You only live once, but if you do it right, once is enough.

— Mae West

বাংলা ব্যাকরণ | চাকরি পরিক্ষার প্রস্তুতি

Job preparation | চাকরি পরিক্ষার প্রস্তুতি । Subject:

আমরা অনেক সময় ‘সমুদ্র’ এবং ‘মেঘ’-এর প্রতিশব্দগুলো গুলিয়ে ফেলি কারণ এদের প্রতিশব্দগুলো প্রায় কাছাকাছি ধরণের। তাই আমরা সহজে এভাবে মনে রাখতে পারি- যে শব্দগুলোর শেষে ‘ধি’ থাকবে সেগুলো সমুদ্রের প্রতিশব্দ, এবং যে শব্দগুলোর শেষে ‘দ’ বা ‘ধর’ থাকবে সেগুলো মেঘের প্রতিশব্দ।
যেমন- সমুদ্রের প্রতিশব্দ বারিধি, জলধি, জলনিধি, অম্বুধি, সরোধি, উদধি, পয়োনিধি, তোয়ধি, বারিনিধি ইত্যাদি। লক্ষ করুন সবগুলো শব্দের শেষে ‘ধি’ আছে।
আবার মেঘের প্রতিশব্দ বারিদ, জলদ, অম্বুদ, তোয়দ, জলধর, পয়োধর, তোয়ধর, নীরদ, পয়োদ ইত্যাদি। লক্ষ করুন সবগুলো শব্দের শেষে ‘দ’ বা ‘ধর’ আছে।
ব্যতিক্রম: মোটামুটি একটি ব্যতিক্রমই রয়েছে সেটি হলো ‘জলধর’। এই শব্দটি দ্বারা ‘সমুদ্র’ এবং ‘মেঘ’ দুটোকেই বুঝায়।
♠ আমাদের অনেক সময় পরীক্ষায় কোনটির মূল উপাদান কী, উপকরণ কী, একক কী ইত্যাদি নিয়ে নাজেহাল হতে হয়। এ বিষয়ে বোর্ড বইতে যা আছে তা আমাদের একটু কষ্ট করে মুখস্থ রাখতেই হবে, এছাড়া আর কোন উপায় নেই। পরীক্ষায় এ সম্পর্কিত যে প্রশ্নগুলো বেশি আসে তা হলো:
ভাষার মূল উপকরণ- বাক্য;
ভাষার মূল উপাদান/মৌলিক একক- ধ্বনি;
ধ্বনির মৌলিক অংশ/একক- ধ্বনিমূল;
বাক্যের মূল উপাদান/উপকরণ/একক- শব্দ;
শব্দের মূল উপাদান/উপকরণ/একক- ধ্বনি;
ধ্বনির প্রতীক/চিহ্ন- বর্ণ;
শব্দের ক্ষুদ্রাংশ/অর্থবোধক একক- রূপ;
শব্দের গঠনগত একক- বর্ণ।
♠ আমরা সবাই ছোটবেলায় অক্ষর শিখেছি। আমাদের সকলেরই অক্ষরজ্ঞান রয়েছে। এই অক্ষরকে আমরা অনেকে ‘বর্ণ’ ভেবে ভুল করে থাকি। প্রকৃতপক্ষে অক্ষর মানে কিন্তু বর্ণ নয়। অক্ষর মানে হলো শব্দাংশ বা syllable. একটি শব্দের যতটুকু অংশ একবারে উচ্চারণ করা যায়, ততটুকু অংশকে এক একটি শব্দাংশ/অক্ষর বা syllable বলে।
যেমন- ‘ব্যাকরণ’ শব্দটিতে কয়টি অক্ষর রয়েছে? এখন আমরা যদি বলি চারটি অক্ষর তাহলে ভুল হবে। প্রকৃতপক্ষে ব্যাকরণ শব্দটিতে অক্ষর রয়েছে তিনটি (ব্যা+ক+রণ=৩টি)।
♠ সংক্ষেপে সমাস মনে রাখার উপায়:
ব্যাসবাক্যে নিম্নলিখিত চিহ্নগুলো থাকলে খুব সহজেই চিনতে পারবেন কোনটি কোন সমাস-
♥ দ্বন্দ্ব = ও, এবং, আর থাকলে;
♥ কর্মধারয় = যেই-সেই, যিনি-তিনি, যে-সে, ব্যাসবাক্যের মাঝখানে যে থাকলে;
♥ তৎপুরুষ = বিভক্তি (২য়া-৭মী) লোপ পেলে;
♥ বহুব্রীহি = ব্যাসবাক্যের শেষে যার, যাতে থাকলে;
♥ দ্বিগু = সমাহার থাকলে;
♥ অব্যয়ীভাব = নৈকট্য/সমীপে, কিংবা, অভাব, পর্যন্ত, সাদৃশ্য, ক্ষুদ্রতা, অতিক্রম, পশ্চাৎ, অতিক্রান্ত থাকলে।
♠ সংক্ষেপে কারক মনে রাখার উপায়:
♥ কর্তৃকারক = কে করে? (যেমন- রিমন পড়াশুনা করছে। এখানে ‘রিমন’ কর্তৃকারক);
♥ কর্মকারক = কাকে, কী? (যেমন- বাবা রিমনকে একটি কলম কিনে দিয়েছেন। এখানে ‘রিমনকে’ এবং ‘কলম’ কর্মকারক);
♥ করণ কারক = কী দিয়ে? (যেমন- রিমন কলম দিয়ে লিখছে। এখানে ‘কলম’ করণ কারক);
♥ সম্প্রদান কারক = স্বত্ব ত্যাগ করে দিয়ে দেওয়া বুঝালে (যেমন- দরিদ্রকে দান কর। এখানে ‘দরিদ্রকে’ সম্প্রদান কারক);
♥ অপাদান কারক = ভয়, কোথা থেকে? (যেমন- বাবাকে আমি খুব ভয় করি। এখানে ‘বাবাকে’ অপাদান কারক। মা নদী থেকে পানি আনছে। এখানে ‘নদী থেকে’ অপাদান কারক);
♥ অধিকরণ কারক = কোথায়, কখন? (যেমন- আমি শুক্রবার ঢাকা যাব। এখানে ‘শুক্রবার’ এবং ‘ঢাকা’ অধিকরণ কারক।)
♠ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তবর্ণ যা আমরা প্রায়শ ভুল করে থাকি:
জ্ঞ = জ্ + ঞ (যেমন- বিজ্ঞান, অজ্ঞান ইত্যাদি);
ঞ্জ = ঞ + জ (যেমন- সঞ্জয়, ব্যঞ্জন ইত্যাদি);
হ্ন = হ্ + ন (যেমন- মধ্যাহ্ন, সায়াহ্ন ইত্যাদি);
হ্ণ = হ্ + ণ (যেমন- পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ ইত্যাদি।

নিয়ম- প্র, পরা, পূর্ব ও অপর- এই চারটির পরবর্তী ‘অহ্ন’ শব্দের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- প্রাহ্ণ, পরাহ্ণ, পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ ইত্যাদি);

ষ্ণ = ষ্ + ণ (যেমন- উষ্ণ, তৃষ্ণা ইত্যাদি);
ঞ্চ = ঞ + চ (যেমন- সঞ্চয়, কিঞ্চিৎকর ইত্যাদি);
ঞ্ছ = ঞ + ছ (যেমন- বাঞ্ছিত, লাঞ্ছিত ইত্যাদি);
হ্ম = হ্ + ম (যেমন- ব্রাহ্মণ, ব্রহ্মাণ্ড ইত্যাদি);
ক্ষ্ম = ক্ + ষ্ + ম (যেমন- লক্ষ্মী, লক্ষ্মীছাড়া, সূক্ষ্ম ইত্যাদি);
ক্ষ্ণ = ক্ + ষ্ + ণ (যেমন- তীক্ষ্ণ, তীক্ষ্ণবুদ্ধি ইত্যাদি);
ম্ম = ম্ + ম। যেমন- সম্মান (সন্মান নয়। এই বানানটি আমরা প্রায় সময় ভুল করি);
ম্ন = ম্ + ন। যেমন- নিম্নে (নিন্মে নয়। এই বানানটিও আমরা প্রায় সময় ভুল করে থাকি);
ত্র = ত্ + র-ফলা (যেমন- মিত্র, সূত্র ইত্যাদি);
ক্র = ক্ + র-ফলা (যেমন- বক্র, আক্রমণ ইত্যাদি);
ত্রু = ত্ + র-ফলা + উ-কার (যেমন- শত্রু, শত্রুজিৎ ইত্যাদি);
ত্থ = ত্ + থ (যেমন- অশ্বত্থ, উত্থান, উত্থাপন ইত্যাদি)।
♠ ভাষার মৌলিক উপাদান/অংশ চারটি (লক্ষ রাখবেন- ভাষার মূল উপাদান একটি আর মৌলিক উপাদান চারটি)। এগুলো হলো:
১. ধ্বনি;
২. শব্দ;
৩. বাক্য ও
৪. অর্থ।
এই উপাদানগুলোর ওপর ভিত্তি করেই সব ভাষার ব্যাকরণে নিম্নলিখিত চারটি বিষয় আলোচনা করা হয়:
১. ধ্বনিতত্ত্ব;
২. শব্দতত্ত্ব বা রূপতত্ত্ব;
৩. বাক্যতত্ত্ব বা পদক্রম;
৪. অর্থতত্ত্ব।
(উপরিউক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও অভিধানতত্ত্ব, ছন্দ ও অলংকার প্রভৃতিও ব্যাকরণের আলোচ্য বিষয়।)
♠♦ ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়:
১. ধ্বনির উচ্চারণপ্রণালী;
২. উচ্চারণের স্থান;
৩. ধ্বনির প্রতীক/বর্ণের বিন্যাস;
৪. ধ্বনির সংযোগ/সন্ধি;
৫. ধ্বনির পরিবর্তন ও লোপ;
৬. ণত্ব ও ষত্ব বিধান;
৭. বর্ণ ও বর্ণের ব্যবহার ইত্যাদি।
♦ শব্দতত্ত্ব/রূপতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়:
১. শব্দ প্রকরণ;
২. শব্দ গঠন;
৩. পদ পরিচয়;
৪. লিঙ্গ;
৫. বচন;
৬. বিভক্তি;
৭. পুরুষ;
৮. শব্দরূপ;
৯. কারক;
১০. সমাস;
১১. ধাতুরূপ;
১২. প্রত্যয় ইত্যাদি।
♦ বাক্যতত্ত্ব/পদক্রমের আলোচ্য বিষয়:
১. বাক্যের গঠন;
২. বাক্যের বিশ্লেষণ;
৩. বাক্যের বিভিন্ন উপাদানের সংযোজন, বিয়োজন ও প্রয়োগ রীতি;
৪. বাক্যের মধ্যে শব্দ বা পদের স্থান বা ক্রম;
৫. পদের রূপ পরিবর্তন;
৬. বাগধারা ইত্যাদি।
♦ অর্থতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়:
১. শব্দের অর্থবিচার;
২. বাক্যের অর্থবিচার;
৩. অর্থের বিভিন্ন প্রকারভেদ যেমন- মুখ্যার্থ, গৌণার্থ, বিপরীতার্থক শব্দ ইত্যাদি।
♠ সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা:
১. সর্বপ্রথম সাধু ভাষা ব্যবহার করেন রাজা রামমোহন রায়;
২. সাধু ভাষা পরিভাষাটি প্রথম ব্যবহার করেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর;
৩. বাংলা গদ্যের প্রথম যুগে প্রচলন ছিল সাধু রীতির;
৪. সাধু ভাষার প্রচলন স্তিমিত হয় বিংশ শতাব্দীতে;
৫. বাংলা সাহিত্যে চলিত রীতির রূপকার, স্রষ্টা ও প্রথম ব্যবহারকারী প্রমথ চৌধুরী;
৬. প্রমথ চৌধুরী চলিত ভাষা ব্যবহারের বিষয়ে কাকে প্রভাবিত করেছিলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে;
৭. চলিত ভাষাকে জনপ্রিয় করেন- প্রমথ চৌধুরী।
♦ সাধু রীতির বৈশিষ্ট্য:
১. ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে চলে;
২. এর পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট;
৩. এ রীতি গুরুগম্ভীর;
৪. এ রীতি তৎসম শব্দবহুল;
৫. দৈনন্দিন কথাবার্তা, নাটকের সংলাপ, আলাপ-আলোচনা ও বক্তৃতার অনুপযোগী;
৬. সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ এক বিশেষ গঠনপদ্ধতি মেনে চলে;
৭. এ রীতিতে অব্যয় পদের দীর্ঘরূপ হয় না;
৮. এ রীতি আভিজাত্যের পরিচায়ক।
♦ চলিত রীতির বৈশিষ্ট্য:
১. বর্তমানে সর্বজনস্বীকৃত ভাষা;
২. এ রীতি পরিবর্তনশীল;
৩. এ রীতি তদ্ভব শব্দবহুল;
৪. ভাগীরথী নদীর তীরবর্তী মানুষের ভাষা মূলত- চলিত ভাষা;
৫. চলিত রীতি সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য;
৬. এ রীতি বক্তৃতা, আলাপ-আলোচনা ও নাট্যসংলাপের জন্য বেশি উপযোগী।
♠ বাংলা ব্যাকরণের জন্ম ইতিহাস:
১. বাংলা ভাষার বয়স হাজার বছরের বেশি। কিন্তু তার রচিত ব্যাকরণের বয়স মাত্র আড়াইশ বছর প্রায়;
২. বাংলা ব্যাকরণ প্রথম রচনা ও প্রকাশ করেন একজন পর্তুগিজ পাদ্রী ১৭৪৩ সালে। তাঁর নাম ছিল মানো এল দা আসসুম্পাসাঁও। পর্তুগালের রাজধানী লিসবন নগরীতে রোমান অক্ষরে (তখন ছাপানোর জন্য বাংলা অক্ষর ছিল না) এ ব্যাকরণ ছাপা হয়। বইটির নাম ছিল-
‘Vocabularioem idioma Bengalla em Portuguez dividio em duas partes’.
বইটিতে তখনকার দিনের ঢাকা জেলার ভাওয়াল অঞ্চলের প্রচলিত বাংলা ভাষার কিঞ্চিৎ পরিচয় রয়েছে;
৩. এরপর ১৭৭৮ সালে ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড নামে একজন ইংরেজ পণ্ডিত ইংরেজি ভাষায় ‘A Grammar of the Bengali Language’ গ্রন্থটি রচনা করেন;
৪. ১৮০১ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান উইলিয়াম কেরি ইংরেজিতে বাংলা ভাষার ওপর ব্যাকরণ লেখেন;
৫. ১৮০৫ সালে গ্রন্থটির ২য় সংস্করণ বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়ে প্রকাশ পায়। এটিই বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম বাংলা ব্যাকরণ;
৬. রাজা রামমোহন রায় প্রথম বাঙালি যিনি বাংলা ভাষায় প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। তিনিই সর্বপ্রথম বাঙালিদের মধ্যে বাংলা ব্যাকরণ রচয়িতা। তাঁর গ্রন্থটির নাম ‘গৌড়ীয় ব্যাকরণ’, প্রকাশিত হয় ১৮৩৩ সালে।
♣ বিশ্ব সাহিত্যের (বিশেষ করে গ্রিক) প্রাচীনতম শাখা নাটক;
♣ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম শাখা কাব্য;
♣ বাংলা সাহিত্যের সর্বশেষ সংযোজন/বাংলা সাহিত্যের কনিষ্ঠ সন্তান- ছোটগল্প।
ছোটগল্পের স্রষ্টা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সোনার তরী কাব্যগ্রন্থের ‘বর্ষাযাপন’ কবিতায় ছোটগল্প সম্পর্কে লিখেছেন-
“ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখ কথা
নিতান্তই সহজ সরল,
অজস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারি দু’চারিটি অশ্রুজল।
নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা
নাহি তত্ত্ব, নাহি উপদেশ।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে সাঙ্গ করি মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।”

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply