Life is never fair, and perhaps it is a good thing for most of us that it is not

— Oscar Wilde

এ্যা বাঞ্চ অফ গাঙ্গুয়া ইন টাঙ্গুয়া

টাংগুয়ায় হাওড় বিলাস করার ইচ্ছাটা ছিল অনেকদিনের। কিন্তু সময় – সুযোগ কিংবা ট্যুরমেটের অভাবে হয়ে উঠেনি। এইবারও যখন প্ল্যান হচ্ছিল হাওড় বিলাস করার, তখন আমরা ছিলাম মাত্র ৬/৭জন। প্রতিটা ট্যুরে দেখা যায়, যত দিন যায় মানুষ কমতে থাকে কিন্তু এবার তার পুরো উল্টা কাহিনি ঘটে। দিন যত যায় মানুষ বাড়তে বাড়তে শেষে হয় তার ৩ গুণ! শেষমেষ ২২ জন গেলাম! তাই চিল টাও হয়েছে প্রচুর! টাংগুয়ার রূপ দেখতে দেখতে ভেসে চলা, হাওড়ে ঝাপাঝাপি, হাওড়ের পানিতে গা ভাসিয়ে চা খাওয়া, গান বাজনা,আড্ডা, কলেজ জীবনের স্মৃতিচারণ, 29 ও UNO খেলা (সিরিয়াস এন্টারটেইনমেন্ট), নৌকার উপর খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন, মাঝ রাতে বৃষ্টিতে ভেজা, সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ সময় কাটানো। সাথে যোগ হলো সুনামগঞ্জের অন্য সকল স্পট ও সবশেষে সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর। যান্ত্রিক জীবন থেকে ছুটি পাওয়ার জন্য এর চেয়ে বেশি আর কি লাগে?

এবার আসি মূলকথায়। টাঙ্গুয়ার হাওর বা টাঙ্গুয়া হাওর, বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি হাওর। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত।

::: কিভাবে যাবেন? :::

পর্বঃ ১ (টাঙ্গুয়ার হাওর)

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ এর যেকোনো বাসে উঠে পরুন। টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার জন্য সুরমা ব্রিজ পাড়ি দিয়ে ট্যূর মেম্বার কম হলে লেগুনা/বাইকে করে তাহিরপুরের উদ্দেশে রওনা হয়ে যাওয়া যায়। তবে আমাদের মতো ট্যুর মেম্বার বেশি হলে লেগুনা দিয়ে গেলে খরচ কম পড়বে বলে আমরা ২টা লেগুনা রিজার্ভ করি। সুরমা নদীর ওপার থেকে লেগুনা দিয়ে তাহিরপুর যেতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা লেগে যাবে। তাহিরপুর পৌঁছানোর পর তাহিরপুর বাজারঘাট থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা অথবা ট্রলারে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ভাড়া করুন। বড় টেকসই নৌকাগুলো ভাড়া করলে রাতে ঘুমানো এবং টয়লেটের বিষয়ে একটু বেশি সুবিধা পাবেন। মাঝিদের সঙ্গে আলাপ করে দুপুর/রাতের খাবার নৌকায় রান্না করার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই তাহিরপুর বাজার থেকে বাজার করে নিতে হবে। আমরা নিজেরা বাজার করে দুপুরে এবং রাতে নৌকায় খেয়েছিলাম।

পর্বঃ২ (সুনামগঞ্জের অন্য সকল স্পট)

টেকেরঘাট থেকে বাইক নিয়ে সুনামগঞ্জের অন্য সকল স্পট কম খরচে খুব সহজেই ঘুরে দেখতে পারেন। আমরা এক বাইকে ২জন করে মোট ১১টা বাইক ভাড়া করেছিলাম, বাইক রাইডটা অসাধারণ ছিল। ঘুরেছিলাম নীলাদ্রী লেক, বারিক্কাটিলা, জাদুকাটা নদী, রাজাইছড়া ঝর্ণা ও লাকমাছড়াতে। শিমুল বাগান তখন সবুজ ছিল বলে, আর সন্ধ্যা নেমে আসায় যাওয়া হয়নি। ভবিষ্যতে ঐ লাল শিমুল বাগানে যাওয়ার ইচ্ছা আছে আমার।

পর্বঃ ৩ (সাদাপাথর, ভোলাগঞ্জ)

সুনামগঞ্জের সাথে যদি আমাদের মতো ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর যেতে চান তাহলে আবার সিলেট ব্যাক করে ভোলাগঞ্জের বাসে যাওয়া আসা করতে হবে। আমরা ছোট সাইজের একটি সম্পূর্ণ বাসই রিজার্ভ করে নিয়েছিলাম। পরে সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সাদাপাথর যাওয়া আসা করতে হবে। সাদাপাথর জায়গাটা বেশ চমৎকার, সামনে পাহাড়, পানিতে অনেক সুন্দর ছোট-বড় পাথর রয়েছে। কিছুটা বিছানাকান্দির মতো হলেও পানির স্রোত অনেক বেশি এখানে।

এই ছিল আমাদের ট্যূরের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। আবার কবে টাঙ্গুয়ার হাওড়ে এমন স্মৃতিমধুর একটা ট্যূর দিবো সেই সময়-সুযোগের অপেক্ষায় দিন গুণছি….

বি.দ্রঃ দয়া করে হাওড়ের পানিতে ময়লা/প্যাকেট/প্লাস্টিকের বোতল ফেলে হাওড়ের সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না। হ্যাপি ট্রাভেলিং।

অর্ণব
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply