
আলেকজান্ডার দা গ্রেট সম্বন্ধে ঘাটতে গিয়ে বেশ কিছু গ্রীক পৌরাণিক কাহিনীর সাথে পরিচিত হলাম। তবে আজকের কাহিনীর শেষটা বেশ করুন। সারাদিন কাহিনীটা মাথায় ঘুরছে।
কাহিনীটা এমন যে একজন মা কোনো মাতাল লোকের প্ররোচনায় তার সন্তানকে নৃশংসভাবে হত্যা করলো।
কিন্তু কাহিনীটা যেহেতু পৌরাণিক, এখানে দেবদেবী থাকবে। তাদের ইন্ধন থাকবে। ফলোয়ার বাড়ানোর অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকবে (বর্তমানের ইনফ্লুয়েন্সারদের মত)। কিন্তু যদি এদের ক্ষমতাকে কেউ অস্বীকার করে, তাকে শায়েস্তা করার সব রকম কৌশল জানা আছে তাদের। কেননা কিছু দেবদেবী দুষ্টু প্রকৃতির হয়। জোর করে কিংবা ছলনার আশ্রয় নিয়ে ভক্তি আদায় করতে চায়। তাদের মধ্যে একজন দেবতা ডায়নিসাস , কিন্ত মর্ত্যলোকে সে একজন নারীরূপে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে(সে হয়তো একজন তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি,যদিও এটা স্বীকৃত নয়।কারণ তাদের দেবতা মানুষ হয়ে পৃথিবীতে আসতে পারে কিন্তু তৃতীয় লিঙ্গের কোনও ব্যাক্তিকে দেবতা হিসেবে স্বীকার করতে তারা প্রস্তুত নয়, ব্যাপারটা আমার কাছে এমনই মনে হলো)।
ডায়নিসাস আসলে কিসের দেবতা ছিল?
মদের দেবতা, মাতলামির দেবতা, আঙ্গুর, আঙ্গুরের বাগান, সব রকমের উগ্রতা, পাগলামির মতো বিষয়গুলোতে বিশেষজ্ঞ দেবতা। তার অনেক অনুসারী।
একদিন থেবেসের রাজা পেন্থিউজ তার এই মাতলামি আর বেহায়াপনা দেখে ডায়নিসাস আর তার অনুসারীদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আচার অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন তুলে, আর অপমানজনক মন্তব্য করে। ব্যাস, ডায়নিসাস ক্ষেপে যায়।
রাজা তাকে বন্দী করার আদেশ দিল। রাজাকে সে নানানরকম অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শন করে তাকে স্বীকার করে নিতে বলে। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। রাজা তার মতো মাতালকে দেবতা হিসেবে স্বীকার করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলো। রাজাকে এজন্য চরম মূল্য দিতে হয়। মাতাল দেবতা তার সকল বিদ্যা বুদ্ধি কেড়ে নেয়। রাজা তখন পাগলপ্রায়। এরপর তাকে একজন নারীতে রুপান্তর করলো। আর তার অনুসারীদের কাছে পাঠিয়ে দিলো গুপ্তচরাবৃত্তির জন্য।
পেন্থিউজ একটা গাছের ডালে বসে সকল অনুসারীদের উপর নজর রাখছিলো। ডায়নিসাস যেহেতু তার সব জ্ঞ্যানবুদ্ধি কেড়ে নিয়েছে, সে এখন খুবই বোকাসোকা সরল একজন মানুষ। দূর থেকে অনুসারীরা তাকে গাছে উঠে বসে থাকা একটা বন্যপশু মনে করে। তাকে দেখামাত্রই তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। দুঃখের বিষয় এখানে তার মা আর খালাও যুক্ত ছিলো। তারা দুজনই ডায়নিসাসের উগ্র অনুসারী। পশুকে যেভাবে জবাই করে টুকরো করে সেভাবে একজন বোকাসোকা, পাগল,অসহায় পেন্থিউজ এর শেষ পরিণতি ছিলো এমনই। অনুসারীরা তার শরীরকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মা সন্তানকে রক্ষার বদলে তাতে অংশ নেয়। মা আগেভ দেবতার আসনে ভুল ব্যাক্তিকে নির্বাচন করে সন্তানের জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনে; যখন উগ্র মাতাল দেবতাকে খুশি করতে নিজের সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করে তখন একটা কথাই মাথায় আসে। অন্ধ অনুসরণ ভয়াবহ!
আর আলেকজান্ডারকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে এই কাহিনীটা জানতে পারলাম। তিনি ছোটবেলায় বাবা ফিলিপের সাথে থিয়েটারে গিয়ে এই কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত মঞ্চনাটক দেখেছিল । ছোট আলেকজান্ডারের বয়স তখন কেবল আট।
Writer: Mysha Islam
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.