You have brains in your head. You have feet in your shoes. You can steer yourself any direction you choose

— Dr. Seuss

হারানো ভারতবর্ষ

প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেই ট্রেনে উঠতে হল। দাঁড়াবার মতো একটা পজিশনও পাচ্ছি না। ঘাড়ের উপর সবাই নিশ্বাস ফেলছে। হঠাৎ চোখে পড়ল জানালার পাশে একটা সিটে বসে আছে জ্যোতিষ। দেখামাত্র বলে উঠল, স্যার, আপনি! এই ভিড়ের মধ্যে? কোথায় যাবেন?

  হ্যাঁ জ্যোতিষ, আমি বর্ধমান যাচ্ছি একটা বিশেষ কাজে। তুমি ভালো আছ? 


     উত্তর দেওয়ার আগেই জ্যোতিষ সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। 


          বসুন স্যার, আমি ভালো আছি! 


       প্রায় হাত ধরে টেনে আমাকে বসিয়ে দিলে সিটে। 


          মোটেও ভালো ছাত্র ছিল না জ্যোতিষ। কোনওদিন পড়া করত না। ক্লাসে বেড়াল ডাকত। না বলে বেরিয়ে যেত। বেশ কয়েকবার শাস্তিও কম দিইনি ওকে। আজ তার এই ব্যবহার দেখে অবাক হলাম। 


        অনেকটা দূরের রাস্তা, ভিড়ও তেমন কমছে না। জ্যোতিষ নেমে গেছে। সামনের সিটের কমবয়সী একটা ছেলে দুই পা বাড়িয়ে দিয়েছে আমার বসা সিটের উপর। খুব অস্বস্তি বোধ হচ্ছে আমার। একটু নড়লেই ওর পায়ে ঘষটা লাগবে। 



বাবা, পা দুটো নামিয়ে নাও। 



 কেন? 



 আমাকে লাথি লাগবে যে! 


 তা লাগলেও কিছু করার নেই। এভাবে যদি না থাকতে পারেন সিট ছেড়ে দিন! 


 কেন আমার বসার অধিকার নেই? 


  না, নেই! 


  আমাকে চেনো? 


 হ্যাঁ চিনি! 


  কে আমি? 


  আপনি একজন মুসলমান! 


  সেই কারণে? 


   হ্যাঁ, তা বোঝেন না! 


   আমি কি মানুষ নই? 


   না, আপনারা সন্ত্রাসী! এভাবে না থাকতে পারলে পাকিস্তান চলে যান! 

আমি আর উত্তর দিতে পারলাম না। বর্ধমান যাবার আগেই একটা ছোট্ট স্টেশনে নেমে গেলাম। সেখানে তেমন লোকজন নেই। যাযাবর পরিবারের কতকগুলো মানুষ রান্নাবান্না করার জন্য শুকনো কাঠকুঠো জমা করে আগুন জ্বালাচ্ছে আর নিজেদের মধ্যে কী সব বলাবলি করছে। ছেলেমেয়েরা সবাই উলঙ্গ, ছুটোছুটি করে খেলে বেড়াচ্ছে। তাদের ভাষা সঠিক বুঝতে পারছি না। পাশেই পদ্মপাতায় রাখা আছে কিছু শিকার করা পশুপাখির মাংস। তবে আমাকে দেখে ওরা বেশ খুশি হয়েছে তা উপলব্ধি করতে পারছি।

গোধূলির আবছা আলোয় তাদের কাছেই খুঁজতে লাগলাম আমার হারানো ভারতবর্ষকে।

Writer: তৈমুর খান

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply