Challenges are what make life interesting, and overcoming them is what makes life meaningful.

— Joshua J. Marine

ছোটগল্প: মধ্যরাতের কলিংবেল

সময়টা তখন মধ্যরাত। ঘড়িতে তিনটা বাজে প্রায়। ফ্যানগুলো বন্ধ কারণ সময়টা শীতকাল। ঘড়ির টিকটিক শব্দ শোনা যাচ্ছে। সময় এগিয়ে চলেছে। এই সময়টা চারপাশ নিরব থাকে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়। আস্তে আস্তে ঠান্ডা পড়তে শুরু করেছে। মাঝরাতে নিরবে কাজ করার একটা আলাদা আনন্দ আছে। অনেকসময় সেটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। আজকাল প্রযুক্তির কারণে রাত জাগার প্রবণতা বেড়ে গেছে। নীলাশা ডায়েরি লিখছিলো। এই যন্ত্রের যুগেও ডায়েরি লেখার অভ্যাসটা তার রয়ে গেছে। অনেক আগে থেকেই তার ডায়েরি লেখার অভ্যাস আছে। তার ধারণা সবাইকে সব কথা বলা যায় না আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব কথা সে লিখে না। তার চেয়ে ডায়েরি লেখা উত্তম। একটা নিজস্ব জায়গা, একটা ব্যক্তিগত স্পেস থাকে সেখানে।
সেদিনও সে ডায়েরি লিখছিলো। হঠাৎ কলিংবেল বাজে। তার প্রথমে মনে হলো হয়তো বাসায় কেউ এসেছে। সে সদর দরজায় গিয়ে দেখে সেখানে কেউ নেই। এলাকায় বাসাগুলো বেশ কাছাকাছি। মাঝের রাস্তাগুলো খুব একটা চওড়া নয়। দালানগুলো সব গায়ে গায়ে লাগানো। পরে তার মনে হলো – হয়তো অন্য কারো বাসায় কলিংবেল বাজছে। কিন্তু কোনো গাড়ি, বাইক, রিক্সার শব্দ সে পায়নি। সাধারণত কোনো যানবাহন এলে না চাইলেও শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। হতে পারে অন্য কোনো রোডের কারো বাসায় কলিংবেল বেজেছে। রাতের বেলা কলিংবেলের শব্দটা বেশ জোরালো আর ভয়ানক শোনায়। নীলাশা কিছুতেই লেখায় মন দিতে পারছে না। একটা কলিংবেলের শব্দ আর তার মনোযোগ চলে গেলো!
কিন্তু এখন তাদের বাসায় কেউ আসার কথা নয়। তাহলে তার কেন মনে হলো যে, কলিংবেল তার বাসায় বাজছে? একটুপর আম্মু উঠে এলো। উনিও কলিংবেলের শব্দ শুনেছেন। তার মানে কাছাকাছি কোথাও কলিংবেল বেজেছে। কিন্তু কোনো যানবাহন আসেনি কেন? তবে কি আগন্তুক পায়ে হেঁটে এসেছে? কে সে? বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে আম্মু বলছে- আশেপাশের ফ্ল্যাটেও মানুষ বারান্দায় দাঁড়িয়েছে। নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। কোনো চোর- ডাকাত আসেনি তো? সবাই কি যেন বলাবলি করছে। গলির মুখে একটা গেট আছে। ওটা সবসময় খোলাই থাকে। ওখানে একজন আনসারকর্মী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেলো- কোনো যানবাহন এ গলিতে আসেনি।
একটুপর কারেন্ট চলে গেলো। দুইবারের চেষ্টায় একটা মোমবাতি জ্বালালো নীলাশা। চার্জারলাইট দুইটার একটাও জ্বলছে না। নীলাশা ধরে নিলো হয়তো চার্জ নেই। কিন্তু মনে মনে তার কেমন খটকা লাগছে। ঐ কলিংবেলের আওয়াজটা শোনার পর থেকে এসব ঘটছে। এখন গ্রামে হলে কত গল্প রটে যেতো! কে ছোটবেলায় কি দেখেছে, অলৌকিক গল্প, কোন ঋতুতে কি হতো আরও কত কি। শহরের বাসিন্দারা এসব উদ্ভট চিন্তা করে না। মোমবাতির শিখাটা দপদপ করছে। কিন্তু ওটা এভাবে কাঁপছে কেন? বাইরে বাতাস নেই। কারেন্ট নেই তাই ফ্যানও চলছে না। মেঝেতে পা দিয়ে সে বুঝতে পারলো ভূমিকম্প হচ্ছে। সে তাড়াতাড়ি আম্মুকে বারান্দা থেকে সরে আসতে বলে। নিচে যেতে হলো না। একটু পরেই ভূমিকম্প থেমে গেলো।
পরদিন সকালে বিল্ডিংয়ের অনেকেই বলছে তারা মাঝরাতে একটা কলিংবেলের আওয়াজ শুনেছে। কিন্ত সময়টা কেউই সঠিক বলতে পারছে না। কারেন্ট ছিলো না টের পায়নি অনেকে। কিন্তু অনেকে আবার ভূমিকম্প টের পেয়েছে। বিল্ডিংয়ের দারোয়ান কিছু দেখেনি। মাঝরাতে এখানে কেউ আসেনি। আশেপাশের বিল্ডিংগুলোতে খোঁজ করা হলো। কেউ আসেনি।
নীলাশা ভাবছে- সবটাই কি মনের ভুল ছিলো? এতগুলো মানুষ ভুল শুনেছে? কিন্তু কেউ তো আসেনি। তাহলে কলিংবেল কে বাজালো? এরপর এতগুলো ঘটনা ঘটে গেলো। তাহলে কি ওটা বিপদ সংকেত ছিলো? পায়ে হেঁটে কেউ কি এসেছিলো? হতে পারে।

Writer: Eshrad Ahmed 

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply