The greatest glory in living lies not in never falling, but in rising every time we fall

— Nelson Mandela

অযোগ্য

আজ ঢাকা ভার্সিটির এমবিএ তে ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে।মিতু অনলাইনে ব্যস্ত।টেনশন হচ্ছে।তার অনেক দিনের স্বপ্ন ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া।আজকে তার স্বপ্ন পুরণ বা ভঙ্গের দিন।
মিতু ভাল ছাত্রী।এসএসসি,এইচএসসি,অনার্স এ তার রেজাল্ট ভাল ছিল।

ঢাকা ভার্সিটিতে পরীক্ষা দেয়ার পর সে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেয়।একমাস পর বিসিএস এর রেজাল্ট দিবে।তবে সেটা সে শুধুমাত্র তার বাবার অনুরোধে পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু মিতু তেমন আশাবাদী বা আগ্রহী না বিসিএস নিয়ে।
শঙ্কা আর উদ্বিগ্নতার সাথে মিতু রেজাল্ট দেখতে বসল।

মিতু অনলাইনে তার ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট বের করল।সে ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।কিন্তু রেজাল্ট দেখতে তো চোখ খুলতেই হবে।সে চোখ খুলে ল্যাপটপ স্ক্রিনের দিকে তাকাল।বুক ধুকপুক করছে।রেজাল্ট:পাস,কিন্ত মিতু চান্স পায়নি।মিতু একমুহুর্ত স্তব্ধ হয়ে রইল।

মিতুর ফ্রেন্ড আর আত্মীয়রা জানত তার ইচ্ছার কথা।তাদের বিশ্বাস ছিল সে ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পাবে।তারা সবাই রেজাল্ট এর অপেক্ষায়।মিতু আবদার করেছিল একটা পারসোনাল ল্যাপটপ এর কিন্তু মা বলেছিল ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেলে কিনে দিবে।অথচ তার সব চাওয়াই অপূর্ণ রয়ে গেল।

মিতু বাথরুমে ঢুকে অঝোরে কাঁদছে।কিভাবে সবাইকে সত্যিটা বলবে!তার ভাই তার সাথে ঝগড়ার রেশ ধরে তাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল যে ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে দেখিয়ে দিতে।অন্তু কে কিভাবে ফেস করবে মিতু?ফ্রেন্ডরা বলেছিল তাকে ট্রিট দিবে।কিন্তু কি লজ্জা!সে তো চান্স ই পায়নি!

মিতু বাথরুম থেকে বের হল।তার মা বাসায় নাই।তার ভাই এর রুমের দরজা বন্ধ।মিতু টেবিলের ড্রয়ার খুলে সার্টিফিকেট বের করল।কি লাভ হয়েছে এসএসসি এইচএসসি আর অনার্স এর রেজাল্ট ভাল করে?তার স্বপ্নই অধরা থেকে গেল।মিতুর নিজের ওপর রাগ হতে লাগল।রাগে দু:খে সে তার সার্টিফিকেট ছিড়ে কুটিকুটি করে ফেলল।

ড্রয়ারে সে কিছু ঘুমের ওষুধ খুঁজে পেল।আম্মু এই ওষুধ গুলো খেতো ঘুম না এলে।মিতুর মাথা কাজ করছে না।সে তড়িঘড়ি করে সব ওষুধ একসাথে খেয়ে ফেলল।কিছুসময় পর মিতুর প্রচণ্ড ঘুম আসছিল আর মনে হচ্ছিল সে অজ্ঞান হয়ে যাবে।সে তার ভাই এর ফোনে মেসেজ পাঠাল,”অন্তু তুই ঠিক বলেছিলি আমি আসলে গুড ফর নাথিং!”

ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছিল। অন্তু মেসেজ দেখে মিতুর রুমে দৌড়ে গেল।তার মুখ দিয়ে ফেনা বেরোচ্ছে।মেঝেতে তাকে নিথর পড়ে থাকতে দেখে অন্তু তার পালস চেক করে বুঝতে পারল তার বোন বেঁচে নাই।অন্তুর চেপে রাখা কষ্ট আর আবেগ অশ্রু হয়ে ঝরে পড়ল।”আপু আমি তোর অযোগ্য ভাই!তোকে বুঝতে পারিনাই।”

মিতুর মা হাতে নতুন ল্যাপটপ নিয়ে তার রুমে ঢুকল।মিতুর অবস্থা দেখে তার হাত থেকে ল্যাপটপ পড়ে গেল।অন্তু,মিতুর কী হল?মিসেস সালমার ফোনে তার হাসব্যান্ড কল দিচ্ছেন,অন্তু কল রিসিভ করল।”হ্যালো,মিতুর রেজাল্ট কী?”আলম সাহেব এর কথা শুনে অন্তু কেঁদে বলল,”বাবা মিতু আপু…সুইসাইড করেছে।”

একমাস পর মিতুর বিসিএস এর রেজাল্ট দিল,মিতুর ফ্রেন্ড সামিয়া মিতুর ভাই কে কল দিল।অন্তু আমি মিতুর ফ্রেন্ড,মিতু বিসিএস রেজাল্ট এ ৮৫ তম হয়েছে!অন্তু কিছু না বলে ফোন কেটে দিল।সে তার ফোনে মিতুর পুরনো ছবি দেখতে লাগল।তার চোখে পানি,মুখে হাসি।”আপু তুই জিতে গেছিস!তোর অযোগ্য ভাইটাকে মাফ করে দিস।”

Writer: Fasiha Rakshanda

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply