Many of life’s failures are people who did not realize how close they were to success when they gave up.

— Thomas A. Edison

মংপু পাহাড়ে

কুজ্‌ঝটিজাল যেই
সরে গেল মংপু-র
নীল শৈলের গায়ে
দেখা দিল রঙপুর।
বহুকেলে জাদুকর, খেলা বহুদিন তার,
আর কোনো দায় নেই, লেশ নেই চিন্তার।
দূর বৎসর পানে ধ্যানে চাই যদ্দূর
দেখি লুকোচুরি খেলে মেঘ আর রোদ্দুর।
কত রাজা এল গেল, ম’ল এরি মধ্যে,
লড়েছিল বীর, কবি লিখেছিল পদ্যে।
কত মাথা-কাটাকাটি সভ্যে-অসভ্যে,
কত মাথা-ফাটাফাটি সনাতনে নব্যে।
ঐ গাছ চিরদিন যেন শিশু মস্ত,
সূর্য উদয় দেখে, দেখে তার অস্ত।
ঐ ঢালু গিরিমালা, রুক্ষ ও বন্ধ্যা,
দিন গেলে ওরি ’পরে জপ করে সন্ধ্যা।
নিচে রেখা দেখা যায় ঐ নদী তিস্তার,
কঠোরের স্বপ্নে ও’ মধুরের বিস্তার।

হেনকালে একদিন বৈশাখী গ্রীষ্মে,
টানা-পাখা-চলা সেই সেকালের বিশ্বে
রবিঠাকুরের দেখা সেইদিন মাত্তর,
আজি তো বয়স তার কেবল আঠাত্তর,
সাতের পিঠের কাছে এক ফোঁটা শূন্য;
শত শত বরষের ওদের তারুণ্য।
ছোটো আয়ু মানুষের, তবু এ কী কাণ্ড,
এটুকু সীমায় গড়া মনোব্রহ্মাণ্ড;
কত সুখে দুখে গাঁথা, ইষ্টে অনিষ্টে,
সুন্দরে কুৎসিতে, তিক্তে ও মিষ্টে,
কত গৃহ-উৎসবে, কত সভা-সজ্জায়,
কত রসে মজ্জিত অস্থি ও মজ্জায়,
ভাষার নাগাল-ছাড়া কত উপলব্ধি,
ধেয়ানের মন্দিরে আছে তার স্তব্ধি’।
অবশেষে একদিন বন্ধন খণ্ডি’
অজানা অদৃষ্টের অদৃশ্য গণ্ডি
অন্তিম নিমেষেই হবে উত্তীর্ণ।
তখনি অকস্মাৎ হবে কি বিদীর্ণ
এত রেখা এত রঙে গড়া এই সৃষ্টি,
এত মধু অঞ্জনে রঞ্জিত দৃষ্টি।
বিধাতা আপন ক্ষতি করে যদি ধার্য,
নিজেরই ত’বিল-ভাঙা হয় তার কার্য,

নিমেষেই নিঃশেষ করি ভরা পাত্র
বেদনা না যদি তার লাগে কিছু মাত্র,
আমারি কী লোকসান যদি হই শূন্য,
শেষ ক্ষয় হোলে কারে কে করিবে ক্ষুণ্ন।
এ জীবনে পাওয়াটারই সীমাহীন মূল্য,
মরণে হারানোটা তো নহে তার তুল্য।
রবিঠাকুরের পালা শেষ হবে সদ্য,
তখনো তো হেথা এক অখণ্ড অদ্য
জাগ্রত র’বে চিরদিবসের জন্যে
এই গিরিতটে এই নীলিম অরণ্যে।
তখনো চলিবে খেলা নাই যার যুক্তি,
বারবার ঢাকা দেওয়া, বারবার মুক্তি।
তখনো এ বিধাতার সুন্দর ভ্রান্তি
উদাসীন এ আকাশে এ মোহন কান্তি॥

মংপু

১০ জুন, ১৯৩৮

লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply