অহংকার এমন এক আবরণ যা মানুষের সকল মহত্ব আবৃত করে ফেলে৷

— জাহাবি

নিরেট

আজকের সকালটা অন্য দিনগুলোর মতো নয়। আজকের ভোর টা একটু নতুন সাজে। হ্যাঁ এরকমটা হওয়া জরুরি। কারণ এই দিনটা আমাদের জীবনের একটি বিশেষ দিনের চাইতেও বেশি কিছু। হ্যাঁ আমাদের। ওর সাথে বছর চার আগে কলেজে প্রথম দেখা। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে যাওয়া। এমন মায়াবী একজন হলে প্রেমে পড়াটা অতি স্বাভাবিক। প্রথম প্রথম one-sided হলেও খুব বেশি সময় লাগেনি মায়াবীনির হৃদয়ে স্থান করে নিতে ।

মিষ্টি মিষ্টি খুনসুটি ও ঝগড়ায় বেশ চলছিল আমাদের প্রেম অধ্যায়। দুজনে মিলে কলেজ পার করে একই ভার্সিটিতে এডমিশন নেই। মা-বাবা থেকে দূরে হোস্টেলে থাকার সুবিধার্থে চুটিয়ে প্রেম করার অনন্য সুযোগ চলে আসে। আমরাও সে সুযোগ হাতছাড়া করি নি। ওর ইচ্ছে ছিল জার্নালিস্ট হওয়ার আর আমি চাইতাম লেখক হতে। তবে আমার জীবনটাও একদিন কাব্যের ধারায় আটকে যাবে সেটা চাইতাম না। যাই হোক দুজনে মিলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম, যে নিজেরা নিজের প্রফেশনে আগে উঠে দাঁড়াবো তারপর পিতামাতাকে বলবো যে আমরা একে অপরের চির সাথী হতে চাই। তাতে অবশ্য আমাদের পরিবারের আপত্তি থাকার কথা না।

ওর সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে স্পেশাল। তবে কিছু কিছু সময়ের প্রতিচ্ছবি এখনো আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে। তেমনি একটা দিন ছিল ওর জন্মদিন।আমি ঐদিন সবকিছু ঠিক করে ও কিছু না করার অভিনয় করে বেশ হাসছিলাম। ও বারবার এমনভাবে তাকাচ্ছিলো যে ও বুঝতে পারছে না আমি কি আসলেই ভুলে গেছি নাকি অভিনয় করছি। আমিও সেয়ানা একটু বুঝতে দেইনি। তাই ও রাগ করে নিজের রুমে গিয়ে বসে ছিল। রাত তখন প্রায় বারোটা ছুঁইছুঁই। রাতে যদিও আমার বাহিরে থাকতে ভয় লাগে, তবু ভালোবাসা মানুষের জন্য তো যেতে হয়। একের পর এক ফোন কল দিচ্ছিলাম কিন্তু পাগলিটা রেগে কেটে দিচ্ছিল। ওর হোস্টেলে নিচে গিয়ে দাড়ালাম। ওর বান্ধবী কে ফোন দিয়ে বললাম বারান্দায় নিয়ে আসতে।

অনিচ্ছাসত্ত্বেও আসলো দেখে খুশি হলাম। সময় নষ্ট না করে আমিও তাড়াতাড়ি করে একটি মোমবাতিতে আগুনের শিখা প্রজ্বলিত করলাম। মোমবাতির আলোকসজ্জায় সাজানো একটা বাক্য তুলে ধরলাম। পলকে ভেসে উঠল প্রিয় বাক্যটি “শুভ জন্মদিন প্রিয়, ভালোবাসি তোমায়”। চাঁদের নিভৃত আলোতে দূর থেকে দেখতে পেলাম ও কাঁদছে। আমিও একটু ইমোশনাল হয়ে পড়ি । বারান্দা থেকে সোজা দৌড়ে নিচে এসে আঘাত করল আমার বুকে। আমিও বুকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম কিছুটা সময়। তারপর আর কি? রাগারাগি শেষ দুজনে মিলে আনন্দে সময়টা খুব কাটালাম।

এরকম অনেক মুহূর্তের সাক্ষী আমি। সেই মুহূর্ত গুলো আজও আমায় জানান দেয় , আমার প্রতি ওর ভালোবাসা টা কত গভীর। আজকের দিনটা স্পেশাল বললাম এই কারণে যে, আজ আমার সাথে ওর আবার দেখা হবে। গত দু’বছর এদিন ওর সাথে দেখা হয়েছে যেভাবে ঠিক সেভাবেই হয়তো আজকের দিনটা কেও রাঙিয়ে তুলবে। আমি ওয়েট করছি। সময়টা মনে হচ্ছে যাচ্ছে না। ওর তো লেট করার কথা নয়। এখনই তো আসার কথা। হয়তো জ্যামে আটকে গেছে। ঢাকা শহরের জ্যাম তো বিশাল ব্যাপার। ও জ্যাম থেকে একটা ঘটনা মনে পড়ল।

সেদিন ভার্সিটি থেকে দুজনে ফিরছিলাম রিকশায় করে। প্রচণ্ড তাপে তেষ্টা পেয়েছিল খুব। তাই ওকে রিক্সায় রেখে রাস্তার ওপাশে গিয়েছিলাম পানির বোতল আনতে। রাস্তার এপার হতে যাবো চলন্ত বাইকের সাথে ধাক্কা খাই। ভাগ্যিস বেশি কিছু হয়নি। শুধু একটু হাতে মাথায় আঘাত পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার চেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছিল উনি। 2 3 রাত কান্নাকাটি করে একাকার। কিছুতেই বোঝাতে পারলাম না যে এটা একটা সামান্য ঘটনা। হয়তো বিধাতা খুশি হয়ে এমন একটা সাথী দিয়েছিল আমাকে সেটাই তখন উপলব্ধি করলাম।

ঐতো ও চলে আসছে। গল্প বলতে বলতে কতটা সময় কেটে গেল টেরই পেলাম না। আসো আসো কতক্ষণ ধরে তোমার অপেক্ষায়। প্রতিবারের মতো এবারও ওর হাতে বড় একটা গোলাপের তোড়া ও চিরকুট। আমার সাথে জমানো কথাগুলো ওসব ওই চিরকুটে লিখে রাখে।জন্মদিনে আমার দেওয়া নীল শাড়িটা তো পড়ে আসবেই। এইতো তুমি চলে এলে আমার এক্কেবারে কাছে। হুম জানি এখন কি করবে?

খুব আস্তে করে গোলাপের বুকেট আমার কবরের পাশে রাখবে।তারপর চিরকুটটা খুলে আমার জন্য জমানো আপ্তবাক্য গুলো একটু একটু করে চোখের জল ছেড়ে বলবে। অনেকটা নিশ্চুপ ভঙ্গিমায় দোয়া করবে। তোমার ওই দোয়ায় তো শুধু আমি থাকি। অঝোর কান্না লুকানোর চেষ্টা তুমি ব্যর্থ হলেও আমি হাত বাড়িয়ে সে কান্না মুছে দিতে পারিনা। অল্পবয়সেই আমার ব্রেইন টিউমার সনাক্ত হয়। ডাক্তার বলেছিল, জীবনটা খুব অল্প দিনের। খুব শীঘ্রই আমাকে যেতে হবে পরপারে। চলে যাব সেটা তো জানতে তাও কেন এতোটা ভালোবাসলে? এতটা মায়ায় জরালে?

ওপার থেকেও খুঁজে ফিরি তোমার ফেলে আসা ভালোবাসাটা। তুমি তো সুখে নেই আমার জন্য তিলে তিলে মরছ প্রেম আর আমি কিছুই করতে পারছি না। আমার কাব্যের শেষটা এমন হবে সেটা তো আগে জানতাম না, আমাদের গল্পটা যদি ও লায়লা মজনুর মত ইতিহাস জয়ী হবে না কিন্তু কষ্ট বেদনা গুলো সব গল্প কে হার মানাবে। এতকিছুর ভিড়েও খোদা ওপার থেকে তোমাকে দেখার ক্ষমতা টা আমাকে দিয়ে দিয়েছে। হয়তো এটা তোমার ভালোবাসার জোর, মায়ার টান, মনের শক্তি। জানিনা আর কত সময় এভাবে কাটবে? তবে শেষটা এমনই হবে, সেটাও তুমি জানো তবু কেন আমায় ভুলতে চাও না?

অনেক হয়েছে আর কান্না নয।় এবার যাও ফিরে। চোখ দুটো আড়াল করে রেখো, আবারো তোমার সাথে দেখা পাব এই দিনটাতে ,অব্যক্ত কথাগুলো জমিয়ে রেখো চিরকুটে ,শুনব খুব মন দিয়ে। সেদিনের অপেক্ষায় থাকবো প্রিয়তমা সে দিনটার অপেক্ষায় থাকবো। 🥰

Writer: Sabbir Ahmed

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply