The best and most beautiful things in the world cannot be seen or even touched — they must be felt with the heart.

— Helen Keller

একদিনে রাতারগুল ও ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর ভ্রমণ

ratargul sylhet bangladesh | bholaganj sada pathor sylhet | ratargul swamp forest

বর্তমান সময়ে অনেকেই Tob helpline জানতে চান কিভাবে একদিনে সাদাপাথর ও রাতারগুল ঘুরবেন। আজ এ বিষয় নিতে বিস্তারিত আলোচনা করব। তবে প্রথমেই মনে রাখবেন একদিনে ২টি জায়গা কাভার করার জন্য আপনাকে সকালে ৮ টার দিকে রওয়ানা দিতে হবে। যদি সময় সচেতন না হন তাহলে ভালো ভাবে দুই জায়গা কাভার করতে পারবেন না।
রাতারগুলঃ স্থানীয়দের কাছে সুন্দরবন নামে খ্যাত রাতারগুল।এটি সিলেটের গোয়াইঘাটে অবস্থিত। বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট এটি।জলমগ্ন বলে এই বনে সাঁপের আবাস বেশি, আছে জোঁকও; শুকনো মৌসুমে বেজিও দেখা যায়। এছাড়া রয়েছে বানর, গুঁইসাপ; পাখির মধ্যে আছে সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি, ঢুপি, ঘুঘু, চিল এবং বাজপাখি।
শীতকালে রাতারগুলে আসে বালিহাঁসসহ প্রচুর পরিযায়ী পাখি, আসে বিশালাকায় শকুনও। মাছের মধ্যে আছে টেংরা, খলিশা, রিটা, পাবদা, মায়া, আইড়, কালবাউশ, রুইসহ বিভিন্ন জাত। কিন্তু এই বনে একসময় দাপিয়ে বেড়ানো মেছোবাঘ, বানর, বনবিড়াল, মাছরাঙা, টিয়া, বুলবুলির কলকাকলি, নানা প্রজাতির সাপের বিচারণ এখন আর চোখে পড়েনা। মারা যাচ্ছে বনের নানা প্রজাতির গাছও।
সাদাপাথরঃ সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় সাদাপাথর অবস্থিত। রোপওয়ে, পাথরকোয়ারী, ধলাই নদী ও পাহাড় মিলে ভোলাগঞ্জ। ভোলাগঞ্জের একপাশে ভারতের মেঘালয়ের বড় বড় পাহাড় হতে বয়ে আসা ঝর্নার পানিই ধলাই নদীর মূল উতস। ধলাই নদীর উৎসে পাথরের জায়গা সাদাপাথর বা ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্ট নামে পরিচিত। সিলেটের আম্বরখানা থেকে সাদাপাথরের দূরত্ব প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। এক সময় রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে এই সামান্য জায়গা যেতে ২-৩ ঘন্টা লেগে যেত। তখন হাতে গুনা কিছু পর্যটক সেখানে যেত। সেই সময় সাদাপাথরে বড় বড় পাথর ছিল চোখে পড়ার মত। কিন্তু দিন দিন সেখানে পাথর যেন হারিয়ে যাচ্ছে। গত দুই বছর থেকে ভোলাগঞ্জের সাদাপাথরে পর্যটকদের উপস্থিত ছিল অনেক বেশি। এখানে বন্ধের দিন গুলোতে নৌকা পেতে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়।


ঢাকা থেকে সিলেট কিভাবে যাবেনঃ
রাতের ট্রেন বা বাসে করে সিলেট আসতে পারেন। ট্রেন ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে ৮:৩০ মিনিটে (বুধবার বন্ধ) ছাড়ে। ভাড়া ১ম শ্রেণি চেয়ার ৪২৫, শোভন চেয়ার ৩২০, শোভন সিট ২৬৫ ও অন্যান্য। ট্রেন সাধারণত ভোর ৫-৬ টার মধ্যে সিলেট পৌছে যায়। স্টেশন থেকে বের হয়ে লোকাল সিএনজি করে চলে আসুন আম্বরখানা। জন প্রতি ভাড়া নিবে ২০ টাকা বা রিসার্ভ সিএনজি নিতে পারেন ভাড়া নিবে ১০০ টাকা।
যদি বাসে আসেন তাহলে রাত ১০-১১ টার বাসে উঠলে ৬ টার আগে সিলেট পৌছে যাবেন। ইউনিক, শ্যামলী, এনা পরিবহনে ভাড়া পরবে ৪৭০ টাকা। সেমি লোকাল আল-মোবারক ও মামুন পরিবহনে ভাড়া ৩৫০ টাকা। কিছু লোকাল বাস আছে যেগুলোতে ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা। বাজেট ট্রাভেলার হলে লোকালে আসতে পারেন। বাস আপনাকে কদমতলী বাস স্টেশন নামিয়ে দিবে। যা রেল স্টেশনের পাশেই। এখান থেকে আম্বরখানা যেতে হবে। অনেক সময় বাস মাজার গেইট(দরগা) পর্যন্ত যায়। মাজার গেইট থেকে আম্বরখানা ২ মিনিটের রাস্তা হেটে যেতে পারবেন। তাছাড়া বাসে আসলে কদমতলী বাস স্টেশনের আগে হুমায়ুন রশিদ চত্ত্বরে নেমে যেতে পারেন।এখানে আম্বরখানার লোকাল সিএনজি পাওয়া যায় জনপ্রতি ২০ বা রিজার্ভ নিবে ১০০ টাকা। এবার দ্রুত কোন রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে ফ্রেশ হয়ে আম্বরখানা পয়েন্টে চলে আসুন।
চট্টগ্রাম থেকে সিলেট কিভাবে যাবেন:
চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস সকাল ৯ টায় ছেড়ে সন্ধ্যা ৬ টায় সিলেট পৌছায় (সোমবার বন্ধ)।
চট্টগ্রাম থেকে উদয়ন রাত ৯ঃ৪৫ টায় ছেড়ে সকাল ৬ টায় সিলেট পৌছায়(শনিবার বন্ধ)।
চট্টগ্রাম থেকে এনা, ইউনিক, সৌদিয়া , শ্যামলী ননএসি বাসে ভাড়া ৭০০ টাকা। গ্রীনলাইন এসি বাসে ভাড়া ১১০০ টাকা। সব গুলো বাস ৯-১০ টার মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসে।
সিলেট থেকে কিভাবে সাদাপাথর ও রাতারগুল যাবেন:
বিভিন্ন সংখ্যা ও ধরনের ভ্রমণকারীদের জন্য যাতায়াত ব্যবস্থাকে ৩ ভাগে ভাগ করেছি। আপনার জন্য কোনটি সুবিধাজনক তা নির্বাচন করুন।
ক) ভ্রমণকারীর সংখ্যা ৫ হলে আম্বরখানা থেকে এয়ারপোর্ট রোডে গেলেই সিএনজি পাবেন। ভোলাগঞ্জ ও রাতারগুলের জন্য সিএনজি রিজার্ভ নিবেন সারা দিনের জন্য ১২০০-১৫০০ টাকা। এই দিকের সিএনজি গুলো রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ছাড়া চলাচল করে। তাই কম টাকা রিজার্ভ করা যায়। রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে চলে যান ভোলাগঞ্জ ১০ নাম্বার ঘাটে। ঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে সাদাপাথর যেতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। নৌকায় ৮ জন বসা যায় ও ভাড়া ৮০০ টাকা নির্ধারিত। সাদাপাথর নেমে মাঝির নাম্বার রেখে দিবে। কারণ তারা সাদাপাথর নামিয়ে দিয়ে আবার ঘাটে চলে যায় নতুন যাত্রীর জন্য।তাই পরবর্তীতে ফেরার সময় ফোন দিলে নৌকা নিয়ে চলে আসবে। যদিও সাদাপাথর ইচ্ছেমতো সময় থাকতে পারবেন। কিন্তু আপনি রাতারগুল যাবেন তাই এখানে ১.৫ ঘন্টার বেশি থাকা উচিত হবে না। এবার সিএনজি নিয়ে সিলেটের দিকে ব্যাক করুন। ধুপাগুল হয়ে চলে যান রাতারগুল চৌরঙ্গী ঘাটে। এখানে ঘাট রয়েছে ৩ টি। তবে চৌরঙ্গী ঘাটে ভাড়া নির্ধারিত ৭৫০ টাকা। তবে পরিচিত থাকলে আরও কমেও পাওয়া যায়। ঘাট থেকে ডিঙি নৌকা নিয়ে রাতারগুল বনে প্রবেশ করুন। ডিঙি নৌকা গুলো ২ ঘন্টার জন্য ভাড়া দেয়া হয়। রাতারগুলে দেখার জন্য নির্ধারিত যে জায়গা আছে তার জন্য ২ ঘন্টাই যথেষ্ট। তবে ড্রাইভারের কথায় উল্টাপাল্টা ঘাটে গিয়ে জবাই হবেন না। রাতারগুল দেখা শেষ হলে সিলেটের উদ্দেশ্যে ব্যাক করুন।
খ) ভ্রমণকারী ৫ জনের অধিক হলে লেগুনা রিজার্ভ নিতে পারেন। লেগুনায় সর্বোচ্চ ১৪ জন যেতে পারবেন। লেগুনা রিজার্ভ এর জন্য কদমতলী বাস স্টেশন বা হুমায়ুন রশিদ চত্ত্বর থেকে সিলেটের প্রান কেন্দ্র বন্দর চলে আসুন।লোকাল সিএনজি জনপ্রতি ১০ টাকা। এখান থেকে সারা দিনের জন্য লেগুনা রিজার্ভ নিবে ২২০০-২৫০০ টাকা। অবশ্যই দরকষাকষি করতে হবে। ড্রাইভারকে আগে বলে নিবেন ভোলাগঞ্জ ১০ নাম্বার ঘাট ও রাতারগুলের চৌরঙ্গী ঘাট যাবেন। এই ২ জায়গার যাওয়ার বর্ণনা ও নৌকা ভাড়া উপরে আলোচনা করা আছে।
গ) আপনি যদি সলো বা বাজেট ট্রাভেলার হন তাহলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।আম্বরখানা থেকে সামান্য হেটে মজুমদারী পয়েন্টে গেলে বাস পাবেন। সাধারণ বাস ও দোতলা বাসের ভাড়া ৬০ টাকা এবং সাদাপাথর পরিবহন নামে একটি বিশেষ বাস পাওয়া যায় ভাড়া ৮০ টাকা। এই বাস গুলো আপনাকে ভোলাগঞ্জ বাজারে নামিয়ে দিবে। সেখান থেকে ইজি বাইকে জনপ্রতি ১০ টাকা করে চলে যাবেন ১০ নাম্বার ঘাটে। ভ্রমণকারীর সংখ্যা কম হলে নৌকা কার সাথে শেয়ার করতে পারেন। সাদাপাথর ঘুরে আবার চলে আসুন ভোলাগঞ্জ বাজারে। উঠে পড়ুন সিলেটগামী বাসে। হেল্পারকে বলবেন ধুপাগুল পয়েন্টে নামিয়ে দেয়ার জন্য ভাড়া নিবে ৫০ টাকা। ধুপাগুল থেকে লোকাল সিএনজি করে সাহেববাজার জনপ্রতি ২০ টাকা। সাহেববাজার থেকে লোকাল ইজি বাইকে রাতারগুল চৌরঙ্গী ঘাটে জনপ্রতি ২০ টাকা।অনেক সময় ইজি বাইক চৌরঙ্গী ঘাটে যায় না। তখন চৌরঙ্গী ঘাটের রাস্তার মুখে নেমে ১ কিলোমিটার হেটে ঘাটে যেতে হবে। আপনি যখন বাজেট ট্রাভেলার তাই কিছুটা কষ্ট করতে হবে। রাতারগুলের নৌকা ভাড়া সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা আছে। ফেরার পথে ঘাট থেকে সাহেববাজার আসবেন। সাহেববাজার থেকে আম্বরখানা লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ৩০ টাকা।
বিঃদ্রঃ
১. সিএনজি / লেগুনা ছাড়াও অন্যান্য গাড়ি রিজার্ভ করেও এই দুই জায়গায় যেতে পারেন।
২. কেউ যদি ব্যাক্তিগত গাড়ি ড্রাইভ করে আসেন তাহলেও সমস্যা নেই রাস্তার অবস্থা ভালো। তাছাড়া ভোলাগঞ্জ ১০ নাম্বার ঘাট ও রাতারগুল চৌরঙ্গী ঘাটে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে।
৩. খরচ বাচাতে ও শান্তিতে ভ্রমনের জন্য সম্ভব হলে শুক্রবার, শনিবার ও বন্ধের দিন ছাড়া আসুন। এই দিন গুলোতে পর্যটকদের সংখ্যা অনেক বেশি।
৪.পর্যটন স্থান সমূহে চিপসের প্যাকেট, বিরিয়ানীর প্যাকেট, পানির বোতল ইত্যাদি ফেলে নোংরা করা থেকে বিরত থাকুন ।

What’s your Reaction?
+1
1
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply