You’ve gotta dance like there’s nobody watching,
Love like you’ll never be hurt,
Sing like there’s nobody listening,
And live like it’s heaven on earth.

— William W. Purkey

সাতান্ন বছর পরে -শক্তি চট্টোপাধ্যায়

সাতান্ন বছর পরে
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
সাতান্ন বছরে আমি ফিরে আসি জীবনের প্রাথমিক স্তরে,
সেখানে প্রকৃত অর্থে প্রতিদিন ভয়ঙ্কর কর্ম ও জীবন উদ্বেলিত—
কখনো দূরের কোনো জঙ্গলের পপলারের ভিতরে, কখনো লেকের পাশে ছিপ হাতে— লক্ষ্য জল, মাছ।
সাতান্ন বছরে আমি ফিরে আসি জীবনের প্রাথমিক স্তরে,
করি অঙ্গভঙ্গি যার প্রত্যক্ষত অর্থ নেই কোনো ;
হঠাৎ জড়িয়ে ধরি পাইন, আমায় লেপ্টে নেবে
কিংবা পপলার তুমি শীর্ষে নাও, আমি লক্ষ করি— আকাশে চাঁদের খেলা, বাল্যের খুনসুটি, চুমু খাওয়া কিশোরীর স্তন স্পর্শ করা মাত্র দেহ জ্বলে যায়,
এইসব অনুভূতি মরচে পড়ে ভোঁতা হয়ে ছিলো
আমার বৃদ্ধের মধ্যে, আজ কি উজ্জ্বল হলো মুখ,
ঘন ঘন দাঁতে দাঁত জিবে জিব উচ্ছৃঙ্খল হাত পরশপাথর খোঁজে জীবিতের জন্যে খোঁজে খিদে। জীবনস্মৃতের মধ্যে সে বিকৃত হলুদ অসুখ—
হয়ে ছিলো এতকাল,
জীবনস্মৃতকে মৃত ক’রে !
না আজ কোথাও কোনো মৃত্যু নেই বিখ্যাত ভুবনে।
শুধু বেঁচে থাকা আছে, ভোগ করে যাওয়াটুকু আছে, সচেতনভাবে তাকে দৈহিক বলো তো, তাই আছে। জীবনযাপন আছে, আছে শুধু হৈ হৈ চিৎকার—
অথচ আমাকে ওরা রুগ্ণ বলে ধিক্কার দিয়েছে
এতদিন, আজ আমি বেরিয়েছি শোধ নেবো ব’লে
সাতান্ন বছর ঘুম থেকে আজ কয়লা ও হিম
সরিয়েছি, বাঁচবো ব’লে একা ও অনেকে মিলে ব্যূহের ভিতরে—
সে-ব্যূহ ফাটাতে জানি আমি আজ স্মার্ত বিস্ফোরক ! মনে আছে সন্ধেবেলা এক পাখি আরেক পাখিকে না পেয়ে
আমার কাছে চলে এসেছিলো।
বললাম সে-পাখিকে, চলো আমরা দুজনেই খুঁজি— গভীর অরণ্যে চলো, গর্তে চলো, চলো গুহামুখে । নিতান্ত না যদি পাই, কান্না নয়, নতুন পাখিনি
ধরে আলিঙ্গন করো, যুদ্ধে যাও, যদি যুদ্ধ হয় !
আমার তো মনে হয় যুদ্ধে তুমি সাবালক হবে,
সেই পাখিটিকে আমি বলেছি, সঙ্গমে সারারাত।
সুখে থাকবে, বাসা বাঁধো, আবার নতুন করে বাসা উৎপাদন করো ধান গম সর্ষে যতগুলো পারো
তারপর পাখিনিকে নিয়ে যাও হোয়নোয় দ্বীপে– সেখানে জলের ধারে বাসা বাঁধো, মাছ ধরে খাও, চতুর্দিকে জল আর হোয়ানোয় দ্বীপ মধ্যিখানে— জীবনের মানে খোঁজো, মৃত্যু নয়, শুধু বিস্ফোরণ
সাতান্ন বছর পর মৃত্যু নয়, শুধু বিস্ফোরণ ।
এখন হেমন্ত, পাতা ঝরে যায় গোটা ইয়োরোপে। আমারও ভিতরে পাতা ঝরে,
রক্তিম মেপ্‌ল পাতা ঝরে যায় আমারও ভিতরে,
পপলারের পাতা ঝরে, শুকনো পাতা মচিয়ে যাই— গাছের নতুন জন্ম হবে বলে বাগানের দিকে।
বিষণ্ণতা ঝরে যায়, সরে যায় হলুদ অসুখ,
কমলালেবুর বনে অসংখ্য কমলা পড়ে আছে,
দু’হাতে ওদের তোলো, আলিঙ্গনবদ্ধ করো রং, ভাসাই-বৃষ্টিতে ভেজো, তৎপরতা দেখাতে যেও না— নতুন যৌবনপাত্র গড়া হচ্ছে সাতান্নর পরে,
তার দিকে লক্ষ্য রাখো, তার দিকে দু’ হাত বাড়াও
সে তোমায় অমরত্ব দেবে।
সাতান্ন বছর পরে এই অগ্নি নির্বাপক নয়,
র্ঁদার কাজের মতো গ্রানিটে সংহত।
সুপ্ত গিরি বিস্ফারিত হয়েছে হঠাৎ,
ভয়ঙ্কর মূর্তি সেই আগ্নেয় লাভার।
লোকালয় ছারখার, গাছ ও পাথর পুড়ে খাক্,
হোক তবে তাই হোক, সমাহিত হয়ে থাক বিশুদ্ধ সভ্যতা,
ভেঙে যাক রাষ্ট্রসীমা, কবিত্বের হাত থেকে ছুটি নিয়ে নাও
নামো খেতে, ধান করো, হয়ে যাও সুশিক্ষিত চাষা কিছুদিন, রোদ খাও, বৃষ্টি খাও আর খাও ঘাস,
খিদে যাবে,
ঘাসে কতো পুষ্টি তা তো কবিত্ব জানে না !
সাতান্ন বছর পরে এই রাহু, এই বিস্ফোরণ !
এই খিদে-লাগা প্রেম, এই বৃষ্টি, এই রোদ, আলো— ভালো লাগে সব কিছু জীবনযাপনে।
সাতান্ন বছর পরে আরো দীর্ঘ সাতান্ন বছর ! বেঁচে থাকা, ভালো থাকা, এ-বছর ক্ষিপ্ত জন্মদিনে !
দেশ, ২৫ জুন ১৯৯২
কাব্যগ্রন্থ – ‘ জঙ্গল বিষাদে আছে ‘

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0