**আলো**


































































			
			











অহংকার এমন এক আবরণ যা মানুষের সকল মহত্ব আবৃত করে ফেলে৷

— জাহাবি

**আলো**

(প্রথম পর্ব)

আজ আবার বাজার নিয়ে এসেছে আরিফ।

বাজার সদায় দিতে মাঝে মাঝেই আসে । লাল শাক, ইলিশ মাছ আর টমেটো এনেছে আজ । ইলিশ মাছ এর পাশে টমেটো দিয়ে রান্না আরিফ এর খুব পছন্দ। এখন আর টমেটো দিয়ে রান্না করিনা। মেয়ে দুটো আবার রান্না করা টমেটো খেতে চায়না ওদের সালাদ পছন্দ ।

বলছিলাম আমার হাসব্যান্ডের কথা!
আরিফ আমার হাসব্যান্ড । আমাদের বিয়ের বয়স ২২ বছর হল। ওহ্ ভাবছেন তাহলে মাঝে মাঝে কেন আসে তাই না?

হ্যাঁ, মঝে মাঝেই আসে কারন ও আর আমাদের সাথে থাকেনা।
আমাদের বিয়ের বয়স ১৫ বছর যে দিন শেষ হল, ষোল বছরে পরবে ঠিক সেইদিন জানতে পারলাম সে আরও একজনকে বিয়ে করেছে।

না! না! প্রথমে বিশ্বাস করিনি একদম।
সমস্তটা দিয়ে যাকে ভালবেসেছি,বিশ্বাস করেছি আর ভেবেছি সেও আমাকে একই রকম ভালবাসে তার নামে এত বড় অপবাদ বিশ্বাস করে নিব তা হয় না।।
বাইরের লোকজন তো কত কথাই বলবে, তাই বলে সব বিশ্বাস করব নাকি???
তাছাড়া আমাদের দুটদুটো ফুটফুটে কন্যা সন্তান আছে।
আর ওদের না দেখে ও বাঁচেইনা। আর চিরাচরিত ভাবনা তো আছেই, বিয়ের পরে বউ রেখে মানুষ অন্য সম্পর্কে জড়ায়, তা আবার হয় নাকি ছি!!!

আরিফ আমার দুনিয়া।
ও যদি বলে দিন তবে দিন, যদি বলে রাত তবে রাত । আর ও সেটা ভাল করেই
জানে যে, চোখ বন্ধ করে ভালোবাসি আমি আরিফকে।
আমার চেয়ে ভালো কেউ বাসতে পারবে না আরিফকে। ওর খুশিই আমার কাছে সব।

ও দেখতে কালো হ্যাংলা পাতলা। কম খায়তো, তাই অমন স্বাস্থ্য হয়না, আজীবনই অমন।
সবাই বলে আমি হলদে ফরসা। লম্বা সুন্দরী বউ পেয়েছে নাকি আরিফ।
যাক লোকে তো কত কিছুই বলে, আমার কছে আরিফই সেরা।
না! খুব বেশি পড়াশুনা করিনি আমি, তবে মেয়ে দুটোকে মানুষ করার মত যোগ্যতা আছে।

আচ্ছা! এত কথার মাঝে এখনও আমার নামটাই বলা হলো না।
আমি “আলো”। গায়ের রঙ খুব ফর্সা বলে বাবা নাম রেখেছিল “আলো”।

সে যাই হোক। বর্তমান যুগের সাথে খুব একটা তাল মিলিয়ে চলতাম না তখন। মধ্যবিত্ত একজন স্কুল শিক্ষক এর মেয়ে হিসেবে যেভাবে চলা উচিত ঠিক ততটুকুই। তথাকথিত আল্ট্রা মডার্ন অথবা মডার্ন দুইটার কোনোটাই ছিলাম না। বলছিলাম বিয়ের আগের কথা!

আমরা সাত ভাইবোন ছিলাম আর আমি সবার ছোট। স্কুল জীবন সম্পুর্ন কেটেছে বাবার স্কুলেই। মুসলিম ঘরের মেয়ে তাই সবসময় পর্দা মেনে চলারই চেষ্টা করতাম। বাবার ভয়েও বলা যায়। দরজার পর্দাটা বাতাসে উড়লেও বকা দিত বাবা। দিবেই বা না কেন! মধ্যবিত্তদের আছেই শুধু সম্মান।

আচ্ছা! আরিফ এর কথা বলছিলাম ওরটাই বলি,
হা! আরিফ আমাদের খুব ভালবাসে। খুব ভালবাসে দেখেই কমতি রাখে না কিছুতে। আমাদের সাথে না থেকেও কিছুতে কমতি রাখে না।
আমরা ভালো আছি।

আমার বড়মেয়ে এখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। আর ছোট মেয়ে টা ক্লাস সেভেনে। পড়াশোনায় দুইজনই খুব ভালো আরিফের মতই । সবাই বলে দেখতেও আরিফের মতই হয়েছে। আমার মত ফর্সা হয়নি। বুদ্ধি হয়েছে অনেক দুইজনেরই।

ও, আরিফ বাজার দিয়ে চলে গেল। এখন আর ঠিক আগের মত বসেও না। দিয়েই চলে যায়। ব্যাস্ত মানুষ তো।
কালকে হয়ত আবার আসবে, না হয় পরশু, না হয় তার পরেরদিন, বাজার শেষ হওয়ার আগেই আবার বাজার নিয়ে আসবে।

কিছুতেই কমতি থাকতে দেয় না তো….

Writer: Maria Afrin 

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply