“Be yourself; everyone else is already taken.”

— ― Oscar Wilde

আমাদের মানবীয় সম্পর্ক এবং মানবীয় সম্পর্কের অদৃশ্য মায়া

পৃথিবীর মানবীয় সম্পর্কগুলার প্রতি আমার আস্থা এবং বিশ্বাস দিন দিন কমছে।
এখানে মানবীয় সম্পর্ক বলতে আমি শুধু প্রেম-ভালোবাসা কিংবা বন্ধুত্ব কে বুঝাচ্ছি না। আমি সমস্ত প্রকার মানবীয় সম্পর্কগুলোকে বুঝাতে চাইছি। মানবীয় সম্পর্ক আসলে কি? এই ধারণাটুকু স্পষ্ট করা দরকার।
মানবীয় সম্পর্ক বলতে একটা মানুষের সাথে অন্য এক বা একাধিক মানুষের ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে অথবা ভাবের আদান-প্রদান ছাড়াই যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয় তাকে বুঝানো হচ্ছে। তাহলে আমরা দেখতে পারছি যে মানবীয় সম্পর্ক সৃষ্টি হয় মূলত দুই ভাবে৷
১) ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে।
২) ভাবের আদান-প্রদান ছাড়া।

ভাবের আদান-প্রদান বা ভাব বিনিময় যেকোনো ভাবে হতে পারে। যেমন পনেরো মিনিটের একটা রিকশা যাত্রায় ঐ রিকশার যাত্রী এবং চালকের মধ্যে যে কথাবার্তা হয় কিংবা ভাবের আদান-প্রদান হয়,তার মাধ্যমে একটা মানবীয় সম্পর্ক গড়ে উঠে। এই মানবীয় সম্পর্কটা স্বল্পকালীন কি না তা বলা দুষ্কর। কারণ মানবীয় সম্পর্কে একটা অদৃশ্য মায়া কাজ করে। এই মায়া কি? মায়া হচ্ছে একটা অদৃশ্য বন্ধন,যা আমাদের মানবীয় সম্পর্কগুলোকে জুড়ে রাখে।
আমরা যদি এই রিকশাচালক এবং যাত্রীর উদাহারন দিয়ে বুঝাই,তাহলে এরকম বলা যায়, ঐ যাত্রীদের তাদের গন্তব্যে নামিয়ে দেয়ার পরে যদি ঐ রিকশাচালক তাৎক্ষণিক কোনো দুর্ঘটনায় মারা যায়,তাহলে রাস্তার অন্য ৮/১০টা মানুষের থেকে ঐ যাত্রীর দুঃখ-কষ্ট একটু বেশি লাগবে। যেটা কি না রাস্তার অন্য কোনো রিকশাচালক দুর্ঘটনায় মারা গেলে ঐ যাত্রীর সমান অনুভূতি হবে না। এই যে যাত্রীর অনুভূতির তারতম্য,এটা ঘটে থাকে মূলত মায়ার জন্য। অর্থাৎ ঐ রিকশাচালকের জন্য যাত্রীর একটা মায়া কাজ করেছে। আর যেহেতু মায়া কাজ করেছে তার মানে আমরা বলতে পারি যে এখানে একটা মানবীয় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে সৃষ্ট হওয়া মানবীয় সম্পর্কের আরো উদাহারন আমরা দিতে পারি,যেমন; আত্মীয়-স্বজন,বন্ধুবান্ধব,কিংবা বিভিন্ন পোষা পশুপাখির সাথেও এরকম সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে৷
এখন আমরা দুই নাম্বার,অর্থাৎ ভাবের আদান-প্রদান ছাড়া কিভাবে মানবীয় সম্পর্ক গড়ে উঠে সেইটা দেখবো। যেমন ধরা যায়,একটা ছেলের একটা মেয়েকে দেখে পছন্দ হয়েছে বা ভালো লেগেছে৷ ছেলেটা রোজ মেয়েটাকে দেখে এবং এই কাজ করতে তার ভালো লাগে৷ এই দেখা এবং ভালো লাগার মাধ্যমে মেয়েটার জন্য ছেলেটার একটা অদৃশ্য মায়া সৃষ্টি হয়েছে,কিন্তু ছেলেটা যে মেয়েটাকে দেখছে বা দেখে,সেটা ঐ মেয়েটা জানেনা। তারমানে এখানে ছেলেটার সাথে মেয়েটার ভাবের আদান-প্রদান হয় নি৷ তারপরেও ছেলেটার একটা মায়া কাজ করে। অর্থাৎ এখানে ভাবের আদান-প্রদান ছাড়াই একটা মানবীয় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে মানবীয় সম্পর্ক ২ ভাবে সৃষ্টি হতে পারে। এই সৃষ্টির প্রক্রিয়া থেকে আরো একটা বিষয় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। এখান থেকে আমরা মানবীয় সম্পর্কগুলোকে ২ ভাগে ভাগ করতে পারি।
১) দ্বিপাক্ষিক মানবীয় সম্পর্ক।
এবং ২) একপাক্ষিক মানবীয় সম্পর্ক।

ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে যে সম্পর্ক গড়ে উঠে তাকে আমরা দ্বিপাক্ষিক মানবীয় সম্পর্ক বলতে পারি। কারণ এখানে উভয় পক্ষের মাঝেই মায়া কাজ করে। আগের রিকশাচালক এবং যাত্রীর উদাহারন থেকে যদি আমরা আবার দেখি,যেমন; যদি ঐ যাত্রী রিকশা থেকে নামার পরেই মারা যায়,তাহলে রাস্তার অন্য মানুষদের থেকে ঐ রিকশাচালকের দুঃখ কষ্ট বেশি অনুভূত হবে। যেহেতু তাদের মাঝে ভাব বিনিময় হয়েছিলো এর কারেণ ঐ যাত্রীর জন্য রিকশাচালকের একটা মায়া কাজ করছে। এটা হলো দ্বিপাক্ষিক মানবীয় সম্পর্ক।

ভাবের আদান-প্রদান ছাড়া যে সম্পর্ক গড়ে উঠে তাকে আমরা একপাক্ষিক মানবীয় সম্পর্ক বলতে পারি। কারণ এখানে কেবল এক পক্ষেরই বিপরীত পক্ষের জন্য মায়া কাজ করে। আগের উদাহারনের ঐ ছেলে কথা যদি আমরা ধরি,যেমন; যদি ঐ মেয়েটা মারা যায়,তাহলে এই মৃত্যুসংবাদে ছেলেটা অপরিচিত আরো মানুষদের থেকে কষ্ট পাবে বেশি। কারণ মেয়েটার প্রতি ছেলেটার একটা একটা মায়া কাজ করে। এখন যদি ঐ ছেলেটা মারা যায়,তাহলে মেয়েটার আলাদাভাবে কোনো দুঃখবোধ হবে না,কারণ ছেলেটার প্রতি মেয়েটার কোনো মায়া কাজ করে না,কেন না সে ছেলেটার প্রতি অবগত নয় এবং কখনো তাদের ভাবের আদান-প্রদান হয় নি।

আমাদের এই মানবীয় সম্পর্কগুলোর মধ্যে হঠাৎ যেকেউ,যে কারো অপ্রিয় থেকে প্রিয় হয়ে উঠতে পারে। আবার উল্টোটাও ঘটে হরহামেশা। কেউ কেউ খুব প্রিয় থেকে অপ্রিয় হয়ে যায়। অর্থাৎ আমাদের মানবীয় সম্পর্কে যে মায়া কাজ করে সেটা নিঃশেষ হয়ে যায়। যার কারনে এরকমটা ঘটে৷ অনেক সময় আমাদের মানবীয় সম্পর্কগুলোর বিচ্ছেদ হয়ে যায় বা শেষ হয়ে যায়। এরকমটা আসলে কেন হয়? এই অদৃশ্য মায়া কেন কমে যায়?
আমরা জানি পৃথিবীর সবকিছুই ক্ষণস্থায়ী। তাহলে কি সেই যুক্তিতে আমরা বলতে পারি যে আমাদের মানবীয় সম্পর্কের অদৃশ্য মায়াগুলো ক্ষণস্থায়ী?
হয়তো তাই-ই সঠিক। ক্ষণস্থায়ী এই মায়া একসময় ফুরিয়ে যায়,যার কারনে আমাদের সুন্দর মানবীয় সম্পর্কগুলোর বিচ্ছেদ ঘটে।

সৈয়দ মোঃ সাকিব আহমদ

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply