কতদিনে হবে সে প্রেম সঞ্চার।
কবে বলতে হরিনাম, শুনতে গুণগ্রাম
অবিরাম নেত্রে রবে অশ্রুধার।
কবে সুরসে রসিক হইবে রসনা
জাগিতে ঘুমাতে ঘোষিবে ঘোষণা
কবে হবে যুগল মন্ত্রে উপাসনা
(এই) বিষয় বাসনা ঘুচিবে আমার।।
কতদিনে হবে সর্বজীবে দয়া
কতদিনে যাবে গর্ব-মোহ-মায়া
কতদিনে হবে খর্ব মম কায়া
নত হবে লতা যে প্রকার।।
কতদিনে হবে জ্ঞানোদয় মম
কতদিনে যাবে ক্রোধ, কাম, তমঃ
কতদিনে হব তৃণাদির সম
(ব্রজের) রজেতে লুণ্ঠিত হবে অনিবার।।
আমার কবে যাবে জাতি কুলের ভরম
কবে যাবে আমার ভরম সরম
কতদিনে যাবে ধরম করম
কতদিনে যাবে লোকাচার।।
কবে পরশমণি করব পরশন
লৌহ দেহ মম হইবে কাঞ্চন
কতদিনে হবে কষ্ট বিমোচন
জ্ঞানাঞ্জনে যাবে লোচন আঁধার।।
কতদিনে শুদ্ধ হবে মম মন
কতদিনে যাবে এ ভব ভ্রমণ
কতদিনে যাব মধুর বৃন্দাবন
যথা ইষ্টনিষ্ট পরিবার।।
কতদিনে ব্রজের প্রতি কুলি কুলি
কাঁদিয়ে বেড়াব কাঁধে লয়ে ঝুলি
নীলকণ্ঠ কহে পিব কর তুলি
অঞ্জলি অঞ্জলি জল যমুনার।।
এই গানে পদকর্তার ভণিতা আছে যা কথামৃতের গানটিতে নেই।
অত্যন্ত সুপ্রসিদ্ধ এই গানটি শ্রীরামকৃষ্ণের খুব প্রিয়। নরেনের (স্বামী বিবেকানন্দ) কণ্ঠেও এই গান গীত হচ্ছে তা কথামৃতে দেখতে পাই। গানের গীতিকার নীলকণ্ঠ মুখোপাধ্যায় তদানীন্তন কালের খ্যাতানাম যাত্রার অধিকারী। তিনি যাত্রা লিখতেন, যাত্রার গান লিখতেন। দলবলে শ্রীরামকৃষ্ণের দর্শনাভিলাষী হয়ে দক্ষিণেশ্বরও গেছেন। বর্ধমান নিবাসী এই কবির রচনায় পাঁচালীকার দাশরথি রায়ের সুস্পষ্ঠ ছাপ রয়েছে। নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায়ের গান ‘কণ্ঠের পদ’ নামে সুখ্যাত ছিল।
দুর্গাদাস লাহিড়ী সম্পাদিত ‘বাঙ্গালার গান’ এবং ‘কৃষ্ণযাত্রা নীলকণ্ঠ মুখোপাধ্যায়’ নামক গ্রন্থে এই গানের প্রায় একই বাণী। পার্থক্য কেবল একটি শব্দে এবং তিনটি আখড়ে। গানটি কীর্তনাঙ্গের।
কথামৃতে যে গানটি আছে তা এই গানেরই অপভ্রংশ। সেই অপভ্রংশটি কবিত্বে আদি গানটির চাইতেও নান্দনিক বটে। তবে কিভাবে মূল গানটি বিবর্তিত হয়েছে সে ইতিহাস আমার জানা নেই। পদকর্তাও নিজে করে থাকবেন হয়ত।
কথামৃতের সেই গানটি অনেকেই শুনেছেন। আমি আদি গানটি গাইলাম। শ্রীখোলের অভাবে যদিও একদমই মাধুর্য্যরহিত শোনাবে। তার জন্য দুঃখিত। আকারে বড় হচ্ছে দেখে লয়ও একটু বাড়িয়ে গাইলাম ফলে গানটি মিষ্টত্বও হারিয়েছে। লয় কমিয়ে, আখড় দিয়ে, আরকেটু ভাবালুতা এনে গাওয়া বাঞ্ছনীয়।