অতীতকে প্রাধান্য দিও না, ভবিষ্যত নিয়ে দিবাস্বপ্নও দেখবে না। তার চেয়ে বরং বর্তমান মুহূর্ত নিয়ে ভাবো।

— গৌতম বুদ্ধ

আনন্দের খোঁজে

আনন্দরা কোথায় গেল?
ঘরদোর ফাঁকা পড়ে আছে
শোকেসে সাজানো আছে পুতুল
রঙিন বেলুন আর খেলনাপাতি
সেল্ফে সব বইগুলি গোছানো আছে
ওয়াল হুকে ঝুলছে পুরনো শার্ট
জানালার কাচে জমে আছে ধুলো
ধুলোয় আঙুলের অজস্র দাগ…

সূর্য রোদ গুটিয়ে নিচ্ছে এখন
গোধূলির আবিররাঙা মেঘে
নীরবে ঝরে পড়ছে দিন বিদায়ের সুর

কাঠের চাকা লাগানো গরুর গাড়িটি
এখন এখানে আর নেই
ধানমাড়া খড়গুলিও এখানে রাখে না কেউ
বিকেলের শীতে রোদপোহানো মানুষ বসে না এসে
গল্পগুলি সব হারিয়ে গেছে
দুটান বিড়ি খেয়ে যেত তারা আগে…

আনন্দরা তখন ফিরে আসত রোজ
ধান সর্ষে গম অথবা ইক্ষুক্ষেত থেকে
আনন্দদের ছেলেমেয়েরা শিস্ দিত
পায়রা নামত হাঁস-মুরগির ভিড়ে

অবেলায় কালিমাখা ধানসেদ্ধ হাতে
আনন্দরা ভাত খেত একসাথে বসে
কুটুমেরা আসত দূর দূর থেকে
ধুলোমাখা পা ধুয়ে উঠে বসত খাটে

কখনো ভোর হত মুড়ি ভাজা ঘ্রাণে
কখনো খেজুর রসে জমত পাটালি
কখনো শুকনো মাছ আর পুঁইশাকে
রান্না হলে চেয়ে নিয়ে যেত প্রতিবেশী

আনন্দরা খড় বিছিয়ে তালাই পেতে
দিব্যি ঘুমাতো শীতের রাতে
শিয়ালের ডাকে পার হত রাত
আনন্দরা স্বপ্ন পুষে ঘুমে কুপোকাত

আজ একা ফিরছি শুধু ওদের ডেকে ডেকে
কেউ আর জল তোলে না শান্ত দিঘির ঘাটে
কেউ আর সাঁতার কাটে না স্নানে এসে
শালুক ফুল তোলে নাকো প্রথম ভালোবেসে

আনন্দরা কোথায় গেল?
এক খাবলা মাটি তুলে শুঁকে শুঁকে দেখি
স্নেহের পরশ লেগে আছে
ঝরে পড়া শুকনো ঘাম আর ধুলো
হেঁটে যাওয়া খালি পায়ে…
হয়তো আর বাজে না বেল্ পুরনো সাইকেলে!

                🚵

তৈমুর খান

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply