেওনি। কিন্তু শরীফা আলাদা রকম বলে সবাই তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, এমনকি তার
    পরিবারের লোকেরাও! শরীফার জীবন-কাহিনি শুনে সবার মন এমন বিষাদে ডুবে গেল যে তাকে আর বেশি
    প্রশ্ন করতেও ইচ্ছে করল না।
    গণেশ, রনি, আয়েশা, ওমেরা আর নীলা সেদিন বাড়ি ফেরার পথে গল্প করছিল:

    গণেশ: তাহলে ছেলে এবং মেয়ে ছাড়াও ভিন্ন রকমের মানুষ হয়।
    রনি: আমার মা বলেন, ছোটদের কোনো ছেলেমেয়ে হয় না। বড় হতে হতে তারা ছেলে বা মেয়ে হয়ে ওঠে।
    আয়েশা: আমার জানতে ইচ্ছে করছে, আমাদের সময় ছেলে বা মেয়েদের পোশাক, আচরণ, কাজকর্্ম যেমন
    দেখি, প্রাচীন মানুষেরও কি তেমন ছিল? সামনের সময়েও কি এমনটা থাকবে?
    রফিক: পৃথিবীর সব দেশে, সকল সম্প্রদায়ে কি ছেলেমেয়ের ধারণা, তাদের চেহারা, আচরণ, সাজপোোশাক
    একই রকম?
    নীলা: আমার মা আমাকে বেগম রোকেয়ার লেখা একটা গল্প পড়ে শুনিয়েছিলেন। গল্পটার নাম ‘সুলতানার
    স্বপ্ন’। সেখানে এমন একটা জায়গা কল্পনা করা হয়েছে যেখানে ছেলে আর মেয়েদের প্রচলিত ভূমিকা
    উল্টে গিয়েছে।
    চলোো, আমরাও নারী-পুরুষের ধারণা, সমাজে তাদের ভূমিকা আর নিজেদের ভাবনা সম্পর্্ককে বন্ধুদের সঙ্গে
    গল্প করি।
    ছেলেদের জিনিস-মেয়েদের জিনিস
    খুশি আপা এবার বললেন, আজকে আমরা আমাদের ১০টি পছন্দের খেলনার তালিকা করব। সেটি হতে পারে
    আমাদের ছোটবেলা এবং এখনকার সময়ের পছন্দের খেলনা।
    খুশি আপা আরো বললেন, সেই সাথে ছেলে শিক্ষার্থীরা নিজ বোন/আত্মীয় সর্ম্পকের বোন/ মেয়ে সহপাঠীর ১০টি
    পছন্দের খেলনার তালিকা করবে। ঠিক একইভাবে মেয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ ভাই/আত্মীয় সর্ম্পকের ভাই/ ম্পর্্ককে
    ছেলে সহপাঠীর ১০টি পছন্দের খেলনার তালিকা করবে।
    সবাই মিলে ভীষণ আগ্রহ নিয়ে তালিকা করল। তালিকা করা শেষ হলে খুশি আপা জিজ্ঞেস করলেন,
    খেলনাগুলোোতে কোোনোো মিল বা অমিল খুজেুঁ পাচ্ছ?
    রাজু বলল, জ্বী আপা আমি আর আমার বোন দুজনই লুডু খেলতে পছন্দ করি।
    সানজিদা বলল, আপা আমার ভাইয়ের খেলনার সাথে আমার খেলনার বেশ কিছু অমিল আছে। আমার ভাইয়ের
    বয়স চার বছর। সে গাড়ি দিয়ে খেলে। মা বলেছেন আমি ওর মতোো বয়সে পুতুল খেলতাম।
    খুশি আপা বললেন, আচ্ছা কখনোো কি ভেবে দেখেছ তোোমরা যখন ছোোট ছিলে তখনতোো তোোমাদের একই
    ধরণের খেলনা দিয়ে খেলার কথা ছিল। তোোমাদের খেলনা পছন্দের পার্্থক্্য হলোো কি করে?
    রাতুল বললোো, ঠিক আপা ঐ সময়েতোো আমি বুঝতামই না কোোন খেলনা দিয়ে খেলব। আমি দেখেছি আমার
    পরিবার ছোোট ভাইকে বল কিনে দিয়েছে আর আমার ছোট বোনকে হাাঁড়ি পাতিল কিনে দিয়েছে। তাইতোো তারা
    সেটিকে নিজেদের খেলনা ভেবে খেলেছে।
    খুশি আপা বললেন, ছেলে ও মেয়ের শারীরিক বৈশিষ্টট্য ভিন্ন। এই ভিন্নতা হচ্ছে তার লিঙ্গ পরিচয়। আর
    চারপাশের মানুষ যখন লিঙ্গ পরিচয়ের জন্য ছেলে ও মেয়ের কাজ, দায়িত্ব ও ভূমিকার মধ্যে পার্্থক্্য করে দেয়
    তখন সেটি হচ্ছে তার জেন্ডার বৈশিষ্টট্য।

    shorif theke sharifa golpo

  • আমাদের ছোট নদী -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
    বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
    পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি,
    দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।
    চিক্ চিক্ করে বালি, কোথা নাই কাদা,
    একধারে কাশবন ফুলে ফুলে সাদা।
    কিচিমিচি করে সেথা শালিকের ঝাঁক,
    রাতে ওঠে থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।
    আর-পারে আমবন তালবন চলে,
    গাঁয়ের বামুন পাড়া তারি ছায়াতলে।
    তীরে তীরে ছেলে মেয়ে নাইবার কালে
    গামছায় জল ভরি গায়ে তারা ঢালে।
    সকালে বিকালে কভু নাওয়া হলে পরে
    আঁচল ছাঁকিয়া তারা ছোটো মাছ ধরে।
    বালি দিয়ে মাজে থালা, ঘটিগুলি মাজে,
    বধূরা কাপড় কেচে যায় গৃহকাজে।
    আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর ভর
    মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর।
    মহাবেগে কলকল কোলাহল ওঠে,
    ঘোলা জলে পাকগুলি ঘুরে ঘুরে ছোটে।
    দুই কূলে বনে বনে পড়ে যায় সাড়া,
    বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।

    amader choto nodi kobita

  • হাসি -রোকনুজ্জামান খান

    হাসতে নাকি জানেনা কেউ
    কে বলেছে ভাই?
    এই শোন না কত হাসির
    খবর বলে যাই।
    খোকন হাসে ফোঁকলা দাঁতে
    চাঁদ হাসে তার সাথে সাথে
    কাজল বিলে শাপলা হাসে
    হাসে সবুজ ঘাস।
    খলসে মাছের হাসি দেখে
    হাসে পাতিহাঁস।
    টিয়ে হাসে, রাঙ্গা ঠোঁটে,
    ফিঙ্গের মুখেও হাসি ফোটে
    দোয়েল কোয়েল ময়না শ্যামা
    হাসতে সবাই চায়
    বোয়াল মাছের দেখলে হাসি
    পিলে চমকে যায়।
    এত হাসি দেখেও যারা
    গোমড়া মুখে চায়,
    তাদের দেখে পেঁচার মুখেও
    কেবল হাসি পায়।

    haste naki jane na keu

  • পণ্ডশ্রম – শামসুর রাহমান

    এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে,

    চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে।

    কানের খোঁজে ছুটছি মাঠে, কাটছি সাঁতার বিলে,

    আকাশ থেকে চিলটাকে আজ ফেলব পেড়ে ঢিলে।

    দিন-দুপুরে জ্যান্ত আহা, কানটা গেল উড়ে,

    কান না পেলে চার দেয়ালে মরব মাথা খুঁড়ে।

    কান গেলে আর মুখের পাড়ায় থাকল কি-হে বল?

    কানের শোকে আজকে সবাই মিটিং করি চল।

    যাচ্ছে, গেল সবই গেল, জাত মেরেছে চিলে,

    পাঁজি চিলের ভূত ছাড়াব লাথি-জুতো কিলে।

    সুধী সমাজ! শুনুন বলি, এই রেখেছি বাজি,

    যে-জন সাধের কান নিয়েছে জান নেব তার আজই।

    মিটিং হল ফিটিং হল, কান মেলে না তবু,

    ডানে-বাঁয়ে ছুটে বেড়াই মেলান যদি প্রভু!

    ছুটতে দেখে ছোট ছেলে বলল, কেন মিছে

    কানের খোঁজে মরছ ঘুরে সোনার চিলের পিছে?

    নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে;

    কান যেখানে ছিল আগে সেখানটাতেই আছে।

    ঠিক বলেছে, চিল তবে কি নয়কো কানের যম?

    বৃথাই মাথার ঘাম ফেলেছি, পণ্ড হল শ্রম।

    kan niyeche chile kobita

  • হারাধনের দশটি ছেলে -যোগীন্দ্রনাথ সরকার

    হারাধনের দশটি ছেলে
    ঘোরে পাড়াময়,
    একটি কোথা হারিয়ে গেল
    রইল বাকি নয়।
    হারাধনের নয়টি ছেলে
    কাটতে গেল কাঠ,
    একটি কেটে দু’খান হল
    রইল বাকি আট।
    হারাধনের আটটি ছেলে
    বসলো খেতে ভাত,
    একটির পেট ফেটে গেল
    রইল বাকি সাত।
    হারাধনের সাতটি ছেলে
    গেল জলাশয়,
    একটি সেথা ডুবে ম’ল
    রইল বাকি ছয়।
    হারাধনের ছয়টি ছেলে
    চ’ড়তে গেল গাছ,
    একটি ম’ল পিছলে পড়ে
    রইল বাকি পাঁচ।
    হারাধনের পাঁচটি ছেলে
    গেল বনের ধার,
    একটি গেল বাঘের পেটে
    রইল বাকি চার।
    হারাধনের চারটি ছেলে
    নাচে ধিন ধিন,
    একটি ম’ল আছাড় খেয়ে
    রইল বাকি তিন।
    হারাধনের তিনটি ছেলে
    ধরতে গেল রুই,
    একটি খেলো বোয়াল মাছে
    রইল বাকি দুই।
    হারাধনের দুইটি ছেলে
    মারতে গেল ভেক,
    একটি ম’ল সাপের বিষে
    রইল বাকি এক।
    হারাধনের একটি ছেলে
    কাঁদে ভেউ ভেউ,
    মনের দুঃখে বনে গেল
    রইল না আর কেউ।

    haradhoner dosti chele

  • বলাই – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    মানুষের জীবনটা পৃথিবীর নানা জীবের ইতিহাসের নানা পরিচ্ছেদের উপসংহারে, এমন একটা কথা আছে। লোকালয়ে মানুষের মধ্যে আমরা নানা জীবজন্তুর প্রচ্ছন্ন পরিচয় পেয়ে থাকি, সে কথা জানা। বস্তুত আমরা মানুষ বলি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক করে নিয়েছে– আমাদের বাঘ-গোরুকে এক খোঁয়াড়ে দিয়েছে পুরে, অহি-নকুলকে এক খাঁচায় ধরে রেখেছে। যেমন রাগিনী বলি তাকেই যা আপনার ভিতরকার সমুদয় সা-রে-গা-মা-গুলোকে সংগীত করে তোলে, তার পর থেকে তাদের আর গোলমাল করবার সাধ্য থাকে না। কিন্তু, সংগীতের ভিতরে এক-একটি সুর অন্য সকল সুরকে ছাড়িয়ে বিশেষ হয়ে ওঠে– কোনোটাতে মধ্যম, কোনোটাতে কোমলগান্ধার, কোনোটাতে পঞ্চম।
    আমার ভাইপো বলাই– তার প্রকৃতিতে কেমন করে গাছপালার মূল সুরগুলোই হয়েছে প্রবল। ছেলেবেলা থেকেই চুপচাপ চেয়ে চেয়ে দেখাই তার অভ্যাস, নড়ে-চড়ে বেড়ানো নয়। পুবদিকের আকাশে কালো মেঘ স্তরে স্তরে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়ায়, ওর সমস্ত মনটাতে ভিজে হাওয়া যেন শ্রাবণ-অরণ্যের গন্ধ নিয়ে ঘনিয়ে ওঠে; ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ে, ওর সমস্ত গা যেন শুনতে পায় সেই বৃষ্টির শব্দ। ছাদের উপর বিকেল-বেলাকার রোদ্‌দুর পড়ে আসে, গা খুলে বেড়ায়; সমস্ত আকাশ থেকে যেন কী একটা সংগ্রহ করে নেয়। মাঘের শেষে আমের বোল ধরে, তার একটা নিবিড় আনন্দ জেগে ওঠে ওর রক্তের মধ্যে, একটা কিসের অব্যক্ত স্মৃতিতে; ফাল্গুনে পুষ্পিত শালবনের মতোই ওর অন্তর-প্রকৃতিটা চার দিকে বিস্তৃত হয়ে ওঠে, ভরে ওঠে, তাতে একটা ঘন রঙ লাগে। তখন ওর একলা বসে বসে আপন মনে কথা কইতে ইচ্ছে করে, যা-কিছু গল্প শুনেছে সব নিয়ে জোড়াতাড়া দিয়ে; অতি পুরানো বটের কোটরে বাসা বেঁধে আছে যে একজোড়া অতি পুরানো পাখি, বেঙ্গমা বেঙ্গমী, তাদের গল্প। ওই ড্যাবা-ড্যাবা-চোখ-মেলে-সর্বদা-তাকিয়ে-থাকা ছেলেটা বেশি কথা কইতে পারে না। তাই ওকে মনে মনে অনেক বেশি ভাবতে হয়। ওকে একবার পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছিলুম। আমাদের বাড়ির সামনে ঘন সবুজ ঘাস পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে পর্যন্ত নেবে গিয়েছে, সেইটে দেখে আর ওর মন ভারি খুশি হয়ে ওঠে। ঘাসের আস্তরণটা একটা স্থির পদার্থ তা ওর মনে হয় না; ওর বোধ হয়, যেন ওই ঘাসের পুঞ্জ একটা গড়িয়ে-চলা খেলা, কেবলই গড়াচ্ছে; প্রায়ই তারই সেই ঢালু বেয়ে ও নিজেও গড়াত– সমস্ত দেহ দিয়ে ঘাস হয়ে উঠত– গড়াতে গড়াতে ঘাসের আগায় ওর ঘাড়ের কাছে সুড়সুড়ি লাগত আর ও খিলখিল করে হেসে উঠত।
    রাত্রে বৃষ্টির পরে প্রথম সকালে সামনের পাহাড়ের শিখর দিয়ে কাঁচা সোনারঙের রোদ্‌দুর দেবদারুবনের উপরে এসে পড়ে– ও কাউকে না বলে আস্তে আস্তে গিয়ে সেই দেবদারুবনের নিস্তব্ধ ছায়াতলে একলা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, গা ছমছম করে– এই সব প্রকাণ্ড গাছের ভিতরকার মানুষকে ও যেন দেখতে পায়। তারা কথা কয় না, কিন্তু সমস্তই যেন জানে। তারা-সব যেন অনেক কালের দাদামশায়, ‘এক যে ছিল রাজা’দের আমলের।
    ওর ভাবে-ভোলা চোখটা কেবল যে উপরের দিকেই তা নয়, অনেক সময় দেখেছি, ও আমার বাগানে বেড়াচ্ছে মাটির দিকে কী খুঁজে খুঁজে। নতুন অঙ্কুরগুলো তাদের কোঁকড়ানো মাথাটুকু নিয়ে আলোতে ফুটে উঠছে এই দেখতে তার ঔৎসুক্যের সীমা নেই। প্রতিদিন ঝুঁকে পড়ে পড়ে তাদেরকে যেন জিজ্ঞাসা করে, ‘তার পরে? তার পরে? তার পরে?’ তারা ওর চির-অসমাপ্ত গল্প। সদ্য গজিয়ে-ওঠা কচি কচি পাতা, তাদের সঙ্গে ওর কী যে একটা বয়স্যভাব তা ও কেমন করে প্রকাশ করবে? তারাও ওকে কী একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবার জন্য আঁকুপাঁকু করে। হয়তো বলে, ‘তোমার নাম কী।’ হয়তো বলে, ‘তোমার মা কোথায় গেল।’ বলাই মনে মনে উত্তর করে, ‘আমার মা তো নেই।’
    কেউ গাছের ফুল তোলে এইটে ওর বড়ো বাজে। আর-কারও কাছে ওর এই সংকোচের কোনো মানে নেই, এটাও সে বুঝেছে। এইজন্যে ব্যথাটা লুকোতে চেষ্টা করে। ওর বয়সের ছেলেগুলো গাছে ঢিল মেরে মেরে আমলকি পাড়ে, ও কিছু বলতে পারে না, সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। ওর সঙ্গীরা ওকে খ্যাপাবার জন্যে বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে ছড়ি দিয়ে দু পাশের গাছগুলোকে মারতে মারতে চলে, ফস্‌ ক’রে বকুলগাছের একটা ডাল ভেঙে নেয়– ওর কাঁদতে লজ্জা করে পাছে সেটাকে কেউ পাগলামি মনে করে। ওর সব-চেয়ে বিপদের দিন, যেদিন ঘাসিয়াড়া ঘাস কাটতে আসে। কেননা, ঘাসের ভিতরে ভিতরে ও প্রত্যহ দেখে দেখে বেড়িয়েছে– এতটুকু-টুকু লতা, বেগনি হল্‌দে নামহারা ফুল, অতি ছোটো ছোটো; মাঝে মাঝে কন্টিকারি গাছ, তার নীল নীল ফুলের বুকের মাঝখানটিতে ছোট্ট একটুখানি সোনার ফোঁটা; বেড়ার কাছে কাছে কোথাও-বা কালমেঘের লতা, কোথাও-বা অনন্তমূল; পাখিতে-খাওয়া নিমফলের বিচি পড়ে ছোটো ছোটো চারা বেরিয়েছে, কী সুন্দর তার পাতা– সমস্তই নিষ্ঠুর নিড়নি দিয়ে দিয়ে নিড়িয়ে ফেলা হয়। তারা বাগানের শৌখিন গাছ নয়, তাদের নালিশ শোনবার কেউ নেই।
    এক-একদিন ওর কাকির কোলে এসে বসে তার গলা জড়িয়ে বলে, ‘ওই ঘাসিয়ারাকে বলো-না, আমার ওই গাছগুলো যেন না কাটে।’
    কাকি বলে, ‘বলাই, কী যে পাগলের মতো বকিস। ও যে সব জঙ্গল, সাফ না করলে চলবে কেন।’
    বলাই অনেকদিন থেকে বুঝতে পেরেছিল, কতকগুলো ব্যথা আছে যা সম্পূর্ণ ওর একলারই– ওর চার দিকের লোকের মধ্যে তার কোনো সাড়া নেই।
    এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার দিনে, যেদিন সমুদ্রের গর্ভ থেকে নতুন-জাগা পঙ্কস্তরের মধ্যে পৃথিবীর ভাবী অরণ্য আপনার জন্মের প্রথম ক্রন্দন উঠিয়েছে– সেদিন পশু নেই, পাখি নেই, জীবনের কলরব নেই, চার দিকে পাথর আর পাঁক আর জল। কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ, সূর্যের দিকে জোড় হাত তুলে বলেছে, ‘আমি থাকব, আমি বাঁচব, আমি চিরপথিক, মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন প্রাণের বিকাশতীর্থে যাত্রা করব রৌদ্রে-বাদলে, দিনে-রাত্রে।’ গাছের সেই রব আজও উঠছে বনে বনে, পর্বত প্রান্তরে, তাদেরই শাখায় পত্রে ধরণীর প্রাণ বলে বলে উঠছে, ‘আমি থাকব, আমি থাকব।’ বিশ্বপ্রাণের মূক ধাত্রী এই গাছ নিরবচ্ছিন্ন কাল ধরে দ্যুলোককে দোহন করে; পৃথিবীর অমৃতভাণ্ডারের জন্যে প্রাণের তেজ, প্রাণের রস, প্রাণের লাবণ্য সঞ্চয় করে; আর উৎকণ্ঠিত প্রাণের বাণীকে অহর্নিশি আকাশে উচ্ছ্বসিত করে তোলে, ‘আমি থাকব।’ সেই বিশ্বপ্রাণের বাণী কেমন-এক-রকম করে আপনার রক্তের মধ্যে শুনতে পেয়েছিল ওই বলাই। আমরা তাই নিয়ে খুব হেসেছিলুম।
    একদিন সকালে একমনে খবরের কাগজ পড়ছি, বলাই আমাকে ব্যস্ত করে ধরে নিয়ে গেল বাগানে। এক জায়গায় একটা চারা দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে, ‘কাকা, এ গাছটা কী।’
    দেখলুম একটা শিমুলগাছের চারা বাগানের খোওয়া-দেওয়া রাস্তার মাঝখানেই উঠেছে।
    হায় রে, বলাই ভুল করেছিল আমাকে ডেকে নিয়ে এসে। এতটুকু যখন এর অঙ্কুর বেরিয়েছিল, শিশুর প্রথম প্রলাপটুকুর মতো, তখনই এটা বলাইয়ের চোখে পড়েছে। তার পর থেকে বলাই প্রতিদিন নিজের হাতে একটু একটু জল দিয়েছে, সকালে বিকেলে ক্রমাগতই ব্যগ্র হয়ে দেখেছে কতটুকু বাড়ল। শিমুলগাছ বাড়েও দ্রুত, কিন্তু বলাইয়ের আগ্রহের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না। যখন হাত দুয়েক উঁচু হয়েছে তখন ওর পত্রসমৃদ্ধি দেখে ভাবলে এ একটা আশ্চর্য গাছ, শিশুর প্রথম বুদ্ধির আভাস দেখবামাত্র মা যেমন মনে করে আশ্চর্য শিশু। বলাই ভাবলে, আমাকেও চমৎকৃত করে দেবে।
    আমি বললুম, ‘মালীকে বলতে হবে, এটা উপড়ে ফেলে দেবে।’
    বলাই চমকে উঠল। এ কী দারুণ কথা! বললে, ‘না, কাকা, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, উপড়ে ফেলো না।’
    আমি বললুম, ‘কী যে বলিস তার ঠিক নেই। একেবারে রাস্তার মাঝখানে উঠেছে। বড়ো হলে চার দিকে তুলো ছড়িয়ে অস্থির করে দেবে।’
    আমার সঙ্গে যখন পারলে না, এই মাতৃহীন শিশুটি গেল তার কাকির কাছে। কোলে বসে তার গলা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললে, ‘কাকি, তুমি কাকাকে বারণ করে দাও, গাছটা যেন না কাটেন।’
    উপায়টা ঠিক ঠাওরেছিল। ওর কাকি আমাকে ডেকে বললে, ‘ওগো, শুনছ। আহা, ওর গাছটা রেখে দাও।’
    রেখে দিলুম। গোড়ায় বলাই না যদি দেখাত তবে হয়তো ওটা আমার লক্ষ্যই হত না। কিন্তু, এখন রোজই চোখে পড়ে। বছরখানেকের মধ্যে গাছটা নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠল। বলাইয়ের এমন হল, এই গাছটার ‘পরেই তার সব-চেয়ে স্নেহ।
    গাছটাকে প্রতিদিনই দেখাচ্ছে নিতান্ত নির্বোধের মতো। একটা অজায়গায় এসে দাঁড়িয়ে কাউকে খাতির নেই, একেবারে খাড়া লম্বা হয়ে উঠছে। যে দেখে সেই ভাবে, এটা এখানে কী করতে! আরও দু-চারবার এর মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করা গেল। বলাইকে লোভ দেখালুম, এর বদলে খুব ভালো কতকগুলো গোলাপের চারা আনিয়ে দেব।
    বললেম, ‘নিতান্তই শিমুলগাছই যদি তোমার পছন্দ, তবে আর-একটা চারা আনিয়ে বেড়ার ধারে পুঁতে দেব, সুন্দর দেখতে হবে।’
    কিন্তু কাটবার কথা বললেই বলাই আঁতকে ওঠে, আর ওর কাকি বলে, ‘আহা, এমনিই কী খারাপ দেখতে হয়েছে!’
    আমার বউদিদির মৃত্যু হয়েছে যখন এই ছেলেটি তাঁর কোলে। বোধ করি সেই শোকে দাদার খেয়াল গেল, তিনি বিলেতে এঞ্জিনিয়ারিং শিখতে গেলেন। ছেলেটি আমার নিঃসন্তান ঘরে কাকির কোলেই মানুষ। বছর দশেক পরে দাদা ফিরে এসে বলাইকে বিলাতি কায়দায় শিক্ষা দেবেন বলে প্রথমে নিয়ে গেলেন সিমলেয়– তার পরে বিলেত নিয়ে যাবার কথা।
    কাঁদতে কাঁদতে কাকির কোল ছেড়ে বলাই চলে গেল, আমাদের ঘর হল শূন্য।
    তার পরে দু বছর যায়। ইতিমধ্যে বলাইয়ের কাকি গোপনে চোখের জল মোছেন, আর বলাইয়ের শূন্য শোবার ঘরে গিয়ে তার ছেঁড়া একপাটি জুতো, তার রবারের ফাটা গোলা, আর জানোয়ারের গল্পওয়ালা ছবির বই নাড়েন-চাড়েন; এতদিনে এই-সব চিহ্নকে ছাড়িয়ে গিয়ে বলাই অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে, এই কথা বসে বসে চিন্তা করেন।
    কোনো এক সময়ে দেখলুম, লক্ষ্মীছাড়া শিমুলগাছটার বড়ো বাড় বেড়েছে– এতদূর অসংগত হয়ে উঠেছে যে, আর প্রশ্রয় দেওয়া চলে না। এক সময়ে দিলুম তাকে কেটে।
    এমন সময়ে সিমলে থেকে বলাই তার কাকিকে এক চিঠি পাঠালে, ‘কাকি, আমার সেই শিমুলগাছের একটা ফোটোগ্রাফ পাঠিয়ে দাও।’
    বিলেত যাবার পূর্বে একবার আমাদের কাছে আসবার কথা ছিল, সে আর হল না। তাই বলাই তার বন্ধুর ছবি নিয়ে যেতে চাইলে।
    তার কাকি আমাকে ডেকে বললেন, ‘ওগো শুনছ, একজন ফোটোগ্রাফওয়ালা ডেকে আনো।’
    জিজ্ঞাসা করলুম, ‘কেন।’
    বলাইয়ের কাঁচা হাতের লেখা চিঠি আমাকে দেখতে দিলেন।
    আমি বললেম, ‘সে গাছ তো কাটা হয়ে গেছে।’
    বলাইয়ের কাকি দুদিন অন্ন গ্রহণ করলেন না, আর অনেকদিন পর্যন্ত আমার সঙ্গে একটি কথাও কন নি। বলাইয়ের বাবা ওকে তাঁর কোল থেকে নিয়ে গেল, সে যেন ওঁর নাড়ী ছিঁড়ে; আর ওর কাকা তাঁর বলাইয়ের ভালোবাসার গাছটিকে চিরকালের মতো সরিয়ে দিলে, তাতেও ওঁর যেন সমস্ত সংসারকে বাজল, তাঁর বুকের মধ্যে ক্ষত করে দিলে।
    ঐ গাছ যে ছিল তাঁর বলাইয়ের প্রতিরূপ, তারই প্রাণের দোসর।

    bolai by rabindranath tagore

  • আদর্শ ছেলে – কুসুম কুমারী দাশ

    আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
    কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?
    মুখে হাসি বুকে বল, তেজে ভরা মন
    ‘মানুষ হইতে হবে’ – এই যার পণ৷
    বিপদ আসিলে কাছে হও আগুয়ান
    নাই কি শরীরে তব রক্ত, মাংস, প্রাণ?
    হাত পা সবারই আছে, মিছে কেন ভয়?
    চেতনা রয়েছে যার, সে কি পড়ে রয়?
    সে ছেলে কে চায় বল, কথায় কথায়
    আসে যার চোখেজল, মাথা ঘুরে যায়?
    মনে প্রাণে খাট সবে, শক্তি কর দান,
    তোমরা ‘মানুষ’ হলে দেশের কল্যাণ৷

    adorsho chele poem bangla kobita

  • আজিকার শিশু – বেগম সুফিয়া কামাল

    আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
    তোমরা এ যগে সেই বয়সেই লেখাপড়া কর মেলা।
    আমরা যখন আকাশের তলে ওড়ায়েছি শুধু ঘুড়ি
    তোমরা এখন কলের জাহাজ চালাও গগন জুড়ি।
    উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সব তোমাদের জানা
    আমরা শুনেছি সেখানে রয়েছে জিন ,পরী, দেও, দানা।
    পাতালপুরীর অজানা কাহিনী তোমরা শোনাও সবে
    মেরুতে মেরুতে জানা পরিচয় কেমন করিয়া হবে।
    তোমাদের ঘরে আলোর অভাব কভূ নাহি হবে আর
    আকাশ-আলোক বাঁধি আনি দূর করিবে অন্ধকার।
    শস্য-শ্যামলা এই মাটি মা’র অঙ্গ পুষ্ট করে
    আনিবে অটুট স্বাস্থ্য, সবল দেহ-মন ঘরে ঘরে।
    তোমাদের গানে, কল-কলতানে উছসি উঠিবে নদী-
    সরস করিয়া তৃণ ও তরুরে বহিবে সে নিরবধি
    তোমরা আনিবে ফুল ও ফসল পাখি-ডাকা রাঙা ভোর
    জগৎ করিবে মধুময়, প্রাণে প্রাণে বাঁধি প্রীতিডোর।

  • অধম ও উত্তম – সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

    কুকুর আসিয়া এমন কামড়
    দিল পথিকের পায়
    কামড়ের চোটে বিষদাঁত ফুটে
    বিষ লেগে গেল তায়।
    ঘরে ফিরে এসে রাত্রে বেচারা
    বিষম ব্যথায় জাগে,
    মেয়েটি তাহার তারি সাথে হায়
    জাগে শিয়রের আগে।
    বাপেরে সে বলে ভর্ৎসনা-ছলে
    কপালে রাখিয়া হাত,
    “তুমি কেন বাবা, ছেড়ে দিলে তারে
    তোমার কি নেই দাঁত !”
    কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল
    “তুই রে হাসালি মোরে,
    দাঁত আছে বলে কুকুরের পায়
    দংশি কেমন করে !
    কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
    কামড় দিয়েছে পায়,
    তা ব’লে কুকুরে কামড়ানো কি রে
    মানুষের শোভা পায় ?”

  • কাজের লোক -নবকৃষ্ণ ভট্টাচার্য

    “মৌমাছি, মৌমাছি,
    কোথা যাও নাচি’ নাচি’
    দাঁড়াও না একবার ভাই।”
    “ওই ফুল ফোটে বনে,
    যাই মধু আহরণে
    দাঁড়াবার সময় তো নাই।”
    “ছোট পাখি, ছোট পাখি,
    কিচি-মিচি ডাকি ডাকি’
    কোথা যাও বলে যাও শুনি?”
    “এখন না ক’ব কথা,
    আনিয়াছি তৃণলতা,
    আপনার বাসা আগে বুনি।”
    “পিপীলিকা, পিপীলিকা,
    দল-বল ছাড়ি একা
    কোথা যাও, যাও ভাই বলি।”
    “শীতের সঞ্চয় চাই,
    খাদ্য খুঁজিতেছি তাই
    ছয় পায়ে পিল পিল চলি।”

  • উপদেশ -স্বর্ণকুমারী দেবী

    বড়লোক যদি তুমি হতে চাও ভাই,
    ভালো ছেলে তাহা হ’লে আগে হওয়া চাই।
    মন দিয়ে, পড় লেখো
    সুজন হইতে শেখ,
    খেলার সময় রেখ, তাতে ক্ষতি নাই।
    পিতামাতা গুরুজনে দেবতুল্য জানি,
    যতনে মানিয়া চল তাঁহাদের বাণী।
    ভাইটি করেছে দ্বন্দ্ব,
    বোনটি বলেছে মন্দ,
    ক্রোধে হয়ো না কো অন্ধ, স্নেহে ধর পাণি।
    প্রতিবাদী দাসদাসী আত্মীয় স্বজন,
    ভালোবাসি সবে কহ সুমিষ্ট বচন।
    দিও না কাহারে দুখ,
    অন্যে দান করি সুখ,
    নিজেরে মানোগো সুখী, বালক সুজন।
    জগতের সৃষ্টিকর্তা যিনি ভগবান,
    যাঁহা হতে হইতে পাইয়াছ সুখ-শান্তি প্রাণ;
    তাঁর কাজে সঁপি মন,
    তাঁরে স্মরি অনুক্ষণ,
    মাগিয়া মঙ্গল, তাঁর কর নাম-গান।