When you do things from your soul, you feel a river moving in you and you feel joy

মাথার থেকে ধানী রঙের ওড়নাখানা সরে যায়

মাথার থেকে ধানী রঙের ওড়নাখানা সরে যায়,
চীনের টবে হাসনুহানার গন্ধে বাতাস ভরে যায়।
তিনটে পাঠান মালী আছে নবাবজাদার বাগানে,
দুয়ারে তার ডালকুত্তো চীৎকারে-রাত-জাগানে।
ধানশ্রীতে সানাই বাজে কুঞ্জবাবুর ফটকে,
দেউড়িতে ভিড় জমে গেছে নাটক দেখার চটকে।
কোমর-ঘেরা আঁচলখানা, হাতে পানের কৌটা,
ঘোষপাড়াতে হন্‌হনিয়ে চলে নাপিত-বউটা।
গাছে চড়ে রাখাল ছোঁড়া জোগায় কাঁচা সুপুরি,
দুবেলা পান বাঁধা আছে, আরো আছে উপুরি।
সের পঁচিশেক কদমা ছিল কলুবাড়ির ধামাতে,
জলের মধ্যে উলটে গেল ঘাটের ধারে নামাতে।
মাছ এল তাই কাৎলাপাড়া খয়রাহাটি ঝেঁটিয়ে,
মোটা মোটা চিংড়ি ওঠে পাঁকের তলা ঘেঁটিয়ে।
চিনির পানা খেয়ে খুশি, ডিগবাজি খায় কাৎলা—
চাঁদা মাছের চ্যাপটা জঠর রইল না আর পাৎলা।
শেষে দেখি ইলিশ মাছের মিষ্টিতে আর রুচি নাই,
চিতল মাছের মুখটা দেখেই প্রশ্ন তারে পুছি নাই।
ননদকে ভাজ বললে, তুমি মিথ্যে এ মাছ কোট, ভাই,
রাঁধতে গিয়ে দেখি এ যে মিঠাই-গজার ছোটো ভাই।
রোদের তাপে হাওয়া কাঁপে, মাঠের বালি তেতে যায়।
পাকুড়তলার ঘাটে গোরু দিঘিতে জল খেতে যায়।
ডিঙি চলে ধিকি ধিকি, নদীর ধারা মিহি—
দুপুর-রোদে আকাশে চিল ডাক দিয়ে যায় চিঁহি।
লখা চলে ছাতা মাথায় গৌরী কনের বর—
ড্যাং ড্যাঙাড্যাং বাদ্যি বাজে; চড়কডাঙার ঘর।

হাঁটুজলে পার হয়ে যায় মরা নদীর সোঁতা,
পাড়ির কাছে পাঁকে ডিঙি আধখানা রয় পোঁতা।
এনামেলের-বাসন-ভরা চলেছে এক ঝাঁকা,
কামার পিটোয় দুম্‌দুমিয়ে গোরুর গাড়ির চাকা।
মাঠের পারে ধক্‌ধকিয়ে চল্‌‌তি গাড়ির ধোঁওয়া,
আকাশ বেয়ে ছেঁটে চলে কালো বাঘের রোঁওয়া।
কাঁসারিটা বাজিয়ে কাঁসা জাগায় গলিটাকে,
কুকুরগুলোর অসহ্য হয়— আর্তনাদে ডাকে।
ভিজে চুলের ঝুঁটি বেঁধে বসে আছেন কন্যে,
মোচার ঘন্ট বানাতে চান কোন্ মানুষের জন্যে।
গামলা চেটে পরখ করে গাইটা দড়ি-বাঁধা,
উঠোনের এক কোণে জমা কয়লাগুঁড়োয় গাদা।
ভালুক-নাচের ডুগ্‌ডুগি ওই বাজছে ও পাড়াতে,
কোন্-দিশী ওই বেদের মেয়ে নাচায় লাঠি হাতে।
অশথতলায় পাটল গোরু আরামে চোখ বোজে,
ছাগলছানা ঘুরে বেড়ায় কচি ঘাসের খোঁজে।
হঠাৎ কখন বাদুলে মেঘ ছুটল দলে দলে,
পশলা কয়েক বৃষ্টি হতেই মাঠ ভাসালো জলে।
মাথায় তুলে কচুর পাতা সাঁওতালি সব মেয়ে,
উচ্চহাসির রোল তুলে যায় গাঁয়ের পথে ধেয়ে।
মাথায় চাদর বেঁধে নিয়ে হাট ভেঙে যায় হাটুরে,
ভিজে কাঠের আঁটি বেঁধে চলছে ছুকে কাঠুরে।

বিজুলি যায় সাপ খেলিয়ে লক্‌লকি,
বাঁশের পাতা চমকে ওঠে ঝক্‌ঝকি।
চড়কডাঙায় ঢাক বাজে ওই ড্যাডাং ড্যাং।
মাঠে মাঠে মক্‌মকিয়ে ডাকে ব্যাঙ।

ছড়া লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply