মানব সমাজকে খুব সহজে ভাগ করলে ২ শ্রেণীতে ভাগ করা যাবে,,১) সভ্য শ্রেণী,২)অসভ্য শ্রেণী। এই সভ্য-অসভ্য শ্রেণী নিয়েই গড়ে উঠেছে আমার সমাজ। আবার সভ্য শ্রেণীর ২ টা পর্যায় আছে। যথা ; সাধারণ সভ্য বা সভ্য এবং সুসভ্য। সভ্য শ্রেণীর পরিশুদ্ধ রুপই হলো সুসভ্য শ্রেণী। আর পরিশুদ্ধ অবস্থাতেই কেউ সভ্য হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। অর্থাৎ বলা যায় সভ্য শ্রেণী মাত্রই সুসভ্য শ্রেণী। সুতরাং মানবসমাজ গড়ে উঠে ২ শ্রেণীর লোকদের নিয়ে। যথা ; সুসভ্য ও অসভ্য শ্রেণী।
সমাজে সুসভ্য ও অসভ্য শ্রেণীর সংখ্যা সমহারে বৃদ্ধি পায়। যদিও আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় সমাজে সুসভ্যের চেয়ে অসভ্যের সংখ্যাগত পরিমাণ বেশি। বাহ্যিক পরিসংখ্যান হয়তোবা তাই বলে। এটা পরিসংখ্যানগত ভুল। এই পরিসংখ্যানগত ভুলের কারণটা খুঁজে বের করা যাক।
সমাজে সুসভ্য আর অসভ্যের মাঝামাঝি একশ্রেনী আছে,যাদেরকে কুসভ্য বলা যায়। কুসভ্যের নির্দিষ্ট সজ্ঞা নির্ধারণ করা কঠিন,কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব। এদেরকে সভ্যের শ্রেনীতেও ফেলা যায়না,আবার অসভ্যের শ্রেনীতেও ফেলা যায়না। এরা হলো সুসভ্য আর অসভ্যের মাঝামাঝি শ্রেণী। এদেরেকে আমরা চিনতে ভুল করে বসি। সভ্যদের কাছে এরা অসভ্য। আর অসভ্যদের কাছে এরা সভ্য।সমীকরণটা একটু জটিল। তবে এদের কিছু সহজাত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এরা মাঝামাঝি শ্রেনী। এসমস্ত কুসভ্যরা সমাজে তথাকথিত কিছু শিক্ষিত সম্প্রদায়,প্রকৃত অর্থে যাদের কোনো আদর্শিক শিক্ষা নেই। যা আছে তার সব সার্টিফিকেট নির্ভর। কেউ কেউ আবার এভাবে উচ্চশিক্ষিত শ্রেণীর কাতারেও অনায়াসে নাম লিখায়। এই কুসভ্যরা সমাজে সভ্য সেজে অসভ্যতা করে।
কিন্তু সমাজ তাদের অসভ্যতা আর কুকাজের দুষত্রুটিগুলোকে অসভ্য শ্রেনীর গাড়ে চাপানোকেই নিরাপদ এবং স্বস্তিদায়ক মনে করে। প্রশ্ন আসতে পারে,এদের এসকল বৈশিষ্ট্য থাকার পরেও এদের চিনতে ভুল হয় কেনো? তার উত্তর সহজ। কারণ ;- সমাজে সভ্য অসভ্য শ্রেণীর পরিমাপের মাপকাঠি অস্পষ্ট। যার ফলে এই কুসভ্য শ্রেণী সভ্য অসভ্যের মাঝামাঝি স্থানে অনায়াসে ঠাই পেয়ে যায়।
বর্তমান সমাজব্যবস্থায় অযোগ্যদের যে জয়জয়কার তার পিছনে এই শিক্ষিত কুসভ্য সম্প্রদায় দায়ী। সমাজ তাদের সভ্য ভেবে উচ্চমঞ্চে ঠাই দেয়। আর তারা সভ্যসেজে সহজে অসভ্য অকাজ করতে থাকে। যার ফলে সমাজের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়। যদি প্রশ্ন হয় এই সমাজবিশৃঙ্খলার মূলে কারা? তাহলে উত্তর বোধকরি এইটাই হবে যে,এই সমাজবিশৃঙ্খলার মূলে কুসভ্য শ্রেণীরা। অধিকাংশ সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি কিংবা সামাজিক অশান্তির মূল কারণ এই কুসভ্য শ্রেণী। অর্থাৎ সমাজে চলমান যাকিছু মিথ্যা,যাকিছু সত্যের পথ অবরুদ্ধ করে,যাকিছু অন্যায়,যাকিছু জটিল মনস্তাত্ত্বিকের পরিচায়ক,যাকিছু নিয়মবিরুদ্ধ,পাপ,যাকিছু অহংকারের ভিত্তি,যার কোটরে আসে মিথ্যা দম্ভ,মিথ্যা গর্ব,যাকিছু বাড়ায় মনের ভয়,যাকিছু অনাকাঙ্ক্ষিত,যাকিছু অপচয়,কুসৃষ্টি,কুকাজ,যাকিছু অরাজকতা আর অশৃঙ্খলতার জন্ম দেয়,তার সবকিছুর মূলে আছে সমাজের এই কুসভ্য শ্রেণী।
তাহলে এর সমাধান কি?
এর সহজ সমাধান হলো সভ্য অসভ্য চেনার মাপকাঠিটাকে স্পষ্ট করা। কুসভ্যদের চিহ্নিত করতে হলে সমাজদের সভ্যদের সচেতন থাকতে হবে এবং একাজে অসভ্যদেরও প্রয়োজন আছে। সুন্দর ব্যক্তিজীবন,সমাজজীবন এবং রাষ্ট্রজীবন গড়ে তুলতে হলে কুসভ্যদের চিহ্নিত করে,তাদের চলমান কুসভ্যতাগুলোকে পরিহার করতে হবে। এসকল ব্যক্তি এবং তাদের কুসভ্যতা বা কুকাজ থেকে নিরাপদ ব্যক্তিগত ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। আদর্শ সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে,সামাজিকভাবে এসমস্ত কুসভ্যদের কুসভ্যতাগুলোকে নির্মূল করতে হবে। তাহলেই এমন একটি সমাজ কাঠামো প্রতিষ্ঠা পাবে,যে সমাজ কাঠামোতে যোগ্য আর সভ্যদের ঠাই থাকবে। এভাবেই উন্নত সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলা সম্ভব,আর উন্নত সমাজব্যবস্থাই উন্নত রাষ্ট্র গঠনের মূলভিত্তি।