The root of suffering is attachment.

— Buddha

দিনাজপুর ভ্রমন (Dinajpur)

দিনাজপুর ভ্রমন (Dinajpur) –
‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া’ এর মতোই বাংলাদেশের অনেক জেলায় পরিপূর্ন ভাবে দেখা হয় নাই। তো এবারে ভাবলাম সাধ ও সাধ্যের মাঝে যতটুকু দেখা যায়, পরিপূর্নভাবেই দেখব। তো এবারের সিরিয়ালে ছিল দিনাজপুর জেলা।
দিনাজপুর এর সব কিছু দেখতে দুই দিন যথেষ্ট। কিন্তু লোকাল বাসে গেলে সব জায়গা কাভার করা একটু কস্ট হয়ে যায়। এখানে দেখার মতো অনেককিছুই আছে, সেগুলো হলঃ
♥ কান্তজিউ মন্দির – দিনাজপুরের উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে কান্তজিউ মন্দির উল্লেখযোগ্য। একে কান্তজির মন্দির এবং কান্তননগর মন্দিরও বলা হয়। এটি উপমহাদেশের মন্দির স্থাপত্বের এক অপূর্ব নিদর্শন। কাহারোল উপজেলার কান্তননগরে এই মন্দির অবস্থিত।
দিনাজপুরের তৎকালীন মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তার মৃত্যুর পরে তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। এখানে মহাভারত আর রামায়ণের পৌরাণিক কাহিনীসমূহ পোড়ামাটির অলঙ্করণে দেয়ালের গায়ে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এখানে যাবার জন্য বাসে কাহারোল এর কান্তননগর নেমে হেঁটে বা অটোতে যেতে হবে।
♥ নয়াবাদ মসজিদ – কান্তজিউ মন্দিরের সন্নিকটেই এই মসজিদ অবস্থিত। মসজিদটির পাশ দিয়ে চলে গেছে ঢেপা নদী। প্রায় ১.১৫ বিঘা জমির উপর এই মসজিদটি তৈরি করা হয়েছে। এটি তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের রাজত্ব কালে ১৭৯৩ সালে নির্মাণ করা হয়। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটা তৈরির সময় যে সকল টেরাকেটা বা পোড়ামাটির কারুকার্য ব্যবহার করা হয়েছিল তার অধিকাশংই এখন নেই। এখানে যাবার জন্য কান্তজিউ মন্দির থেকে হেঁটে বা অটোতে নয়াবাদ যেতে হবে।
♥ হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় – ঢাকা দিনাজপুর মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত দিনাজপুরের এক উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বেশ বড় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সবুজ গাছপালার সমারোহ। এখানে আছে লাল-সাদা ইটের দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল ভবন, শহীদ মিনার, জিমনেশিয়াম, টিএসসি, ক্যান্টিন ইত্যাদি। অবকাঠামোর মধ্যে জামে মসজিদ, অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন এবং হোস্টেলসহ আরো অনেক কিছু। সবকিছু মিলিয়ে দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনা ঘুরে বেড়াতে ভালই লাগবে।
দিনাজপুর শহর থেকে কাহারোলের বাসে চড়ে এখানে যাওয়া যাবে।
♥ দীপশিখা মেটি স্কুল – দীপশিখা মেটি স্কুলের খ্যাতি ভিন্নধর্মী নির্মাণশৈলীর জন্য। স্কুলটির অবস্থান বিরল উপজেলার মঙ্গলপুর ইউনিয়নের রুদ্রাপুর গ্রামে।
অনগ্রসর রুদ্রাপুর গ্রামের শিশু-কিশোরদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তুলতে ‘দীপশিখা’ নামে এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ১৯৯৯ সালের ০১ সেপ্টেম্বর ‘মেটি স্কুল’ গড়ে তোলে।এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করানো ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কো কারিকুলার শেখানো হয়।
মেটি স্কুলের নির্মানশৈলী অত্যন্ত চমৎকার। জার্মান ও অস্ট্রিয়ার ১০ জন ছাত্র ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থানীয় ১৯ জন শ্রমিকের সমন্বয়ে এই স্কুল নির্মিত হয়েছে। এটি নির্মাণে মূলত ব্যবহার করা হয়েছে মাটি, খড়, বালি ও বাঁশ, দড়ি, খড়, কাঠ ইত্যাদি।ভিত ছাড়া অন্য কোথাও ইটের কোন ব্যবহার নেই।২০০৭ সালে মেটি স্কুলকে আগা খান অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়। দীপশিখা স্কুলটি অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। এখানে ঘুরে বেড়ালে যে কারো মন ভাল হয়ে যাবে।
এখানে যাবার জন্য রিজার্ভ অটো অথবা শহরের টেকনিক্যাল মোড় হতে বোচাগঞ্জ উপজেলাগামী বাসে চড়ে মঙ্গলপুর নেমে অটোতে মেটি স্কুল।
♥ রামসাগর – রামসাগর দিনাজপুর শহর থেকে ৮ কিমি দুরে তাজপুর গ্রামে অবস্থিত মানবসৃষ্ট সবচেয়ে বড় দিঘি। এটা এতো বড় যে আমার গাড়িতে পুরো চক্কর দিতে ৪-৫ মিনিট লেগেছে। তটভূমিসহ রামসাগরের আয়তন ৪,৩৭,৪৯২ বর্গমিটার, দৈর্ঘ্য ১,০৩১ মিটার ও প্রস্থ ৩৬৪ মিটার। গভীরতা গড়ে প্রায় ১০ মিটার।
ঐতিহাসিকদের মতে, দিনাজপুরের বিখ্যাত রাজা রামনাথ ১৭৫০-১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে এই দিঘি খনন করেছিলেন। দিঘিটি খনন করতে পনের লক্ষ শ্রমিক লেগেছিল।
এখানে এন্ট্রি ফি ২০ টাকা আর গাড়ী পার্কিং ২০০ টাকা। দিঘির চারিদিকে বসার ব্যবস্থা আছে, একটা ছোট পার্কও এখানে আছে।
♥ দিনাজপুর রাজবাড়ি – দিনাজপুর রাজবাড়ি শহরের কাছেই রাজারামপুর গ্রামে হাঁটা দুরত্বে অবস্থিত। এটি রাজবাটিকা হিসেবেও পরিচিত।
এই রাজবাড়ি রাজা দিনাজ তৈরি করেন। অনেকের মতে পঞ্চদশ শতকের প্রথমার্ধে ইলিয়াস শাহীর শাসনামলে সুপরিচিত “রাজা গণেশ” এই বাড়ির স্থপতি।
দিনাজপুর রাজবাড়ি বর্তমানে ধ্বংশপ্রায়, খুবই সামান্য অংশ অবশিষ্ট আছে। কিন্তু এটি দেখলে এর অতীত জৌলুশ উপলব্ধি করা যায়। রাজবাড়ির প্রধান অংশ বর্গাকার। এটি প্রধানত তিনটি ব্লকের সমন্বয়ে গঠিতঃ আয়না মহল, রাণি মহল ও ঠাকুরবাটি মহল। রাজবাড়ির ভূমির মোট আয়তন ১৬.৪১ একর।
♥ সুখসাগর – দিনাজপুর রাজবাড়ির কাছেই হাঁটাদুরত্বে। বেশ বড় আরেকটি দিঘি। এর পাড়ে বসার সুন্দর ব্যবস্থা আছে আর রাত্রিযাপনের জন্য দুইটি কটেজ আছে।
♥ মোহনপুর রাবার ড্যাম – আত্রাই নদীতে এই ড্যাম। এই ড্যামের ফলে দিনাজপুর সদর আর চিরিরবন্দর এলাকার কৃষক শুস্ক মৌসুমে চাষাবাদে সুফল ভোগ করতে পারে। এখানে গেলে আত্রাই নদীর সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবেন। বৃষ্টি মৌসুমে গেলে রাবার ড্যামে নেমে গোসল করতে পারবেন।
এখানে যেতে দিনাজপুর সদর হতে ফুলবাড়ির বাসে উঠে মোহনপুর নামতে হবে।
♥ ইদগাহ মাঠ – দেশের সবচেয়ে বড় ইদ জামাত এখানে হয়। শোলাকিয়াকে টপকে দিনাজপুর অল্পদিন হল এই অবস্থান দখল করেছে।
♥ সীতাকোট বিহার – এখানে যেতে দিনাজপুর শহর হতে বাসে বা ট্রেনে বিরামপুর উপজেলায় নেমে অটোতে ৫/৭ কিমি।
সিতাকোট বিহার খ্রিস্টাব্দ ৫ম-৬ষ্ঠ শতকে নির্মিত হয়েছিল বলে জানা যায়। ব্রোঞ্জনির্মিত একটি বোধিসত্ত্ব পদ্মাপাণি এবং বোধিসত্ত্ব মঞ্জুশ্রী মূর্তি সীতাকোট বিহার থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন। মূর্তি দুটির গঠনশৈলী থেকে অনুমান করা যায়, এগুলি ৭ম-৮ম শতাব্দীতে তৈরি। এই বিহারের অধিকাংশ প্রত্নসামগ্রী সংরক্ষিত আছে দিনাজপুর মিউজিয়ামে।
√ দিনাজপুরের খাবারের মধ্যে রোলেক্স বেকারির বেকারি আইটেম, রোলেক্স বিরিয়ানি হাউজের শিক কাবাব, পাবনা সুইটস আর সানন্দা-র মিষ্টি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
©️ Shafiqur Rahman(Travelers of Bangladesh (ToB))
বিঃ দ্রষ্টব্যঃ আমাদের বেশীরভাগ পর্যটন এলাকাগুলো অনেক নোংরা আর রক্ষনাবেক্ষনের অভাব দেখা যায়। এই দেশ আমার, তাই একে পরিস্কার রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply