The future belongs to those who believe in the beauty of their dreams.

— Eleanor Roosevelt

সিলেট ভ্রমণ লালাখাল, খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান এবং রাতারগুল (যাবতীয় ট্যুর ডিটেইলস)

৫ বন্ধু মিলে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গত ২৩ জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৩০ এর ট্রেনে করে রওনা দেই সিলেট। সিলেট পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় ভোর ৫ টা বেজে যায়। তখনো চারিদিক সম্পূর্ণ অন্ধকার, আলো ফোটেনি, সিলেট স্টেশনের পাশেই “বুলেট মামার” টং এ আলো না ফোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে থাকি। ৬ টায় কাউন্টার খুললে আবার ঢাকা ফেরার জন্য রিটার্ন টিকেট কেটে ফেলি শনিবার রাত ১১:৩০ মিনিটের জন্য। আমাদের সব ট্যুর প্ল্যান করা ছিল যে কিভাবে কি করবো, আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল আমরা লোকাল পদ্ধতিতে সব জায়গায় যাতায়াত করবো। পরে সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করি আমরা।
অনেকেই ভাবতে পারে লোকালে যাতায়াত করলে খরচ অনেক কমে যায়, যেটা সম্পূর্ণ সঠিক কিন্তু এ ক্ষেত্রে অনেক ধকল পোহাতে হয়, সময় অনুযায়ী যাওয়া যায় না কোথাও বা খুব একটা রিল্যাক্সে যাওয়া যায় না।
আমরা এক সিএনজি ড্রাইভার (মনির ভাই) এর সাথে কথা বলে যা দেখলাম আমাদের লোকাল যাতায়াত করতে যত টাকা খরচ হয়, তার থেকে ১০০-২০০ টাকা বেশি লাগছে একটা রিজার্ভ সিএনজি নিতে। এক্ষেত্রে আমারা রিল্যাক্সে যাতায়াত করতে পারবো প্লাস কোন ধকল পোহাতে হবে না এমনকি আশেপাশে ছোটখাটো কোন স্পট থাকলে সেগুলো ও ভালোমতো ঘুড়ে দেখা যাবে। যাইহোক মনির ভাইকে আমরা ৩ রাত ২ দিন (লালাখাল, খাদিমনগর এবং রাতারগুল) এর জন্য ২৩০০ টাকা দিয়ে রিজার্ভ করে নেই।
লালাখাল :
ভোরের আলো ফুটতেই আমরা মনির ভাই এর সিএনজি নিয়ে প্রথম চলে যাই সিলেটের বিখ্যাত “পাঁচ ভাই রেস্তোরাঁয়”। সেখানেই আমরা সকালের নাশতা হিসেবে তুন্দুল/নান রুটি এবং ডাল ভাজি নেই। সেখানে নাশতা শেষ করে আমরা সকাল ৮ টায় রওনা দেই লালাখাল এর উদ্দেশ্যে। লালাখাল যেতে যেতে ১০:২০ এর মত বেজে যায়। এরপর দেরি না করে দ্রুতই চলে যাই নৌকা ভাড়া করতে। লালাখালে দুটো ঘাট, প্রথমেই যেই ঘাট সেখানে নৌকা ভাড়া হচ্ছে প্রতি ঘন্টা ৬৫০ টাকা। আর ৫ টাকা দিয়ে খাল পাড় হলে ছাদ ছাড়া নৌকা ঘন্টা ২০০-৪০০ টাকা। আমরা ২৫০ টাকা দিয়ে নৌকা ভাড়া করে যাত্রা শুরু করি লালাখালে। লালাখাল এর সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আমরা যত গভীরে যাচ্ছিলাম ততই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম। প্রাকৃতিক নীল পানি দিয়ে পরিপূর্ণ একটা জলাশয়। এক কথায় অনবদ্য। এরপর জিরো পয়েন্টে গিয়ে মাঝির দেখিয়ে দেওয়া জায়গায় নেমে যাই গোসলের জন্য। বরফ শীতল পানিতে নেমে শরীরের যত ক্লান্তি ছিল, সব নিমিষেই দূর হয়ে গেল। মাঝিদের দেখানো জায়গায় ই নামবেন, যদি গোসল করতে চান কারণ ঐখানে প্রচুর চোরাবালি আছে। গোসল শেষ করে ঘাটে চলে আসি আবার। ঘাটের ঐখানেই ভাত,ডাল,মুরগির মাংস এবং সবজি দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। খাবার যথেষ্ট ভালো এবং সুস্বাদু ছিল।
খাদিমনগর :
লালাখাল এর পর্ব শেষ করে রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে দুপুর ২ টার মধ্যে রওনা দেই খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান এর উদ্দেশ্যে। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যদি রাত্রে ঐখানে ক্যাম্পিং করতে চান তাহলে দয়া করে আগে থেকেই খাদিমনগরে ফোন দিয়ে বুকিং করে রাখবেন। নাহলে আমাদের মত ভোগান্তিতে পড়বেন। যাইহোক আসল কথায় আসি, খাদিমনগর যেতে যেতে প্রায় বিকাল ৪:৩০ এর মত বেজে যায়। আমরা আগে থেকেই ফোন দিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু খাদিমনগর ফরেস্ট ক্যাম্পিং এর জন্য যেই তাবু ও রিসোর্ট ছিল তা একদল আগেই বুকিং করে রেখেছিল এই কথা আমাদের আগেই জানিয়ে দিয়েছিল এবং বলেছিল আপনারা যদি থাকতে চান এটার পাশে পিকনিক স্পট এর একটা রুমের মত আছে সেখানে রাত কাটাতে পারেন তবে শোয়ার কোন ব্যবস্থা করতে পারবেন না। আমরা ভেবেছিলাম থাকা যাবে সেই রুমে কিন্তু গিয়ে দেখি তা থাকার অযোগ্য। আমরা এমন সময় গিয়েছিলাম যে ঐখান থেকে অন্য জায়গায় যাওয়াও তখন সম্ভব ছিল না। কারণ আমাদের রিজার্ভ করা সিএনজি আমাদের নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছিল। সে আবার কালকে সকালে আসবে। এরপর অনেক রিকোয়েস্ট করে বন বিভাগের অফিস রুমেই আমাদের শোয়ার জন্য সামান্য ব্যবস্থা করি (এটা বিপদে পড়ে করতে হয়েছে)। তারা আমাদের খারাপ অবস্থা দেখে ফ্লোরে চার-পাঁচটা ম্যাট্রেস এবং দুটি স্লিপিং ব্যাগ দেয়, এই দিয়েই আমরা পাচজন সেখানে রাত কাটাই। রাতে খাবার ব্যবস্থা তারাই করে দেয়। জন প্রতি ১২০ টাকা সেখানে থাকবে ভাত,সবজি,মুরগির মাংস এবং ডাল। আর চাইলে বারবিকিউ ও করতে পারবেন সেক্ষেত্রে লাগবে ৫০০ টাকা ( এক মুরগী ৪ পিছ)। আমরা ভাত এর প্যাকেজটাই নেই, এবং খেয়ে কোনরকম কষ্ট করেই রাতটা কাটাই। তাই আগে ফোন করে যাবেন। তাহলেই ফরেস্ট ক্যাম্পিং এর আসল মজা উপভোগ করতে পারবেন। এককথায় রোমাঞ্চকর বলা যায়, যা আমরা মিস করেছিলাম আগে বুকিং না করার ফলে। সকালে উঠে তাদের বাকি সব ঘুড়ে দেখি। আপনি চাইলে ট্রেকিং করতে পারবেন। ২ ঘন্টা এবং ৪৫ মিনিটের দুটি ট্রেকিং আছে। গাইড ভাড়া যথাক্রমে ৪০০ এবং ২০০ টাকা। চাইলে কিছু কমিয়ে নিতে পারেন। আর সেখানে ট্রি এডভেঞ্চার আছে কিছু। একটা আছে ৫ সেট ১০০ টাকা এবং আরেকটি ১০০ টাকা। চাইলে এগুলো করতে পারেন। আমরা করি নি কোনটাই। রাতে থাকা,খাবার এবং টিকেট বাবদ আমরা ১৫০০ টাকা দেই। সাধারণত তাবু খরচ ৫০০ টাকা। চাইলে সকালের নাশতাও তারা ব্যবস্থা করে দেয়, জনপ্রতি ৬০ টাকা (খিচুড়ি, ডিম, সবজি)। আমরা সকালের নাশতা পাইনি তাই খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান থেকে ১০-১৫ মিনিট সামনে হেটে গেলেই বাজার পরে সেখানে সকালের নাশতা করি “খিচুড়ি এবং ছোলা” দিয়ে। এত মজার খাবার আগে কখনো খাইনি। মাত্র ২০ টাকা প্লেট। প্রত্যেকে ২-৩ প্লেট করে খেয়েছিলাম আমরা।
রাতারগুল :
যেহেতু আমাদের রাত ১১:৩০ এর টিকেট কাটা ছিল তাই খাদিমনগর ধীরেসুস্থে ঘুরে বেড়িয়ে রিজার্ভ করা সিএনজি কে ফোন দেই, মনির ভাই আসলে ১১ টার দিকে রওনা দেই রাতারগুল এর উদ্দেশ্যে। খাদিমনগর থেকে রাতারগুল যেতে সর্বোচ্চ ৩৫-৪০ মিনিট লাগে। রাতারগুলে অনেকগুলো ঘাট আছে, আপনারা চৌরঙ্গী ঘাটে চলে যাবেন। সব ঘাট থেকে সেখানে নৌকা ভাড়া কম। আর এই গ্রুপেরই এক ভাই (সেলিম ভাই) যার সাহায্যে আরো কমে নৌকা ভাড়া করি আমরা। সাধারণত ৭৫০ টাকা ভাড়া কিন্তু সেলিম ভাই আমাদের ৫০০ টাকায় ভাড়া করে দেয় নৌকা। সেই নৌকায় চড়ে বেড়িয়ে পড়ি রাতারগুল এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। রাতারগুল বর্ষাকালেই বেশি সুন্দর। শীতেও মোটামুটি সুন্দরই ছিল। ছোটখাটো এক সুন্দরবন এর ফিল পাচ্ছিলাম। কড়া দুধ চা এর মত রং ছিল পানির। ওয়াচ টাওয়ার থেকে রাতারগুল আরো সুন্দর লাগছিল। পুরো রাতারগুল দেখা যাচ্ছিল ওয়াচ-টাওয়ার থেকে। রাতারগুল থেকে ফিরে আবার চৌরঙ্গী ঘাটেই দুপুরের খাবার খেয়ে নেই ৬০ টাকা জনপ্রতি। খিচুড়ি এবং মাংস। এরপর প্রায় ৩-৩:৩০ এর দিকে রওনা দেই সিলেট স্টেশনের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যের মধ্যে চলে আসি স্টেশনে এবং রাতের ট্রেনে আবার চলে আসি ব্যস্ত শহর ঢাকায়।
খরচ:
ট্রেন টিকেট – ২৬৫*২ = ৫৩০ টাকা
সিএনজি রিজার্ভ – ২৩০০÷৫ = ৪৬০ টাকা
সকালের নাশতা – ৫০ টাকা
লালাখাল নৌকা ভাড়া – ২৫০÷৫ = ৫০ টাকা
লাঞ্চ – ১০০ টাকা
খাদিমনগর রাতে থাকা+ খাওয়া+ টিকেট = ১৫০০÷৫ = ৩০০ টাকা (এখানে তাবুতে থাকলে খরচ অন্যরকম হতো)
সকালের নাশতা – ৪০ টাকা
রাতারগুল নৌকা – ৫০০÷৫ = ১০০ টাকা
লাঞ্চ – ৬০ টাকা
স্টেশনে ডিনার – ৬০ টাকা
সাথে অন্যান্য খরচ ২০০ টাকার মত
টোটাল – ১৯৫০ টাকা
জরুরী ফোন নাম্বার (সবার অনুমতি নিয়েই) –
সিএনজি ড্রাইভার মনির ভাই – 01832-614033
খাদিমনগর তাবু বুকিং :
কাদের ভাই – 01737-853713
আমির আলি – 01762-458744
সেলিম ভাই – 01751659636 (যেই ভাই রাতারগুলে নৌকা ভাড়া কমাতে সাহায্য করেছিলেন, ওনার সাথে যোগাযোগ করে যাবেন তাহলেই হবে )

Rafsan Haque(ট্র্যাভেলার্স অফ বাংলাদেশ)

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply