সমগ্র বিজ্ঞান দৈনন্দিনের একটি পরিশোধন চিন্তা ছাড়া আর কিছুই না।

— অ্যালবার্ট আইনস্টাইন

ধর্ষনফোবিয়ার প্রতিকার ও প্রতিরোধে করনীয়

বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ধর্ষন এবং যৌন হয়রানি ।প্রতিনিয়ত পত্রিকা কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চোখ বুলালে প্রায়শই ভেসে উঠে এই সম্পর্কিত প্রচুর খবর ।বর্তমানে দেশের অঘোষিত মহামারী হিসেবে এই সমস্যাটিকে অন্তর্ভুক্ত করলেও ভুল হবেনা।প্রতিনিয়ত শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধবয়স পর্যন্ত সববয়সী মানুষ কোন না কোনভাবেই যৌন হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন । মূলত,যৌন হয়রানী বা ধর্ষন বলতে আমরা বুঝি একজন পুরুষ বা নারীর অসম্মতিতে যৌন আবেদন প্রকাশ করে জোরপূর্বক যৌনচাহিদা মেটানোর নিকৃষ্ট এবং কূরুচিপুর্ন চেষ্টাকে ।কিন্ত আমাদের দেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রধানত নারীরাই যৌন হয়রানীর স্বীকার হয়ে থাকেন।বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীই যদি শতকরায় বলতে হয় তাহলে প্রায় ৮৫ শতাংশ নারী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যৌন হয়রানী বা হেনস্থার স্বীকার।সেটা পথেঘাটে ,যানবাহনে,প্রতিষ্ঠানে কিংবা বাসাবাড়ীতে ঘটছে এবং ১ বছরের নিষ্পাপ নবজাতক থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত সববয়সীর নারী্রা বিভিন্নভাবে এই হেনস্থার স্বীকার হচ্ছেন ।এই যে একটা বিরাট অংশ এইভাবে প্রতিনিয়ত এমন কুরুচীপুর্ন হেনস্থার স্বীকার হচ্ছেন একবারো কি ভেবে দেখেছেন যে ঠিক কি কারনে আজ এটি মহামারীকারধারন করেছে। আসলে ধর্ষনের কারন নিহিত করা খুবই দুরুহ একটা ব্যাপার ।তারপরও যদি ব্যাখার খাতিরে বলতে হয় তাহলে বলা যায় ,ধর্ষন বা যৌন হয়রানি একটি মানসিক বিকৃতি বা নৈতিকতার অবক্ষয়জনিত ফোবিয়া ।একজন মানুষের নৈতিকতা বা মনুষ্যত্ব যখন শূন্যের কোটায় নেমে আসে তখন তারকাছে যেকোনো অপরাধই স্বাভাবিক মনে হয় আর তখনি তারা ধর্ষননামক পৈশাচিক অপরাধ সংঘটিত করে থাকে ।যেহেতু আমাদের পুরুষতান্ত্রিকসমাজ তাই বেশীরভাগ সময়ে ধর্ষনের কারন হিসেবে মেয়েদেরকেই দোষী হিসেবে ধরা হয় ।আরেকটু স্পষ্ট করে বললে মেয়েদের পোশাকজনিতকারন,তাদের চলাফেরাজনিত কারনকেই দায়ী করা হয়।অনেকেই এটার সাথে একমতপোষন করে থাকেন।আবার অনেকে মনে করেন পুরুষদের অতিকামনাময়ী চরিত্রও এক্ষেত্রে দায়ী।আর যেখানে অধিকাংশের মতেই এমন ধারনা প্রচলিত তাই সেখানে ধর্ষনের আসল কারনটা খোজা এবং সেটা তুলে ধরাটা খুব দূরুহ যেটা আমি আগেই বলেছিলাম। তবে আমার কাছে মনে হয় ধর্ষনের মূল কারন হচ্ছে ব্যক্তিমানসিকতার বিকৃতি,পারিবারিক শিক্ষার অভাব,নৈতিকতার চরম অবক্ষয়,দৃষ্টিভঙ্গির ভুল প্রয়োগ ,বিকৃত পর্ণোগ্রাফির সহজল্ভ্যতা এবং সর্বোপরি আইনের শাসনের সঠিকভাবে প্রয়োগ না হওয়া। তাই ,ধর্ষন বা যৌন হয়রানির মতো অপরাধগুলো প্রতিরোধ ও প্রতিকার করতে এখনি সময় এসেছে সকলকে সোচ্চার হওয়া আর এরজন্য দরকার সকলের আন্তরিক সংঘবদ্ধতা। আর সর্বপ্রথম যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে আইনের সঠিক প্রয়োগ ।কেননা আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং শাস্তির বিধান কার্যকর সঠিকভাবে হলে অভিযুক্তদের শাস্তি পাওয়ার মাধ্যমে সবার কাছে এটি একটি বার্তা হিসেবে পৌছাবে যার মাধ্যমে অনেকাংশে কমতে পারে।যদিও ধর্ষনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হয়েছে।এটি অবশ্যই একটা প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে যদি এর সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়।এছাড়াও,পরিবার ,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মূল্যবোধের চর্চা সম্বলিত নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে,বিভিন্ন সামাজিক সচেতনামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে সবার মধ্যে নৈতিকতার বার্তা পৌছিয়ে দেয়ার চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে।যদি পুলিশের কাছে কোন ধর্ষনের অভিযোগ আসে তাহলে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের মাধ্যমে সর্বপ্রকার সাহায্য পুলিশকে করতে হবে এবং তাদের কার্যক্রম কতটা ফলপ্রসু হচ্ছে ,কতটা সাহায্যবান্ধব হচ্ছে তা তদারকির জন্য বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন নিশ্চিত করতে হবে।এছাড়াও,নারীদের আত্নরক্ষার প্রশিক্ষন দিয়ে নিয়মিত কর্মশালার আয়োজন করতে হবে যাতে করে নারীরা আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে এবং যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো নিজেকে তৈরি করতে পারে।এইভাবে ধাপে ধাপে কার্যকমগুলোর সঠিক প্রয়োগ করতে পারলে অচিরেই এই সমস্যা থেকে উত্তরন করা সম্ভব । পরিশেষে বলবো ধর্ম,বর্ন,গোত্র,লিঙ্গ নির্বিশেষে যদি আমরা সবাইকে সবাইকে ন্যুনতম সম্মান প্রদর্শন করে চলতে থাকি তাহলে যেকোনো সমস্যায় খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে,সবাই নিরাপদেও থাকতে পারবে আর পৃথিবী হয়ে উঠবে আরো অনেক সুন্দর।স্বপ্ন দেখতে যেহেতু কোন বাধ্যবাধকতা নেই সেহেতু আমরা দিনবদলের এই স্বপ্নগুলো দেখতেই পারি।

লেখাঃ মির্জা আল – তাহলীল লিখন

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply