Tag: poem

poem কবিতা বাংলা কবিতা

  • মাগো ওরা বলে – আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

    “কুমড়ো ফুলে-ফুলে,
    নুয়ে প’ড়েছে লতাটা,
    সজনে ডাঁটায়
    ভরে গেছে গাছটা,
    আর আমি
    ডালের বড়ি শুকিয়ে রেখেছি।
    খোকা তুই কবে আসবি ?
    কবে ছুটি?”

    চিঠিটা তার পকেটে ছিল
    ছেঁড়া আর রক্তে ভেজা।

    “মাগো, ওরা বলে
    সবার কথা কেড়ে নেবে।
    তোমার কোলে শুয়ে
    গল্প শুনতে দেবে না।
    বলো, মা,
    তাই কি হয়?
    তাইতো আমার দেরি হচ্ছে।
    তোমার জন্য
    কথার ঝুরি নিয়ে
    তবেই না বাড়ি ফিরবো।

    ল‍হ্মী মা,
    রাগ ক’রো না,
    মাত্রতো আর ক’টা দিন।”
    “পাগল ছেলে,”
    মা পরে আর হাসে,
    “তোর ওপরে রাগ করতে পারি!”
    নারকেলের চিড়ে কোটে,
    উরকি ধানের মুড়কি ভাজে,
    এটা-সেটা
    আরও কত কী!
    তার খোকা যে বাড়ি ফিরবে
    ক্লান্ত খোকা।

    কুমড়ো ফুল
    শুকিয়ে গেছে,
    ঝরে পরেছে ডাঁটা,
    পুঁই লতাটা নেতানো।
    “খোকা এলি?”
    ঝাপসা চোখে মা তাকায়
    উঠানে-উঠানে
    যেখানে খোকার শব
    শকুনীরা ব্যবচ্ছেদ করে।

    এখন
    মা’র চোখে চৈত্রের রোদ
    পুরিয়ে দেয় শকুনীদের।
    তারপর
    দাওয়ায় ব’সে
    মা আবার ধান ভানে,
    বিন্নি ধানের খই ভাজে,
    খোকা তার
    কখন আসে কখন আসে।

    এখন
    মার চোখে শিশির-ভোর
    স্নেহের রোদে ভিটে ভ’রেছে।

    বাংলা কবিতা

  • নূতন কাল -পুনশ্চ -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

        আমাদের কালে গোষ্ঠে যখন সাঙ্গ হল
             সকালবেলার প্রথম দোহন,
        ভোরবেলাকার ব্যাপারিরা
             চুকিয়ে দিয়ে গেল প্রথম কেনাবেচা,
        তখন কাঁচা রৌদ্রে বেরিয়েছি রাস্তায়,
             ঝুড়ি হাতে হেঁকেছি আমার কাঁচা ফল নিয়ে—

    তাতে কিছু হয়তো ধরেছিল রঙ, পাক ধরে নি।
    তার পর প্রহরে প্রহরে ফিরেছি পথে পথে;
    কত লোক কত বললে, কত নিলে, কত ফিরিয়ে দিলে,
    ভোগ করলে দাম দিলে না সেও কত লোক—
    সেকালের দিন হল সারা।

    কাল আপন পায়ের চিহ্ন যায় মুছে মুছে,
    স্মৃতির বোঝা আমরাই বা জমাই কেন,
    এক দিনের দায় টানি কেন আর-এক দিনের ’পরে,
    দেনাপাওনা চুকিয়ে দিয়ে হাতে হাতে
    ছুটি নিয়ে যাই-না কেন সামনের দিকে চেয়ে?
    সেদিনকার উদ্‌বৃত্ত নিয়ে নূতন কারবার জমবে না
    তা নিলেম মেনে।
    তাতে কী বা আসে যায়!
    দিনের পর দিন পৃথিবীর বাসাভাড়া
    দিতে হয় নগদ মিটিয়ে—
    তার পর শেষ দিনে দখলের জোর জানিয়ে
    তালা বন্ধ করবার ব্যর্থ প্রয়াস,
    কেন সেই মূঢ়তা?

         তাই, প্রথম ঘণ্টা বাজল যেই
               বেরিয়েছিলেম হিসেব চুকিয়ে দিয়ে।
         দরজার কাছ পর্যন্ত এসে যখন ফিরে তাকাই
               তখন দেখি, তুমি যে আছ
                  এ কালের আঙিনায় দাঁড়িয়ে।
         তোমার সঙ্গীরা একদিন যখন হেঁকে বলবে
               আর আমাকে নেই প্রয়োজন,
         তখন ব্যথা লাগবে তোমারই মনে
                     এই আমার ছিল ভয়—
               এই আমার ছিল আশা।
         যাচাই করতে আস নি তুমি—

    তুমি দিলে গ্রন্থি বেঁধে তোমার কালে আমার কালে হৃদয় দিয়ে।
    দেখলেম ঐ বড়ো বড়ো চোখের দিকে তাকিয়ে,
    করুণ প্রত্যাশা তো এখনো তার পাতায় আছে লেগে।

        তাই ফিরে আসতে হল আর-একবার।
             দিনের শেষে নতুন পালা আবার করেছি শুরু
                  তোমারই মুখ চেয়ে,
               ভালোবাসার দোহাই মেনে।
        আমার বাণীকে দিলেম সাজ পরিয়ে
                   তোমাদের বাণীর অলংকারে;
        তাকে রেখে দিয়ে গেলেম পথের ধারে পান্থশালায়,
              পথিক বন্ধু, তোমারি কথা মনে ক’রে।
        যেন সময় হলে একদিন বলতে পারো
              মিটল তোমাদেরও প্রয়োজন,
                      লাগল তোমাদেরও মনে।

    দশ জনের খ্যাতির দিকে হাত বাড়াবার দিন নেই আমার।
    কিন্তু, তুমি আমাকে বিশ্বাস করেছিলে প্রাণের টানে।
    সেই বিশ্বাসকে কিছু পাথেয় দিয়ে যাব
    এই ইচ্ছা।

             যেন গর্ব করে বলতে পার
                   আমি তোমাদেরও বটে,
             এই বেদনা মনে নিয়ে নেমেছি এই কালে—

    এমন সময় পিছন ফিরে দেখি তুমি নেই।
    তুমি গেলে সেইখানেই
    যেখানে আমার পুরোনো কাল অবগুণ্ঠিত মুখে চলে গেল;
    যেখানে পুরাতনের গান রয়েছে চিরন্তন হয়ে।
    আর, একলা আমি আজও এই নতুনের ভিড়ে বেড়াই ধাক্কা খেয়ে,
    যেখানে আজ আছে কাল নেই।

  • নাটক -পুনশ্চ -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

          নাটক লিখেছি একটি।
                  বিষয়টা কী বলি।

    অর্জুন গিয়েছেন স্বর্গে,
    ইন্দ্রের অতিথি তিনি নন্দনবনে।
    উর্বশী গেলেন মন্দারের মালা হাতে
    তাঁকে বরণ করবেন ব’লে।
    অর্জুন বললেন, “দেবী, তুমি দেবলোকবাসিনী,
    অতিসম্পূর্ণ তোমার মহিমা,
    অনিন্দিত তোমার মাধুরী,
    প্রণতি করি তোমাকে।
    তোমার মালা দেবতার সেবার জন্যে।”

    উর্বশী বললেন, “কোনো অভাব নেই দেবলোকের,
    নেই তার পিপাসা।
    সে জানেই না চাইতে,
    তবে কেন আমি হলেম সুন্দর!
    তার মধ্যে মন্দ নেই,
    তবে ভালো হওয়া কার জন্যে!
    আমার মালার মূল্য নেই তার গলায়।
    মর্তকে প্রয়োজন আমার,
    আমাকে প্রয়োজন মর্তের।
    তাই এসেছি তোমার কাছে,
    তোমার আকাঙ্ক্ষা দিয়ে করো আমাকে বরণ,
    দেবলোকের দুর্লভ সেই আকাঙ্ক্ষা
    মর্তের সেই অমৃত-অশ্রুর ধারা।”

        ভালো হয়েছে আমার লেখা।

    ‘ভালো হয়েছে’ কথাটা কেটে দেব কি চিঠি থেকে?
    কেন, দোষ হয়েছে কী?
    সত্য কথাই বেরিয়েছে কলমের মুখে।
    আশ্চর্য হয়েছ আমার অবিনয়ে,
    বলছ, “ভালো যে হয়েইছে জানলে কী ক’রে?”
    আমার উত্তর এই, নিশ্চিত নাই বা জানলেম।
    এক কালের ভালোটা
    হয়তো হবে না অন্য কালের ভালো।
    তাই তো এক নিশ্বাসে বলতে পারি
    ‘ভালো হয়েছে’।
    চিরকালের সত্য নিয়ে কথা হত যদি
    চুপ করে থাকতেম ভয়ে।
    কত লিখেছি কতদিন,
    মনে মনে বলেছি ‘খুব ভালো’।
    আজ পরম শত্রুর নামে
    পারতেম যদি সেগুলো চালাতে
    খুশি হতেম তবে।
    এ লেখারও একদিন হয়তো হবে সেই দশা—
    সেইজন্যেই, দোহাই তোমার,
    অসংকোচে বলতে দাও আজকের মতো—
    এ লেখা হয়েছে ভালো।

       এইখানটায় একটুখানি তন্দ্রা এল।

    হঠাৎ-বর্ষণে চারি দিক থেকে ঘোলা জলের ধারা
    যেমন নেমে আসে, সেইরকমটা।
    তবু ঝেঁকে ঝেঁকে উঠে টলমল ক’রে কলম চলছে,
    যেমনটা হয় মদ খেয়ে নাচতে গেলে।
    তবু শেষ করব এ চিঠি,
    কুয়াশার ভিতর দিয়েও জাহাজ যেমন চলে,
    কল বন্ধ করে না।

    বিষয়টা হচ্ছে আমার নাটক।
    বন্ধুদের ফর্মাশ, ভাষা হওয়া চাই অমিত্রাক্ষর।
    আমি লিখেছি গদ্যে।
    পদ্য হল সমুদ্র,
    সাহিত্যের আদিযুগের সৃষ্টি।
    তার বৈচিত্র্য ছন্দতরঙ্গে,
    কলকল্লোলে!
    গদ্য এল অনেক পরে।
    বাঁধা ছন্দের বাইরে জমালো আসর।
    সুশ্রী-কুশ্রী ভালো-মন্দ তার আঙিনায় এল
    ঠেলাঠেলি করে।
    ছেঁড়া কাঁথা আর শাল-দোশালা
    এল জড়িয়ে মিশিয়ে।
    সুরে বেসুরে ঝনাঝন্ ঝংকার লাগিয়ে দিল।
    গর্জনে ও গানে, তাণ্ডবে ও তরল তালে
    আকাশে উঠে পড়ল গদ্যবাণীর মহাদেশ।
    কখনো ছাড়লে অগ্নিনিশ্বাস,
    কখনো ঝরালে জলপ্রপাত।
    কোথাও তার সমতল, কোথাও অসমতল;
    কোথাও দুর্গম অরণ্য, কোথাও মরুভূমি।
    একে অধিকার যে করবে তার চাই রাজপ্রতাপ;
    পতন বাঁচিয়ে শিখতে হবে
    এর নানারকম গতি অবগতি।
    বাইরে থেকে এ ভাসিয়ে দেয় না স্রোতের বেগে,
    অন্তরে জাগাতে হয় ছন্দ
    গুরু লঘু নানা ভঙ্গিতে।
    সেই গদ্যে লিখেছি আমার নাটক,
    এতে চিরকালের স্তব্ধতা আছে
    আর চলতি কালের চাঞ্চল্য।

  • কোপাই -পুনশ্চ -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    পদ্মা কোথায় চলেছে দূর আকাশের তলায়,
    মনে মনে দেখি তাকে।
    এক পারে বালুর চর,
    নির্ভীক কেননা নিঃস্ব, নিরাসক্ত—
    অন্য পারে বাঁশবন, আমবন,
    পুরোনো বট, পোড়ো ভিটে,
    অনেক দিনের গুঁড়ি-মোটা কাঁঠালগাছ—
    পুকুরের ধারে সর্ষেক্ষেত,
    পথের ধারে বেতের জঙ্গল,
    দেড়শো বছর আগেকার নীলকুঠির ভাঙা ভিত,
    তার বাগানে দীর্ঘ ঝাউগাছে দিনরাত মর্মরধ্বনি।
    ঐখানে রাজবংশীদের পাড়া,
    ফাটল-ধরা ক্ষেতে ওদের ছাগল চরে,
    হাটের কাছে টিনের-ছাদ-ওয়ালা গঞ্জ—
    সমস্ত গ্রাম নির্মম নদীর ভয়ে কম্পান্বিত।

     পুরাণে প্রসিদ্ধ এই নদীর নাম,
               মন্দাকিনীর প্রবাহ ওর নাড়ীতে।

    ও স্বতন্ত্র। লোকালয়ের পাশ দিয়ে চলে যায়—
    তাদের সহ্য করে, স্বীকার করে না।
    বিশুদ্ধ তার আভিজাতিক ছন্দে
    এক দিকে নির্জন পর্বতের স্মৃতি, আর-এক দিকে নিঃসঙ্গ
    সমুদ্রের আহ্বান।

    একদিন ছিলেম ওরই চরের ঘাটে,
    নিভৃতে, সবার হতে বহু দূরে।
    ভোরের শুকতারাকে দেখে জেগেছি,
    ঘুমিয়েছি রাতে সপ্তর্ষির দৃষ্টির সম্মুখে
    নৌকার ছাদের উপর।
    আমার একলা দিন-রাতের নানা ভাবনার ধারে ধারে
    চলে গেছে ওর উদাসীন ধারা—
    পথিক যেমন চলে যায়
    গৃহস্থের সুখদুঃখের পাশ দিয়ে অথচ দূর দিয়ে।

    তার পরে যৌবনের শেষে এসেছি
    তরুবিরল এই মাঠের প্রান্তে।
    ছায়াবৃত সাঁওতাল-পাড়ার পুঞ্জিত সবুজ দেখা যায় অদূরে।

                   এখানে আমার প্রতিবেশিনী কোপাই নদী।
                     প্রাচীন গোত্রের গরিমা নেই তার।
                   অনার্য তার নামখানি
                     কতকালের সাঁওতাল নারীর হাস্যমুখর
                       কলভাষার সঙ্গে জড়িত।
                          গ্রামের সঙ্গে তার গলাগলি,
                       স্থলের সঙ্গে জলের নেই বিরোধ।
                তার এ পারের সঙ্গে ও পারের কথা চলে সহজে।
    শনের খেতে ফুল ধরেছে একেবারে তার গায়ে গায়ে,
                   জেগে উঠেছে কচি কচি ধানের চারা।
    রাস্তা যেখানে থেমেছে তীরে এসে
                  সেখানে ও পথিককে দেয় পথ ছেড়ে—
                কলকল স্ফটিকস্বচ্ছ স্রোতের উপর দিয়ে।
    অদূরে তালগাছ উঠেছে মাঠের মধ্যে,
                  তীরে আম জাম আমলকীর ঘেঁষাঘেঁষি।
    
                  ওর ভাষা গৃহস্থপাড়ার ভাষা—
                           তাকে সাধুভাষা বলে না।
                     জল স্থল বাঁধা পড়েছে ওর ছন্দে,
                  রেষারেষি নেই তরলে শ্যামলে।
                     ছিপ্‌ছিপে ওর দেহটি
                       বেঁকে বেঁকে চলে ছায়ায় আলোয়
                          হাততালি দিয়ে সহজ নাচে।
                  বর্ষায় ওর অঙ্গে অঙ্গে লাগে মাৎলামি
                       মহুয়া-মাতাল গাঁয়ের মেয়ের মতো—
                              ভাঙে না, ডোবায় না,
                       ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আবর্তের ঘাঘরা
                              দুই তীরকে ঠেলা দিয়ে দিয়ে
                                   উচ্চ হেসে ধেয়ে চলে।
    
           শরতের শেষে স্বচ্ছ হয়ে আসে জল,
                      ক্ষীণ হয় তার ধারা,
                  তলার বালি চোখে পড়ে,
           তখন শীর্ণ সমারোহের পাণ্ডুরতা
                  তাকে তো লজ্জা দিতে পারে না।
       তার ধন নয় উদ্ধত, তার দৈন্য নয় মলিন,
                   এ দুইয়েই তার শোভা;

    যেমন নটী যখন অলংকারের ঝংকার দিয়ে নাচে
    আর যখন সে নীরবে বসে থাকে ক্লান্ত হয়ে—
    চোখের চাহনিতে আলস্য,
    একটুখানি হাসির আভাস ঠোঁটের কোণে।

    কোপাই, আজ কবির ছন্দকে আপন সাথি ক’রে নিলে,
    সেই ছন্দের আপোষ হয়ে গেল ভাষার স্থলে জলে—
    যেখানে ভাষার গান আর যেখানে ভাষার গৃহস্থালি।
    তার ভাঙা তালে হেঁটে চলে যাবে ধনুক হাতে সাঁওতাল ছেলে;
    পার হয়ে যাবে গোরুর গাড়ি
    আঁঠি আঁঠি খড় বোঝাই ক’রে;
    হাটে যাবে কুমোর
    বাঁকে ক’রে হাঁড়ি নিয়ে;
    পিছন পিছন যাবে গাঁয়ের কুকুরটা;
    আর, মাসিক তিন টাকা মাইনের গুরু
    ছেঁড়া ছাতি মাথায়।

  • কেমন করে আমরা হবো সেরা মাখলুকা

    কেমন করে আমরা হবো সেরা মাখলুকা

    রাত পোহালে দিনের আলো
    সূর্য ডুবলেই আধার,
    সারাদিন কাজ করেও
    মেলে না তাদের আহার।
    তাদের জন্য পায় না কষ্ট
    পায় না দুঃখ কেউ,
    রোগে সুঃখে তাদের পাশে
    থাকে না তো কেউ।
    আমরাও তো হতে পারতাম
    তাদেরই একজন,
    মহান রবের অশেষ দয়ায়
    আমাদের আছে আপন জন।
    তাদের পাশে যদি না দাঁড়াই
    বাড়িয়ে না দেই হাত,
    কেমন করে হবো আমরা
    সেরা মাখলুকাত।

    মোস্তাক আহম্মেদ সাগর

  • ভয়ের চাদর

    ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি
    সেকেন্ডে সেকেন্ড বছর পেরিয়ে গেলো
    সপ্তাহের বার গুনতে গুনতে
    ক্যালেন্ডার ছাড়িয়ে গেলো
    সেই সময় শেষে বর্তমান আমায় নতুন করে সাজালো।
    কিছুটা পিছু ফিরি
    কবি হওয়ার গল্প বলি?
    মন বাক্সে জমানো আছে,কিছুটা মরিচা গায়ে মেখেছে।
    একটু নেড়েচেড়ে বসি,
    সে বয়সে আবেগের জোয়ার তুলে মনে
    ডায়েরির পাতা যেন এখনো পিছু টানে
    আমি তাকিয়ে বিকেলের আকাশে
    তারে নিয়ে লিখি বসে বসে
    কখনো বা টিপটিপ শব্দে সে কালো মুঠোফোনে।
    ভাবিনি তা জড়িয়ে যাবে,শখ কখনো অস্থির মনের বাঁধন কাটিয়ে দেবে।
    সবটুকুই যে মমতায় জড়ানো কোনো এক রূপকথা
    শুরুটা অবাক হলেও,শেষটা মনগড়া।
    আমার শুরুটা এমনি
    মুসাফিরের বেশে মমতাজ আমি
    অনুভুতি গুলো যে অনেক দামী।
    বলে দেবো?
    কালো কালিতে সাজিয়ে
    তারে দর বাজারে নামিয়ে দেবো?
    না গো না!
    ইহা যেন বিন্দু বিন্দু রটিয়েছি আমি।
    এই বিরাট মহলে বিতর্ক অনেক
    লোকলজ্জার লাজ অনেক
    সম্মানের ভয় অনেক
    যদি আমার গল্প নিয়ে এরা বাজি ধরে,
    হাসাহাসি করে!
    আমি এতো মূল্যহীন,তাহা করি কী করে?
    তাই আমিও থাকি তালাবদ্ধ হয়ে
    যখনি পাড়ি জমাই ভিড়ের সংসারে
    বুঝে নিও,যদি তোমারও জানতে ইচ্ছে করে
    সহানুভূতি চাই না গো
    ইহা আজকাল মিথ্যা দামে,সবার কাছেই মিলে।

    কলমেঃ Sahnaj Rahman

  • জাগ্রত মনোশক্তি

    বিবেকে কারাগারে বন্দী
    কয়েদি আমি
    মনের আবেগে মগজের সঙ্গী আমি
    ইচ্ছা অনিচ্ছার খেলায়
    হেরে যাওয়া
    সময়ের স্রোত গায়ে মেখে
    তীর ছাড়া নদীর মাঝি আমি…
    চিন্তার মহাকাশে
    কোনো এক নভোচারী,,
    দূরবীনের কাছে ঝাপসা কোনো এক প্রতিচ্ছবি
    ম্যাগনিফাইনে নিঃসন্দেহে অদেখা জৈবশক্তি আমি!!
    কাল্পনিক আমার রচনা
    উপসংহার থেকেই যার সূচনা
    পরিবেশ যেন তলিয়ে রাখে
    মিথ্যা লালসায়
    আশার মূতি সাজিয়ে রাখে।।
    হঠাৎ কেনো এক তীব্র ঝড়
    আবেগের পাহাড় গড়িয়ে পরে
    এক মনে যেন পবিত্র মসজিদ ভেঙে পড়ে..
    নরম তুলা পাথরে রূপান্তরিত করে!!
    শিখে জগতের খেলা
    বাস্তবতায় হারানো মনোভাবের মায়া,,
    ঝঙ্কার দিয়ে ছিড়ে ফেলে!!
    বাধ্য বাঁধনে মুক্ত সে আজ
    নতুন পাখি দূর অন্তরালে ডানা মেলে।।।
    ….
    কলমেঃশাহনাজ রহমান প্রমি

  • ইভুর চিঠি

    ইভু,
    নিয়ম করে আজকার আর
    কোনো চিঠি আসে না।
    লেটার বক্সটাও পড়ে আছে,
    আমার ভেতরটার মতো শূন্য হয়ে।
    নীল খামটাও
    খোলা হয়না অনেকদিন,
    এলোমেলো লেখাগুলো
    অভিমানে হারিয়ে গেছে,
    সাদা পাতায়।
    কতদিন কাগজে কলমের
    আচড় লাগেনি।
    বেহিসাবি কত গল্প আজ
    উঠেছে ঋণের খাতায়।
    স্বপ্নগুলো আজ বাধ ভেঙে
    পালিয়েছে অজানায়।
    তুমি জানো ইভু,
    কোনোকিছুই আর আগের মতো নেই!
    তুমি নেই,আমি নেই,
    চিঠি নেই,লেটার বক্স নেই,
    আর কিছুই নেই।
    আজকে হঠাৎ কান জানি
    শিমুল তলায় শব্দের ভিড়,
    বৃষ্টির ফুটাগুলোও শূন্য,খাখা,
    ভেঙেছে পাখিদের নীড়।
    শুনেছি এগুলো না কি
    আগমনী বার্তা
    কোনো নতুন চিঠির।

    সৈয়দ মোঃ সাকিব আহমদ 

  • বিজয়ের রং

    বিজয় মানে মুক্ত হাওয়া আমাদের এই দেশে,
    বিজয় মানে অন্নপূর্ণার আগমনের বেশে।
    বিজয় মানে মায়ের থেকে কুড়িয়ে পাওয়া ধন,
    বিজয় মানে আমার কাছে সবচেয়ে আপনজন।
    বিজয় মানে কৃষ্ণচূড়া থরে থরে ফোটে,
    বিজয় মানে সহস্র ঘোড়া উদ্যম বেগে ছোটে।
    বিজয় মানে ফুলে ফুলে ভরে কোমলবন,
    বিজয় মানে আমাদের ঐ লাল চেতনার রঙ।
    বিজয় মানে খাঁটি সোনার ফসল ফলায় চাষি,
    বিজয় মানে গ্রামীণ তীরে বাজায় রাখাল বাঁশি।
    বিজয় মানে বাংলায় বিশুদ্ধ বাতাস বয়ে যায়,
    বিজয় মানে চাঁদোয়া জ্বলে শুভ্র মন নীলিমায়।
    বিজয় মানে রবির ছায়া কাজল দিঘির পাড়ে,
    বিজয় মানে কালো ককিলের মধুক্ষরা স্বরে।
    বিজয় মানে বাতাসের আবেশে বদ্ধ দরজায়,
    বিজয় মানে নবীন তীব্র স্বচ্ছ পূর্ণিমায়।
    বিজয় মানে সুদূর আজ প্রসস্থ প্রান্তরে,
    বিজয় মানে জ্যোৎস্নার সাথে তারারা ঝড়ে পরে।
    বিজয় মানে আমি যেন স্তব্ধ হয়ে শুনি,
    বিজয় মানে খুলে যাবে সমস্ত বাধুনি।
    বিজয় মানে সবুজ অরন্যে ভরপুর ডালে ডালে,
    বিজয় মানে বনচারী দোলে বাতাসের তালে তালে।
    বিজয় মানে প্রেমধারা জল রৌদ্র জোছনায়,
    বিজয় মানে প্রাঞ্জল বিপ্লব আপন পতাকায়।
    বিজয় মানে নতুন নামের স্বাধীন বাংলাদেশ,
    বিজয় মানে শুধুই এদেশে হাজার রঙের বেশ।

    Writer: MD Mokhlesur Rahman

  • খামখেয়ালিপনা

    নিশির আধারে ঝিরিঝিরি ডাক
    কাকতাড়ুয়ার কাকতালীয় সাজ
    আধারে জোছনার চিমটি আলোকছটা
    জোনাকির আলোয় উজ্জ্বল মাথার তাজ…
    এক মেঘালয় দুপুরে,
    কাঠের চেয়ারে বারান্দায় এক কাপ
    চা হাতে,
    চোখের পলক বাহিরে ফেলে
    কবে কই যেন নিরবতার দেখা মেলে।
    হঠাৎ বর্ষা,
    টিনের চালে টিপ টিপ আওয়াজ
    বিন্দু গড়িয়ে
    পরে গাল হতে ঠোঁটে
    অপরূপ তার চেহারার কারুকাজ!!
    দূর হতে আচমকা হাওয়া
    তার চুলে হানে আঘাত
    যেন বরফের পাহারে সাদা তুষারের উৎপাত…
    জানালার পর্দা আড়াল করে
    একচোখে তাকিয়ে থাকে
    মেলা বসে মনে তাহার
    যার পুরোটাই আবেগে আবিষ্কার।
    তারে ছুতে যাওয়ার ইচ্ছে জাগে
    কথা বলার বাহানা খুজে
    লজ্জায় লুটিয়ে পরে
    তার চোখের কালো মুদ্রা দেখে…
    কতোই না অপরূপ গো তুমি
    তোমার নিন্দা হাজারে হাজারে
    কেন জালাও আগুন তুমি
    এতো মানব মনে??
    তবুও তোমার ছুটে চলা
    সাদা বালির মতো
    মুষ্টি বদ্ধ হাতে গড়িয়ে পড়া
    চাহনির চাহিদা
    কতোই না চমৎকার…
    আমিও কি হতে পারি অংশীদার
    তোমার ভালোবাসার???
    মর্মাহত যেন প্রতিটা মুহূর্ত আমার!!!
    আমি ভিনদেশী তারা না কো
    যার ঠিকানা হয়নি তোমার জানা
    আমি সেই উজ্জ্বল চন্দ্রিমা
    কালো দাগ যার সৌন্দর্য বাড়ায়
    রাত যার অপেক্ষায় কাটায়।।
    দেবে কি আমাকে সুযোগ
    তোমার ছিটকে পরা কোনো এক মনের আঙ্গিনায়??
    আমি যে দূর হতে এখনো দেখছি তোমায়
    প্রহর গুনছি
    কবে তোমার গোলাপি ঠোঁট
    নাম ধরে ডাকবে আমায়।।
    এমনি কোনো এক বর্ষা
    ভিজাবো তোমায়
    মুখ ঢাকবে আকাশ
    পাখিরা ফিরবে বাসায়
    যখন শক্ত হাতে
    বুকে জরাবো তোমায়।
    দাও না কো মেয়ে তুমি
    একটো সাড়া
    আমার মনের এই রঙিন আলপনায়!!।।
    ….

    কলমেঃ Sahnaj Rahman

  • 🔹অন্তঃস্থলের কথোপকথন

    একদিন একটি গোলাপকে জিজ্ঞেস করলাম_
    আচ্ছা গোলাপ, সৌন্দর্য্যের দুরত্ব কতটুকু?
    সে বললো, চোখের পলকের মতো।

    একদিন একটি ঘাস ‘কে গিয়ে বললাম_
    আচ্ছা ঘাস, কতটুকু ধৈর্যশক্তি থাকলে,
    এভাবে পথের ধারে স্থির হয়ে বসে থাকা যায়?
    সে আমায় বললো, পাহাড় সমান।

    একদিন একটি পাহাড়কে জিজ্ঞেস করলাম_
    আচ্ছা পাহাড়, কতটুকু পরিশ্রমী হলে,
    তোমার মতো বড় হওয়া যায়?
    সে বললো, পিঁপীলিকার মতো।

    একদিন একটি পাথরকে গিয়ে বললাম_
    আচ্ছা পাথর, শুনেছি পাথরও নাকি কখনো কখনো কথা বলে?
    সে আমায় বললো,মানুষগুলো যখন পাথর হয়ে যায়।

    সানিয়া তোহফা
  • মেঘের অহেতুক ইচ্ছে

    কাব্যগ্রন্থ অবান্তর নীলা
    শাওন_মল্লিক

    নীলা! শুনছো?
    মেঘের যখন তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করে
    সে তখন টুপ করে চলে যায় মস্তিষ্কের নিউরনে…
    সে তোমায় অনুভব করে প্রতিটি নিউরন এর…
    স্ফুলিঙ্গের অন্তরালের সারবস্তু তে….
    এতো মাত্রাতিরিক্ত বিচরণে….
    তুমি লুকিয়ে থাকো কেনো….?
    আমার মস্তিষ্ক টা তো অন্ধকারে আচ্ছাদিত…
    তুমি সেখানে বিচরণ করো কীভাবে?
    ও আচ্ছা!তুমি তো নীলা!
    তুমি তো আলোর উৎস….
    তোমার আবার অন্ধকারে কিসের ভয়…
    আমিও না!
    আজকাল বড্ড ভুলে যায়.….
    কিন্তু সে স্পর্শ গুলো….
    হাত জড়িয়ে টুপ করে কেঁদে ফেলা….
    সে হাসিটা আমি কখনো ভুলতে পারি না জানো?
    সর্বদা চোখের মণির পিছনের
    আলোকসংবেদী পর্দার আড়ালে তুমি উঁকি দাও….
    তোমার স্পর্শ, কান্নারা উঁকি দেয়….
    ধরা দাও না কেনো নীলা?
    ও আচ্ছা!
    ধরা না দেয়াটাও অবশ্য স্বাভাবিক….
    জেনে বুঝে আর কেউ কি বিষাক্ত জিনিসে হাত দেয়?
    যাক বাদ দাও ওসব কথা….
    কিন্তু!নীলা! শুনছো?
    মেঘের যখন তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করে
    সে তখন টুপ করে চলে যায় মস্তিষ্কের নিউরনে…

  • কালো ম্যাম

    কালো ম্যাম

    ফারহান আহমেদ রাব্বী

    আমার বেশ মনে আছে,সে দিনগুলোর কথা।
    যে দিনগুলোর কথা মনে করতেই,
    চোঁখের সামনে তৈলচিত্রের মতো ভেসে ওঠে
    অবহেলা,অবজ্ঞা আর শৈশবের কঠোরতা।
    ক্লাসে,একমাত্র উপহাসের পাত্র ছিলাম আমি।
    অন্যরা ভুল করলে মিলত একতাল সমবেদনা,
    সান্ত্বনা আর অটুট আশ্বাস।
    আর আমার বেলায়
    অতিসামান্য সময়ে এই শুন্য হৃদয়টা পরিপুর্ন হয়ে যেত
    তাদের ঠাট্টা-বিদ্রুপ এবং উপহাস দিয়ে।
    আমি শুধু মাথা নিচু করে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে তাকতাম।
    মাঝে মাঝে-আকাশপানে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলতাম
    আমার এই করুনতা যদি তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে পারে
    তাতে ক্ষতি কি ?
    সহজে খেলতো নিতো না কেউ।
    আমি সামনে গিয়ে দাড়াতেই,
    দুদলের ক্যাপ্টেনের মধ্যে,আমাকে নিয়ে রেশারেশি শুরু হয়ে যেত।
    অবশেষে কদাকিঞ্চিত জায়গা মিলত
    গোলকিপার কিংবা ফিল্ডার হিসেবে।
    বছর দুয়েক পুরনো স্কুল ড্রেসখানা
    মজমাসভায় ছিড়ে দিয়েছিল তারা একদিন।
    এরপর-টানা সাতদিন আমি স্কুলে যেতে পারিনি।
    মাসের পাচ তারিখের মধ্যে
    কোনোদিনই মাইনে ফি দিতে পারিনি।
    ছাত্র হিসেবে ভালো ছিলাম বলে
    অর্ধেক বেতনেই দিব্যি জায়গা করে নিয়েছিলাম স্কুলে।
    তারপরও প্রতমাসের বেতনের তালিকায়
    আমার নামটা সবার শেষেই থাকতো।
    ঝন্টু স্যার আমাকে খুব ভালোবাসতেন বলে,
    মাঝে মাঝে দু-কান ধরে নিয়ে যেতেন।
    আসলে বিনা বেতনের টিউশনি নিতে, বেশ
    সংকোচবোধই লাগতো।
    স্কুল জয়ন্তী অনুষ্ঠানে,যখন
    মেধাতালিকায় পুরষ্কার নিতে গেলাম।
    বড় স্যার আমার পোশাকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
    আমি-হাত বাড়িয়ে হ্যান্ড সেকও করতে পারিনি।
    তবে হ্যা।
    আমার এই একাকিত্বময় জীবনের একমাত্র সঙ্গী ছিল
    আমার কালো ম্যাম।
    সাহেব বাড়ির বড় মেয়ে-নাম তার শ্যাফালি।
    দিনের বেশিরভাগ সময়টা আমার সাথেই কাটতো তার।
    প্রতিদিন বিকেলে
    সাহেব বাড়ির মালি,মনিতা-দি এসে বলতো
    ছোট বাবু বাড়ি আসো
    কালো ম্যাম তোমার অপেক্ষায়
    চলে এসো।
    কেন যে মনিতা-দি আমাকে
    ছোট বাবু বলে ডাকতো,
    তা তখন বুঝতে পারিনি।
    পুরনো সেই বকুল গাছটার নিচে গিয়ে দেখি
    কালো ম্যাম-আপনমনে বকুল ফুলগুলো
    একখানা সুতোয় আবদ্ধ করছে।
    আমি পাশে বসতেই
    মুহুর্তেই পরিবর্তন হয়ে যেত তার চোখের চাহুনি,
    কথা বলার ভঙ্গি।
    আমি শুধু চুপ করে শুনে যেতাম।
    দিনশেষে একখানা বকুলের মালা হাতে দিয়ে
    কালো ম্যাম মুচকি হেসে চলে যেত।
    বকুলের মালাগুলো শুকিয়ে যেত ঠিকই
    তারপরও আমি সেগুলো যত্ন করে রেখে দিতাম।
    যেদিন প্রাথমিক জীবনের সমাপ্তি ঘটল
    কালো ম্যাম শহরে যাওয়ার আগে,তার
    দুচোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছিল।
    সেদিন জীবনের একাকিত্বমাই সময়টাকে
    আমি আবার, নতুন করে অনুভব করেছিলাম।
    আজ পনেরো বছর পর
    কালো ম্যামের সাথে দেখা।
    কোনো এক স্টেশনে,আমরা ভিন্ন পথের যাত্রী।
    জমানো কথাগুলো বলা হলো না-কোনোদিন।
    আবার হারিয়ে গেলো-ছোট্ট বেলার প্রেম
    আমার কালো ম্যাম।

  • #হারতে_হয়

    #হারতে_হয়

    হেরে গিয়েছি অনেক,হারতে হয়েছে অনেক,
    হারিয়েছি নিজেকে অনেক,হারাতে হয়েছে অনেক,
    জিততে জিততেও হেরছি,হালও চেড়েছি।

    তবু হারতে হারতেই শিখেছি হেরে যাওয়ার মুগ্ধতা,
    হারার মাঝেই খুজে নিয়েছি জিততে পারার উদ্দীপনা।
    বোধগম্যতা এনেছি জিতে যাওয়ার হীনমন্যতার।

    পরিস্হিতি প্রদর্শন ব্যতীরেক যেমন বাস্তবতা দুর্দর্শ,
    তেমনি হারা ছাড়াও জিতার আনন্দ অপূর্ণ।

    তাই জীবনে হারতে হয়,নিজেকে হারাতে হয়,
    হারতে হারতেই জীবন হয়ে উঠে কোমল,
    আর শুধুমাত্র জিতার মাঝে জীবন হয় প্রাণহীন-নিরব।
    তাই হারতে হয় বারবার।

    Md Sifat Ahsan

  • বাধ্য ভিটা

    বাধ্য ভিটা

    বিন্দু বিন্দু জমানো শখ
    কাজের ভিড়ে বাড়তি আলোচক
    বিনা হিসেবে পিছু অর্থ খরচ
    মনোরম আমেজ,সাজানো আপন ভোজ..
    সময়ের সাথে বদলানো পথ
    কখনো ব্যস্ত, কখনো নিরব।।
    এক বয়সের মোড় আসে
    বসতভিটা ছেড়ে অন্য জগতে পা রাখে
    কারো মন লাগে,কারো মন ভাঙেন..
    আজ বাবা ছেড়ে অমুক বাড়ির বউ হলো তার মেয়ে।
    আচমকা নিয়ম
    ভাবিতেই অবাক লাগে।
    মায়ের ঘরে বাড়ে,
    বাবার ছায়ার তলে,
    চোখে হাজারো সপ্ন নিয়ে,
    কারো শুরুটা এগুতে থাকে,আবার কারো যায় সব থেমে..
    কেন সে অনেক মন মরা হয়ে থাকে???
    নতুন জীবন বলে
    আমার জগতে এলে গো তুমি
    যেথায় রাজা আমি, রাজত্য আমার
    রাজকন্যা বাপের ঘরে ছিলে
    এখন যে শুধু দাসত্বে পতিত হলে!!!!
    সে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে
    অল্প বসয়ে তিন বাচ্চা কোলে নেয় তুলে
    নতুন বাড়ির বউ গো তুমি
    মন্দ বলে সমাজ,
    তুমি কাজে গেলে!!!!
    খাতা কলম তো তুমি
    শখের বসে হাতে নিয়ে!!!
    আহারে মানুষ
    দিলে তো এক পাখি খাচায় বন্দি করে!!!
    আধুনিকতার ভিড়ে
    অলিতে-গলিতে
    এমন চরিত্র এখনো দেখা মেলে।
    থামিয়ে দিলো এক চাকা
    এবার ধাক্কায় টেনে নিয়ে চলে নামকরা দেশ এগিয়ে
    যার মানসিকতা সাদাকালো দিনেই আটকে আছে..
    জানতে গেলে দূর ঠেলে
    জানাতে গেলে মন্দ বলে
    কেউ আন্দোলনের জোয়ার বয়ে আনে।
    সেই সময়ে সকলেই ভালো সাজে
    তলে তলে
    নোংরামি বাসা বাঁধে।।
    সমাধান কি এর হাজারে আসে
    এক এক করে যদি নাই পারি বদলাতে???
    ভিতরের পরিবর্তন নাই যদি পারো আনিতে
    কি আর হবে
    মেয়ে সন্তান বড়ো করে??
    যদি বুজাই ভাবো তারে
    নাইবা দিলে
    তারে নিজ জগত সাজাতে!!
    এমন করে লিখিত আছে
    বড় বড় অক্ষরে
    যা হয়তো সাদা কাগজেই আটকে আছে
    পারে নাই আজও কোনো কিছুই বদলাতে।।।
    ………..

    কলমেঃSahnaj Rahman promi
    বাংলা কবিতা

  • কাটামাখা মনোবল

    মনের ভিতরে হাজারো এলোমেলো কথা
    ভাবনা,না ভাবার জাগায় চেতনা
    মুখ্য করে তুলে তারে
    যার মুল্য নেইকো জগৎ সংসারে..
    বিলাস মনে জাগে না হারানোর ভয়
    সে যেন বস্তু সমাহার শূন্যতায় তুলে ধরে..
    অবুঝ,অভদ্র
    সভ্যতার মাঝে অসভ্যতার উক্তি শোনে
    নির্বাক মনে প্রশ্ন আসে,
    মেয়ে তুমি সভ্য ছিলে কবে???
    তীব্র বেগে ছুটে চলে
    কালো ঘটায় রাঙা দিনে
    সেদিন হারিয়েছি নিজের
    সাজিয়েছি সত্তা অমূল্য করে।
    চুপ থাকার মাঝে
    লুকিয়ে দিয়েছি
    সহানুভূতির ভয়ে।
    এবার নিজেকে বড় করে
    আর আলোচক আলোচনা করে,
    সমালোচক সমালোচনা করে!!!
    কথার তীর পাথরের গায়ে আছড়ে পরে..
    ভুলে যায়,
    লোহাই যে লোহাকে কাটিতে পারে!!!!
    মনোবল দীর্ঘ
    চেতনা জাগ্রত।
    এবার ছুতে হবে আকাশ
    যতই টানুক সমাজ নিচে আমারে..
    মনে দোয়া
    হে মোর মালিক
    শক্তি দিয়ো আমারে।
    এই পথটা একা চলতে হবে
    সব হতে আলাদা,অনন্য করিতে চায় তাহারে..
    পথের কাটা,মানুষের বিষমাখা কথা
    গায়ে মাখিলে
    রোকেয়া জাগরণ হইতো নারে!!
    নারী বসিতো বদ্ধ চার দেয়ালে!!
    তেরেসা শেষ করে নিজেরে
    মানবতার পদতলে
    মোহাম্মদ করেন মক্কা জয়
    মনোবল নড়বড়ে হলে হেরে যেতো না তারা সেকালে???
    এন্যা লিখিতো না ডায়েরি
    নম্বর দুইয়ের বিশ্ব তেজ নিয়ে
    সুজরনার,হয়তো বাধ্য কৃষ্ণাঙ্গই থেকে যেতো রে!!
    তথ্যের বইয়ের পাতায় লাভলেসের চিত্র
    অবাক মনে সময় বিলিত
    মালালা ইউসুফ নোবেল পেলো কেমন করে??
    সে ও তো মুসলিম পরিবারেই বেড়ে উঠে!!!
    দুই নোবেল ধারী দুই বিজ্ঞানের মেরি কুরি
    ইতিহাসে সে এক নারী
    মুখে বলে,
    জীবনে কিছুরে ভয় করো না কো
    এই যে এক মুখোশ পরা অনুভুতি
    যতো বুঝবে,ভয়টা ততোই হেরে যাবে।।
    এমন লাখো লাখো নারী,পুরুষ
    শুরু হতেই অমূল্য ছিলো কবে?
    তারা বানিয়ে নিয়েছে অমূল নিজেরে!!
    অনমনা মন নিরবতায় সাহস জোগায়
    তুমি ভাবো কি নিজেরে!!
    আমার মাঝে কি না ভাবার দাড়ি চিহ্ন বসানো আছে??
    আসুক না বাধা,চোখ তাহার এক সুন্দর জীবন দেখিতে চায়।
    মরার আগে গর্ব করি নিজেরে
    এইতো শুরু,এবার দেখি কতো বাধা আটকায় আমারে!!
    এই এক মেয়ে হাজারো মনের চেতনা ধরে
    মূর্খ মানুষ
    বদলাও নিজেরে,
    পারো না নিজেরে দামী করিতে
    হিসেব করো কেন তাহারে!!
    এই যেন কঠোর এক অনুভুতি
    দিন শেষে না পাই পাশে কারোকে
    হারাবো কি,
    অমূলতা হারিয়ে নিয়েছে
    কালিতে লিখিনি
    কোনো কালে চুখের জলে মিটিয়ে দিয়েছি
    নিজের মাঝে তাই আজ অসীমতা ভার করে।
    তবে,
    সে যে চোখের পানি নিজ হাতে মোছার যোগ্যতা রাখে!!
    বাশ যেন তরুণ সমাজ হতে আসে
    পদে পদে আঘাত করিবো তোমারে…
    দেখি পাশান মানুষ
    কতো নামাও তাহারে!!
    ……….
    কলমেঃSahnaj rahman
    বাংলা কবিতা

  • ছন্নছাড়া

    আমার সমারোহে সংগ্রহ রাখা নজরুলের কথা
    যার ছন্দে সাজিয়ে রাখা বহু কবিতা
    ছেঁড়া সাদা কাগজে যেন জীবন্ত
    শব্দের ছোয়া পাতা..
    মুঠোফোনে বন্দি করে রাখি
    মনগড়া বহুমাত্রিক এক পাঠশালা
    থাকে না বলা কথা
    নিরবতার শব্দমালা।
    হঠাৎ বলে
    সময় গড়াচ্ছে
    হোক না নতুন কিছু লিখা।
    আনমনা!!
    যেন গভীরতার অন্ধকারে
    খুজে নিয়েছে উজ্জ্বল আলোকছটা!!
    তুমি অদ্ভুত
    বন্ধু হয় না তাকে মানা।
    সময় গড়িয়ে দিন,পিছন ছুটে আসে রাত
    কানে বাজে আজানে ধ্বনি
    এই গড়ালো আর একটা দিন
    আজ বুঝি শনিবার??
    মা বলে শনি যেন অমঙ্গল নিয়ে আসে
    মুচকি হাসিতে ভাবে
    সপ্তাহে মঙ্গলের সাত হাত দেবো এনে!!!
    মানব মন,কতোই না মোম গলে পরে…
    চোখ বুজে,বিবরণ স্বপনের মাঝে
    শূন্যতার খুজে।
    তার যেন ভালোলাগে
    নিজেকে নিজেই আবিস্কার করে!!
    এক লম্বা পথের খুজে
    পায়ে চলার মনোবল নিয়ে
    অশান্ত মন তার..
    মগজে নুরি পাথর
    ঠক ঠক শব্দ করে
    তারো বলো,
    মানুষ সব সমান না রে!!
    হঠাৎ চোখ মেলে
    কল্পনার খেলাই এই তুমি পিছিয়ে গেলে!!
    রাজপথ,
    বালুময় সৈকত
    মুঠোফোন বেজে উঠে।
    এইবার তৈরি করো নিজেরে।।।
    চেতনা জাগে
    সীমানা কঠিন,তবুও এগুতে থাকে।
    সমাজ হাসে,আপন পিছুটানে..
    সে পাথর
    বাচতে চায় নিজেকে প্রমাণ করে!!
    তুলতুলে নরম হাতে
    এইবার নিজেকে তৈরি করে..
    ভাবে,,,
    শেষ বারে কেউ নাইবা থাকুক পাশে
    পশ্চিমা আকাশে তোলা দুহাত
    যেন আমার শান্তি কামনা করে…
    এই ভাবনা মনে নিয়ে
    অন্য মন হাজারো পরিবর্তন করে
    সাজে নিজ সাজে,
    অল্প কথায় শক্ত ছন্দ আঁকে..
    ভেলাভাসা কথায় না,নিজ কথা সে কানে রাখে।।
    …….
    কলমেঃশাহনাজ রহমান
    Bangla poem

  • আমি কোন সাহিত্যিক হতে চাইনি

    জান্নাতুল নাইম স্মরণ

    কবিতাদের আমি আসতে বলিনি,
    তারা নিজেরাই এসেছে।
    শব্দেরা, ছন্দেরা নিজেরাই ধরা দিয়েছে।
    গল্পদেরও আমি কাছে ডাকি নি,
    শব্দের পঙ্কতিমালা আমি চাই নি।
    তারাও নিজে নিজেই এলো।
    আমার কলমের নিচে ঠাঁই খুঁজে নিল।

    অথচ এসব আমি চাইই নি।
    আমি কোন সাহিত্যিক হতে চাই নি।
    একজন প্রেমিক হতে চেয়েছিলাম।
    কাজল কালো অক্ষরে,
    আমি মন-ভুলানো গল্প-কবিতা লিখতে চাই নি।
    তোমাকে একটা চিঠি লিখতে চেয়েছিলাম।
    আমি কোন খ্যাতি চাই নি।
    তোমার অখ্যাত প্রেম চেয়েছিলাম।

    এই মোটা ফ্রেমওয়ালা চশমা,
    গাদা গাদা বই,
    দু’তলা বিরাট বাড়ি,
    সামনে সুন্দর বাগান,
    কিছুই চাই নি।

    নীলিমা,
    শুধু তোমার হাত ধরে,
    এক নিশ্চুপ প্রান্তরে
    জ্যোৎস্নার ছায়ায় হাঁটতে চেয়েছিলাম।
    অথচ দেখ নীলিমা
    সেটাই হয় নি।

  • মানুষ

    সবগুলোই রাতের পশু আমার ভেতর ডেকে ওঠে 

    আমিই কেবল বাইরে বেরোই সহজলভ্য মানুষরূপী 

    হাওয়ায় আমার পোশাক ওড়ে 

                                     ঢেউখেলা চুল 

                                                       আলতো সিঁথি 

    আমিই কেবল আইসক্রিম খাই 

                               তারা সবাই অসংযমী, মাংসলোভী

    সকল প্রজাতান্ত্রিক বনে রাস্তা বাঁকা 

    ধূসর তার সংবিধানে তুমুল বৃষ্টি 

                                             নৌকা ফাঁকা 

    জ্বর চলে যায়, অসুখ-বিসুখ 

    যেতে যেতে গার্হস্থ্যদিন রোগশয্যায় ভাসতে থাকে 

    অনেক পশু লীলায় ডুবে হাসতে থাকে 

                                 সে-মুখ দেখার আয়না কোথায়? 

    দু একটি শাঁখ, কাজললতা বেলা-অবেলায় উঁকি দিলে 

    বেশ লাগে। 

                      অভিমানকে একলা ফেলে 

                                                         সামনে আসি —

    হাতে তবু অস্ত্র থাকে, সে-তো কোনও প্রত্ন অসি 

    ধর্মচারীর ছদ্মবেশে মুরলী হই, অস্ত্রকেই বলি বাঁশি 

    এ নন্দনে সব কোলাহল বাৎস্যায়নই ভালো বোঝে 

    মানুষ শুধু গন্ধ শুঁকে যেতে চায় তমসার কাছে 

    হে নীরব, রক্ষা করো, কী বলব আর! 

    ধর্মে আছি, ধর্মে থাকি, নষ্ট আমি —বলবে না কেউ                      খবরদার! 

    Writer:তৈমুর খান

  • মূলত উলঙ্গবাদ

    সবাই পোশাক পাল্টায় 

    আমি কী পাল্টাব তবে? 

    প্রত্নশরীরে আদিম ইচ্ছাগুলি জেগে 

    পোশাক নেই, পোশাক নেই আমার

    মূলত উলঙ্গবাদ আমিই বহন করি 

    আমিই সীমানাহীন হই সব সীমানায় 

    সবাই স্নান সেরে নিচ্ছে 

                                  এ মহতী জলাশয় পেয়ে 

    আমি তীরে অবিচল প্রত্নধুলোয় 

                                        তৃষ্ণার্ত দিন পার করি 

    আমার নিজস্বতীর্থে আমিই দেবতা 

    দোলাচল নেই, প্রাচীন ভাষার কাছে আসি 

    সবাই সাজাচ্ছে পথে আলো 

                               ইহকাল পরকাল উজ্জ্বল হবে 

    আমার কোনও পথ নেই, 

                                    আলো নেই 

                                             রাতের তাঁবুতে আছি 

    আঁধার জমেছে বেশ জমকালো 

                                             শতচ্ছিন্ন ইহকাল জুড়ে…. 

    Writer:তৈমুর খান