অহংকার এমন এক আবরণ যা মানুষের সকল মহত্ব আবৃত করে ফেলে৷

— জাহাবি

ছায়াবৃত্ত -সুজান মিঠি

জীর্ণ নদীটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
জন্ম আর মৃত্যুর মধ্যে যে সময়…
তাই ছায়াবৃত্ত।
ছেলেটা গম্ভীর মুখে মাথা নাড়ল।
না না…তবুও ঊষা এবং গোধূলি
দুটোই সুন্দর, বাঁচতে হবে!
নদী বলল, বেশ উপায় বলো।
ছেলেটা অনেকক্ষন চুপ করে ভেবে খাতায়
পেন্সিল ঠেকাল।
তারপর বলল, এইতো দেখ! এই যে আঁকলাম!
নদী ক্ষীণ কন্ঠে বলল, এতো উচ্চ গতি।
পাহাড় ভেঙে এসেছি অনেক আগেই।
অন্য উপায় বলো।
ছেলেটা পৃষ্ঠা উল্টে দেখাল, এটা?
নদী আফসোসের সুরে বলল, এও নয়।
এর নাম মধ্য গতি। প্রবল আনন্দে কেবল
স্রোতে গা ভাসানো।
তুমি বন্ধু তাই তোমার কাছেই আবদার রাখা,
নইলে আর কিছুই হবার নয়।
এক সপ্তাহ ছেলেটা এল না।
শীর্ণ নদী তার অসুস্থ শরীর আর দৃষ্টি নিয়ে
রোজ অপেক্ষা করল।
তাকে মাড়িয়ে চলে গেল গরু বাছুর মানুষ…
নদী মনে মনে ভাবল, গোধূলি শেষ হওয়ার সময় হয়ে এল বোধহয়!
একদিন বিকেলবেলা হন্তদন্ত হয়ে ছেলেটা
নদীর সামনে এসে হাজির।
উপায় পেয়েছি নদী! পথ পেয়েছি।
নদী উত্তেজিত হয়ে পড়ে…
কী পথ? এক্ষুণি বলো, শুনি!
ছেলেটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, বন্যা।
বন্যা আনতে হবে তোমার শরীরে।
চোখে ক্ষুরধার স্রোত…
ঢেউয়ে ঢেউয়ে যুদ্ধের দামামা…
দুই হাতে মুচড়ে ফেলবে বন্ধন!
নদী আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ল।
সত্যিই তো এ উপায় সে এতদিন কেন জানত না!
বৃষ্টি ডাকল সে। তার তপস্যায় তুষ্ট হল বরুণদেব।
ঝমঝম করে একটানা বৃষ্টি হল।
ফুলে ফেঁপে উঠল নদী।
ছেলেটা তীরে বসে বসে শীর্ন নদীর একটু একটু করে প্রাণ পাওয়া দেখল।
বলল, তবে! বলেছিলাম না, আমি ঠিক পারব?
বলেছিলাম না, আমি বন্ধু তোমার?
নদী তীর ভাঙতে ভাঙতে ছেলেটার কাছে এল।
ছেলেটাকে স্রোতে টেনে নিল, বলল…
বন্ধুই তো!
এলাকায় সতর্কবার্তা জারি হল।
যে নদী কোনোদিন ফোঁস পর্যন্ত করেনি,
সে কী করে এমন বন্যাপ্রবন হয়ে গেল
গবেষণা শুরু হল তাই নিয়ে।
গ্রামের লোকজন ছুটে এল ছেলেটার
ভেসে যাওয়ার খবর পেয়ে।
চিৎকার করে তাকে ডাকল, উঠে আয় খোকা!
সর্বনাশ হয়ে যাবে নইলে!
ছেলেটা নদীকে বলল, আমার কিন্তু শ্বাস আটকে
যাচ্ছে নদী! যদি মরে যাই?
নদী হাসল। তার তখন উন্মত্ত শরীর, উত্তেজনা শিরায়।
বলল, ছায়াবৃত্ত সবাইকেই তো পার হতে হয় বন্ধু!
ছেলেটা লোকজনের দিকে তাকিয়ে হাসল।
বলল, তোমরাও এস! ছায়াবৃত্ত পেরিয়ে আমি এগোলাম।

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0