Life is what happens when you’re busy making other plans.

— John Lennon

বৃষ্টি

আজকের মতো সেদিনও মৃদু বৃষ্টি পড়ছিল। অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম। হাতে ছিল একটা গাঢ় সবুজ রঙের ছাতা। রাস্তায় তেমন গাড়ি ছিল না। তাই হাইওয়ে পথ দিয়ে হেঁটে চলছি। ভালোই লাগছিল ভেজা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে। মনে মনে গান গাইতে শুরু করি।
সময় কত হবে । এই পাঁচটা। রাস্তা পুরো ফাঁকা। মাঝে মাঝে দু একটা গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। একবার ভাবলাম, ফোন করে একটা বাইকের ব্যবস্থা করি। কিন্তু পরক্ষণে এই ভাবনা বাদ দেই। মনে এক ভালোলাগা কাজ করছিল। কখনো এর আগে এইভাবে প্রকৃতিকে উপভোগ করিনি। একটা কবিতা মনে পড়ে যায়।
আকাশে মেঘ উড়ে
কখনো সাদা, কখনো কালো।
কখনো বা ঝনঝনিয়ে বৃষ্টি।
ধুয়ে দেয় পৃথিবীর শরীর।
মুছে দেয় সকল ক্লান্তি- ক্লেশের অবসান
নিয়ে আসে দিগন্তরে এক নতুন জীবনের সন্ধান।
(বৃষ্টির ফোঁটা)
কবিতাটা বিরবির করে বলতে বলতে ভীষণ ইচ্ছে করল একটু বৃষ্টিতে ভিজি। কিন্তু তা করতে পারলাম না। হয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে।
কিছুদূর যেতেই একটা মেয়েকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে নিজেকে শুকনো রাখার চেষ্টা করছে। বৃষ্টিটা তখন একটু বেড়ে গেছে। আমি এগিয়ে যাই তার দিকে। আমাকে দিকে সে বলল, একটু আমাকে সাহায্য করবেন? সামনে একটু এগিয়ে দিবেন? আসলে ছাতা আনিনি তো। আর বৃষ্টিতে ভিজলে আমার ঠান্ডা লেগে যায়। কিছু মনে না করলে আমাকে এগিয়ে দিন। আমি কথাগুলো শুনছিলাম আর তার চোখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। মায়াবী নয়! তবে মনকে শান্ত এবং আর্কষণ করার মতো কিছু ছিল ওই চোখে। লক্ষ্য করলাম নীল বর্ণের একটা গাড়ি পড়েছে । আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম।
দুজন জনহীন ভেজা হাইওয়ে দিয়ে হেঁটে চলছি। জানিনা তার মনে কি ছিল। কিন্তু আমার মন চাইছিল তার সাথে কথা বলতে। তাকে জিজ্ঞাস করি কোথায় যাবেন? হাতের ইশারায় বলল, সামনে। আর কিছু জিজ্ঞাস করলাম না। কিন্তু জিজ্ঞাস করার অনেক কিছুই ছিল।
প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে হাঁটছি। মেয়েটি চুপচাপ। আমিও নিস্তব্ধ। বৃষ্টির আওয়াজ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। ছাতাটা তার দিকে আরেকটু এগিয়ে দিলাম। যাতে সে না ভিজে। পরক্ষণে সে বলল, কি করছেন? আপনি ভিজে যাবেন তো। আরেকটু পাশে আসুন।
তিন রাস্তার মাথায় এসে দুজন দাঁড়িয়ে পড়লাম। বৃষ্টি তখন কমে গিয়েছে। মেয়েটি ধন্যবাদ জানিয়ে বামের রাস্তায় দিকে যেতে লাগল। আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম। পিছন থেকে ডাক দেতে চাইলাম । ডাক দেওয়ার আগেই মেয়েটি ঘুরে তাকালো। একটু হেঁসে বলল,.বৃষ্টি! আমি বৃষ্টি।
পিছন থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ ভেসে এল। বৃষ্টির দিন জানালার দিকে তাকিয়ে এত কি ভাব। কতক্ষণ ধরে ডাকছি। আমি পিছনে তাকালাম। সেই মেয়ে আর এই মেয়ের মাঝে বিন্দুমাত্র তফাৎ নেই। মুচকি হেঁসে বললাম, বৃষ্টি।
এস.এ.ইসলাম

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply