Every human being is the author of his own health or disease.

— Buddha

রুপার ডায়রী থেকে

সুন্দরী হিসেবে উনিভার্সিটিতে বেশ নাম ডাক আছে আমার।এটা ঠিক অহংকার নয়।মানুষ যেমন বলে সুন্দরী মেয়েদের অনেক অহংকার থাকে। আমি মোটেও তেমন নই।আমি সবার সাথে চলি,কথা বলি।এইতো সেদিন আমর জন্মোদিনে, ক্লাসের সবাই মিলে আমাকে একটা জলরং এর ছবি দিলো।বেশ সুন্দর কিন্তু ছবিটা।আমি আমার বেডরুমের দেয়ালে টানিয়েছি।মাঝেমাঝেই আমার শুভাকাঙ্ক্ষী রা বাসায় আসে আড্ডা দেই।আমি মোটেও অহংকারি নই।কারোন ভালোবাসার মানুষ হিসেবে আমি কেমন মানুষ ডিসার্ভ করি তা নিয়ে কখনো ভাবি নি আমি। উনিভার্সিটিতে একটা ছেলে আছে।নাম হিমু।পুরোনাম হিমালয়।জানিনা কে নাম রেখেছিলো।তবে যেই রাখুক নামটা কিন্তু অসাধারন।চরিত্রের সাথে মিলেছে খুব। ছেলেটা একটু পাগলাটে ধরনের বলা যায়।সবাই বলে ও নাকি ভবিষ্যত বলতে পারে।আমি তা বিশ্বাস করি না।বরং এমন মানুষের প্রতি বিরক্ত হই।সেই ছোটো বেলায় যখন বৈশাখি মেলায় গিয়েছিলাম।বাবার কাছে জোর আবদার করে টিয়ার মুখে ভবিষ্যত জানার চেস্টা করেছি।সেখানে বড়ো অক্ষরে লেখা ছিলো।আগামি সাত দিনে সু সংবাদ আসবে।হলো তার উল্টো, ৬ দিনের মাথায় কারেন্টের তারে হাত দিয়ে বশ বড়সর শক খেয়েছিলাম।সেই ভয় এখনো কাটে নি।তবুও হিমুর প্রতি কৌতুহল একটু বাড়ে।ক্লাসের অন্য সবার মত আমার ধারে কাছে ঘেসে না ও। জানুয়ারির ১৫ তারিখ বাংলা হয়ত মাঘমাস হবে। বেশ শিত পরছে।
উনিভার্সিটিতে পা দিয়ে লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে এগোচ্ছি।দূর থেকেই খেয়াল করলাম লাইব্রেরির বারান্দায় হিমু বসে আছে। শিতকালে সবাই রোদে বসে বাট সে কেনো ছায়ায় বসেছে বুঝতে পারছি না।হয়দো রোদ তার ভালোলাগে না,নয়তো লোকাসমাগম।তা যা হোক একবার কথা বলি।কথা প্রসংগে সে আমাকে আপনি করে সম্বধন করলো।আমি সবাইকে তুমি বললেও সে কেনো আমাকে আপনি বললো বুঝলাম না।হয়তো আমাকে বিভ্রান্ত করার চেস্টা করছে। আমি তার অসাধারন ক্ষমতার কথা জানতে চাইলাম।কি সব উদ্ভট কথা বলে যাচ্ছে।তার নাকি একটা নিজের নদী আছে,ময়ুরাক্ষী।আচ্ছা কে কবে শুনেছে মানুষের নদী থাকে।এগুলো তো উপমার কথা।আমার সাদা রং এর গাড়ির নম্বর ঢাকা ঢ -৮৭৮২.. তাতো সবাই জানে।এগুলো ফাজলামি।আমি বিশ্বাস করি না সে ভবিষ্যত জানে। পরোক্ষনেই ছেলেবেলায় আমার শক খাওয়ার কথা বললো।এই গল্পোতো আমি সবাইকে বলছি।সেও শুনেছে হয়তো কারো থেকে।তাছারাও এগুলো সবই অতিত।কিন্তু মাথা খারাপ হলো যখন সে আমার ব্যাগে থাকা টাকার কথাটা বললো।সে বললো আমার ব্যাগে ২২৭ টাকা আর কিছু খুচরো পয়সা আছে।কিন্তু না আমি তা বিশ্বাস করতে পারি না।কারন আমার ব্যাগে কতটাকা আছে আমি নিজেও জানি না।আমি চাচ্ছিলাম না গুনে দেখি।আর হিমু মিথ্যা প্রমানিত হোক। হয়তো কস্টো পাবে ও।কিন্তু ও জোরাজুরি করলো। বাহ অদ্ভুত,আমি হকচকিয়ে গেলাম।এটা সত্যি ছিলো।আমি জ্বিগেস করলাম কি ভাবে হলো এটা? মৃদু হাসি দিয়ে বললো,
আমি জানি না রুপা, কাকতালিয় ভাবে আমার কিছু কিছু কথা মিলে যায়।
হিমু বিদায় নিয়ে চলে গেলো।আমি বসে রইলাম।আরো বার দুই তিন টাকাগুলো গুনলাম।বুকটা ধুকধুক করছে।সত্যি হিমু অসাধারন।খুব তেস্টা পেয়েছে পানি খেতে হবে।লাইব্রেরির দিকে হাটা শুরু করলাম।
এরপর থেকে হিমু ফেরার কোনো খোজ খবর নেই।এক দুই দিন খোজ করেও যখন পেলাম না।ছেড়ে দিলাম।ভেবে নিলাম এমন পাগলাটে মানুষ থাকে না হুট করে আসে হারিয়ে যায়।কিন্তু কোথায় যায়? হয়তো যে যায় সেও জানে না। ইদানিং হিমুর কথা বেশ মনে পরছে।কোথায় আছে কেমন আছে।আচ্ছা ওর কাছে কি সত্যি কোনো নদী আছে।আমার খুব দেখার ইচ্ছা।মানুষের নিজের নদী যেখানে অবলিলায় নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া যায়।ওর সাথে দেখাহলে নদীটা চেয়ে নিবো। এরপর মাস তিন পরে,রাত ১০ টা বাজে।ডিনার সেরে ঘুমাতে যাবো। হঠাৎ একটা ফোন এলো।রিসিভ করতেই চেনা কন্ঠোস্বর।হ্যা এটা হিমু।তখন কেমন অনুভুতি হয়েছিলো তা লিখতে পারবো না।এক ফোটা চোখের জল গড়িয়ে পরছিলো।হয়তো এটাই ভালোবাসা।নিজের অজন্তেই একজন ভবঘুরে অসাধারন মানুষকে ভালোবেসে ফেলেছি।নাহ ওর কথার কোনো পরিবর্তন হয়নি।এতদিন ধরে নাকি মামার বাড়ি ছিলো।মানুষ এতদিন থাকে কিভাবে।তার উপর ওর বক্তব্য ওর মামারা নাকি পিশাচ শ্রেনীর।এগুলো কেমন কথা মেপে দেখিনি আমি।ভেবেও লাভ নেই কোনো কুলকিনারা করতে পারবো না।এরপরেই ও আমাকে চমকে দিয়ে বললো,তোমার কি নীল শাড়ী আছে? তাহলে শাড়ীপরে গেটে আসো।এমন আবদার হঠাৎ ও কেনো করলো তা আমি জানি না।তবে যাই করুক শাড়ী পরে একবার দেখা করে আসি।এমন একটা পাগল জুটবে কপালে ভাবি নি কখনো।একবার বাবার রুমে উকি মেরে আসলাম।নাহ জেগে নেই বাবা ঘুমচ্ছে।তখন রাত ১১ টা শাড়ীপরে গেটের সামনে দাড়িয়ে আছি।একটা কুকুর নিসঙ্গ ঘোরাঘুরি করছে।একবার ফিরে তাকালো।কয়েক সেকেন্ডর জন্য তাকিয়ে রইলো।একটু ভয় ভয় করছে।কে জানে ডাকাডাকি করে কি না।নাহ ১১:৩০ -১২ টা বেজে যায় হিমু আর আসে না।আরো ১০ মিনিট দাড়িয়ে রইলাম।দু একজন মানুষ দেখে কৌতুহলের মত চেয়ে রইলাম।কিন্তু না হিমু আসেনা।এর একটা বিহিত করতে হবে।ছেলেটাকে একটা শিক্ষা দিতে হবে পরের বার।নিরাস হয়ে শাড়ী পরেই ঘুমিয়ে গেছি।আবারো মাস খানেক হয়ে গেছে হিমুর কোনো দেখা নাই।কোনো ফোন কল নেই।আমিও জিদ করে পাল্টা ফোন করি নি।হয়তো আমাকে ছাড়া সে ভালো আছে।আজ ফুপুর বাসা থেকে আসার পথে রাস্তায় দেখেছিলাম ওকে
। সে আপন মনে হাঠছে।মুখে বিড়বিড় করছে কিছু।এত কড়া রোদে মানুষ কিভাবে হাটে জানি না আমি।সাথে বাবা না থাকলে দাড়িয়ে কিছু বলতাম।
খুব করে হিমুর কথা মনে হলো।ওর ময়ূরাক্ষী নদীতে ভেসে যেতে ইচ্ছা হয়ছিল।সেই নম্বরে ফোনো করেছিলাম।কিন্তু নিরাস হতে হলো।নম্বার টা হিমুর নয়।কোনো স্টোর থেকে ফোন করছিল।এমন পাগলামীর ভাবর্থ বুঝিনি আমি।
পরের দিন আমার নামে একটা চঠি এলো।খুব বেশি অবাক হয়নি। ঘনিষ্ঠ জনদের থেকে এমন চিঠি প্রায়ই আসে। হাতে নিয়ে বুজতে পারলাম এটা হিমুর।এক পাতা চিঠির পুরো পৃষ্ঠা জুরে একটাই বাক্য।”” রুপা তুমি কেমন আছো?””
খুব অভিমান হয়েছে আমার।ওকি জানে না।কেমন আছি আমি।বা কেমন থাকতে পারি।নাকি অপেক্ষার মর্মতা কোনোদিন ওকে ছুয়ে দেখেনি।এটা কেমন পাগলামি। কাছে পেলে হয়তো দু এক কথা শুনিয়ে দিতাম।আচ্ছা একটা চিঠি লেখা যায়।চিঠিতে ওর সমস্যার কথা জানতে চাইলাম।কিন্তু না আগের মতই চিঠির কোনো উত্তর ওপাশ থেকে আসেনি।খুব কান্না পাচ্ছে আমার।
Krishna Halder
এখন আমি ওর ময়ুরাক্ষী নদী কে উপলব্ধী করতে পারি।একটা শিতল স্রোতো ধারার নদী।নদীর পারে সবুজ প্রান্তরে অপেক্ষামান এক তরুনী।যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করছে পৃয়তমার জন্য।সে আর আমার দিকে ফিরে তাকায় না।আমি সেই শিতল স্রোতধারায় পা ভিজিয়ে চুপ করে থাকি।আমি আর হিমুর কথায় বিশ্বাস করি না। হয়তো ও আমাকে ভালোবাসে। তবে পাগলাটে ছেলেটা কখনো হয়তো ভালোবাসা বুঝে উঠতে পারে না।ও আর সেভাবে ফিরে আসে না।মাঝে মাঝে ফোন করে বলে নীল শাড়ী পরে ছাদে আসতে।কি পাগোল দেখুন।ওর কথা ভাবতে ভাবতে আমিও পাগল হয়ে গেছি হয়তো।এখনো ওর কথা ভেবে নীল শাড়ী পরি।চোখে কাজল দেই।আর কল্পনায় ময়ূরাক্ষী নদীতে পা ভিজিয়ে ছাদের কার্নিশ ধরে অপেক্ষা করি।হিমু আর আসে না।সত্যি হিমালয় কাউকে জয় করে না।হিমালয়কে মানুষের জয় করে নিতে হয়।আর আমি ব্যার্থ।।

“”((হুমায়ুন স্যারের,হিমু সমগ্র, ময়ূরাক্ষী)) এর ভাব থেকে রুপার ভাবনা কল্পনার চেস্টা মাত্র।।”””

Writer: Joy krishna Halder

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply