আজি এ বসন্ত দিনে বাসন্তী রঙ ছুয়েছে মনে; মনে পরে তোমাকে ক্ষণে ক্ষণে চুপি চুপি নিঃশব্দে সঙ্গোপনে

— – সংগৃহীত, – সংগৃহীত

হাদীসের নামে জালিয়াতি প্রচলিত মিথ্যা হাদীস ও ভিত্তিহীন কথা by ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফুরফুরার পীর আমীরুল ইত্তিহাদ মাওলানা আবুল আনসার মুহাম্মাদ আব্দুল কাহহার সিদ্দীকী আল-কুরাইশী সাহেবের
বাণী
নাহ্মাদুহু ওয়া নুসাল্লী আলা রাসূলিহীল কারীম, আম্মাবা’দ কুরআন কারীমের পরে দীন ইসলামের মূলভিত্তি হলো হাদীস। এজন্য হাদীস বিশুদ্ধভাবে শিক্ষা করতে, মুখস্থ রাখতে ও প্রচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ ﷺ। একই সাথে তিনি কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন তাঁর নামে মিথ্যা- বলতে। মিথ্যা হতে পারে এরূপ সন্দেহজনক কোনো কথা তাঁর নামে যে বলবে, সেও মিথ্যাবাদী বলে গণ্য হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

হাদীসের নামে জালিয়াতির প্রচেষ্টা সেই প্রাচীন যুগ থেকেই অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে সাহাবীগণের যুগ থেকেই মুসলিমগণ হাদীসের নামে সকল প্রকার মিথ্যা ও জালিয়াতি প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিয়েছেন। মুসলিম উম্মাহর প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণ সকল জাল হাদীস চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ক সঠিক জ্ঞানের অভাবে অনেক আলিম বা নেককার মানুষও না জেনে অনেক জাল হাদীস রলেন, প্রচার করেন বা লিখেন। এভাবে সমাজে অনেক জাল হাদীস ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা অনেকেই গাফলতির কারণে এ কঠিন পাপের মধ্যে নিপতিত হচ্ছি।
জাল হাদীসের উপর আমল করেও আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল )ﷺ( যা করতে বলেন নি তা করে আমরা পণ্ডশ্রম করছি। উপরন্ত আমরা সহীহ হাদীসের উপর আমল করার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি। এজন্য মুসলিম উম্মাহর আলিমগণের উপর অর্পিত একটি ফরয দায়িত্ব হলো সমাজে প্রচলিত জাল হাদীসগুলো চিহ্নিত করা এবং এগুলোর খপ্পর থেকে সমাজকে রক্ষা করা। রাসূলুল্লাহ )ﷺ(-এর সুন্নাতকে জীবিত করার এ হলো অন্যতম পদক্ষেপ। আমার স্নেহাস্পদ জামাতা খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরকে আমি গত কয়েক বছর যাবৎ এ বিষয়ে গ্রন্থ রচনার জন্য নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদান করছি। আল্লাহ পাকের রহমতে এতদিনে সে এ বিষয়ে একটি বই প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে।

আমি আমার মুহিব্বীন, মুরীদীন ও দলমত নির্বিশেষে সকল মুসলমিকে বইটি পাঠ করতে অনুরোধ করছি। যে সকল কথাকে ‘জাল হাদীস’ বলে জানতে পারবেন সেগুলোকে কোনো অজুহাতেই আর বলবেন না বা পালন করবেন না। তাহকীক করুন। কিন্তু ‘অমুক বলেছেন’, ‘তমুক লিখেছেন’.
‘সহীহ না হলে কি তিনি বলতেন বা লিখতেন’ ইত্যাদি কোনো অজুহাতেই সেগুলো বলবেন না বা পালন করবেন না। আমাদের প্রত্যেককে আল্লাহর দরবারে তার নিজের কর্মের হিসাব দিতে হবে, অন্যের কর্মের নয়।

কেউ হয়ত না জেনে বা ভুলে জাল হাদীস বলেছেন, সে কারণে কি আমি জেনে-শুনে একটি জাল হাদীস বলব? কারো হয়ত অনেক নেক আমল আছে, যেগুলোর কারণে আল্লাহ তার এরূপ দু’-চারটি ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করবেন, কিন্তু আমার এ ইচ্ছাকৃত কঠিন পাপের ক্ষমা মিলবে কিভাবে?
কোনো হাদীস জাল বলে জানার পরে মুমিনের দায়িত্ব হলো তা বলা বা পালন স্থগিত করা। প্রয়োজনে সে বিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা করে নিশ্চিত হতে হবে। কোনো বিষয়ে এ গ্রন্থের লেখকের ভুল হয়েছে বলে মনে হলে আপনারা আরো ‘ইলমী তাহকীক’ বা গবেষণা করবেন এবং মুহাদ্দিসগণের মতামত বিস্ত ারিত জানার চেষ্টা করবেন। ভুল প্রমাণিত হলে তাকে বা আমাকে জানাবেন। তবে গায়ের জোরে বা মুহাদ্দিসগণের সুস্পষ্ট মতামতের বাইরে কিছু বলবেন না। মনে রাখবেন যে, কোনো মুসলিম যদি জীবনে একটিও ‘হাদীস’ না বলেন তবে তার কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু ওয়ায, দাওয়াত, ইবাদত বা অন্য যে কোনো নেক উদ্দেশ্যে যদি তিনি একটিও মিথ্যা বা জাল হাদীস বলেন তবে তা হবে কঠিনতম একটি পাপ।

মুসলিম উম্মাহ একমত যে, জাল হাদীস বলা বা রেওয়ায়াত করাও কঠিনতম হারাম। পোশাক-আশাক, পানাহার ইত্যাদির ক্ষেত্রে হারাম হালাল বিষয়ে যেমন সতর্ক থাকতে হয়, কথাবার্তার ক্ষেত্রেও তেমনি হারাম-হালাল বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ )ﷺ( যা বলেন নি, তা তাঁর নামে বলা হলো সবচেয়ে কঠিন হারাম কথা। এ বিষয়ে সতর্কতা অতীব জরুরী।
মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, তিনি যেন এ গ্রন্থখানা কবুল করেন এবং লেখককে সর্বোত্তম পুরস্কার প্রদান করেন। বইটি প্রকাশে যারা সহায়তা করেছেন এবং যারা গ্রন্থটি পড়বেন বা প্রচার করবেন তাদের সকলকে আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি, বরকত, কল্যাণ ও উন্নতি দান করুন। আমীন!
আত্কারুল ইবাদ,
আবুল আনসার সিদ্দীকী (পীর সাহেব, ফুরফুরা)

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0