Every human being is the author of his own health or disease.

— Buddha

অভাব-পৃথিবীর সম্পদ

যদি পৃথিবীতে অভাব না থাকতো, তাহলে কি হতো?

কি হতো মানে? কিছুই হতো না।

দেখুন, অভাব এমন একটা তাড়নার অনুভুতি যেটা আমাদের কোন কিছুর প্রয়োজনের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত চেষ্টা করতে থাকি যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের সেই প্রয়োজনটা সম্পূর্ণ বা আংশিক স্তিমিত হয়ে যায়।

অভাবের অনুভূতি তো আমাদের জন্মক্ষণ হতেই শুরু হয়েছে। একটা সম্পূর্ণ নতুন আর অচেনা পরিবেশে এসে একটা শিশু সাহসের অভাব অনুভব করে। ভয়ের আচ্ছাদনে জড়িত হয়ে কেঁদে ওঠে। তাঁর সেই ভয় দূর করার জন্য মা মুখে দুধ তুলে দিয়ে সাহস যোগায়। প্রমাণ করে ভয় নেই, তুমি একা নও। কেউ তোমার পাশে আছে। ক্ষুধার সাথে সাথে অসহায়ত্বের অভাব দূর হয়ে যায় বলে শিশু নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে।

এরপর অভাব দূর করে পিতা। একটা ছোট শিশু পিছলে পড়ে প্রথমে কাঁদে ব্যথায়, তারপর লজ্জায়। এই একই শিশুকে বাবা নিজের এক হাতে দাড় করায়, শুন্যে তুলে দিয়ে আবার দু হাতে ধরে। শিশু হাসতে থাকে। কেন? কারন তাঁর কাছে অসহায়ত্বের স্থলে ভরসা করার মতো সাহস আাছে।

যতদিন সে যৌবনে পদার্পণ না করে ততদিন পিতামাতা তাঁকে প্রয়োজনের অভাব পূরণ করে। এরপর আসে অভাব পূরণ করার জন্য তার নিজের পালা। এবার তাঁর নিজের অভাব নিজেকেই পূরণ করতে হবে। প্রথমত, মৌলিক চাহিদাগুলো। পরে, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার বিপরীতে সম্ভাব্য প্রচেষ্টাগুলো। শেষে, অপেক্ষাকৃত বেশি শৌখিন বিলাসিতার উপকরণগুলো।

এছাড়া কিছু নিকৃষ্ট মনের মানুষ আছে যারা অন্যকে নিজের চেয়ে বেশি সমৃদ্ধ মনে করে। হয় তাঁকে নিচে নামিয়ে, নয় নিজেকে তাঁর চেয়ে উপরে তুলতে তাড়না বোধ করে। নিজের আত্মতৃপ্তির জন্য এটাও তাঁর কাছে একটা মনোবৃত্তিগত অভাব। যদিও এটা অনভিপ্রেত।মৃত্যু পর্যন্ত এই হলো মানুষের মোটামুটি অভাবের বিমূর্ত ধারণা। যা মানুষ পূরণের জন্য প্রচেষ্টা চালায়। মূলতঃ এগুলোর জন্যই আমাদের এত এত চিন্তাচেতনা, পরিকল্পনা ও কর্মচান্চল্য।

যদি অভাব না থাকতো, মানে চাইলেই সবকিছু পেয়ে যেতাম, তাহলে আমরা মোটেও মস্তিস্কগত বা শারিরীক, কোন পরিশ্রম-ই করতে চাইতাম না। আমরা জড় বস্তুর মতো এক স্থানেই পড়ে থাকতাম। আর আমাদের সাথে সাথে পুরো পৃথিবীটাই জড় আকার ধারণ করতো। তাই অভাব আমাদের ও পৃথিবীকে ঠেলে চালনা করে। একেই জীবন বলা হয়।

তাই অভাব আমাদের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, বরং সবচেয়ে বেশি আকাঙ্ক্ষিত, অভাব-ই চালিকাশক্তি, অভাব-ই আমাদের সময়ের তালে তালে চলা ভারসাম্যপূর্ণ বাস্তবতা।

Writer: মোঃ নাহিদ মাহমুদ

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply