Wear your ego like a loose fitting garment.

— Buddha

ধুপপানিছড়া মুপ্পোছড়া আদ্যোপান্ত!

dhuppani jhorna / dhuppani waterfall tour

ঈদের ছুটিতে দুই দিনে, দেদারসে ঘুরে আসুন রাঙ্গামাটি, বিলাইছড়ির ‌‌|| ধুপপানি ছড়া, মুপ্পোছড়া ও নকাটাছড়া ঝর্না || থেকে ২২৫০ বা তারও কম টাকায়।✌
যা যা লাগবে —
১/ ন্যাশনাল আইডি কার্ড অথবা যেকোন আইডেন্টিটি কার্ডের ফটোকপি (৩টা)।
২/ ট্রেকিং সু (ভাল গ্রিপ যুক্ত) যা বর্ষায় ভাল কাজে দিবে।
৩/ ঢিলেঢালা কাপড় যা পাহাড়ি উচু নিচু রাস্তায় হাটতে সুবিধা দিবে।
৪/ ছাতা যা রোদ, বৃষ্টির হাত থেকে বাচাবে। (বিশেষ করে বোটে খুব কাজে দেয় কারন বোটের নিচে ইঞ্জিনের আওয়াজের কারনে বসা যায় নাহ। আর উপরে রোদে ছাতা খুব কাজে দেয়। তাছাড়া ছাউনির উপর থেকে লেকের চারিপাশ দেখতে দেখতে যাওয়া যায়)
৫/ অতি অবশ্যই হাটার মন থাকতে হবে। আপুদের সমস্যা হবার কথা নাহ। এই রুটে প্রচুর মেয়ে ট্রেকার ট্রেকিং করে থাকেন।
যেভাবে গিয়েছিলাম– ঠিক হল অগাস্টের ৯ তারিখ রাত্তিরেতে আমরা চার মুর্তি রওয়ানা হবো রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে। যেখানে তিনটি ঝর্না ঘুরব আর বিলাইছড়িতে লেকের পাশে রাত্রিযাপন করব। ইচ্ছাটার প্রতিফলন ঘটল সন্ধ্যায় শ্যামলী বাসের ঢাকা টু কাপ্তাই ★৫৫০ টাকার টিকিট কাটার মধ্য দিয়ে। আর বাস্তবে রুপ নিল সাড়ে দশটায় ঢাকা হতে বাস ছাড়ার মধ্য দিয়ে। অনেকদিন ঘুরা হয় নাহ তাই মনটা খুব আবেগী হইয়াছিল। যা দেখি তাই ভাল লাগে টাইপ অবস্থা। ফেনীতে ট্রাফিকের কারনে ১০ই আগস্ট আনুমানিক সকাল পৌনে দশটায় কাপ্তাই পৌছলাম। বাস থেকে নেমে কাউন্টারে ১১তারিখ রাতে ফেরার পথের বাসের টিকিট করে নেওয়া উত্তম। বাস একেবারে শেষ যে যায়গায় গিয়ে থামে ওইখানেই নেমেছি। তারপর একটু হাটলেই কাপ্তাই ঘাট( কাউকে জিজ্ঞেস করলেই পাবেন)। আগেই খোজ নিয়ে জেনে এসেছিলাম সকাল আটটা হতে কাপ্তাই থেকে বিলাইছড়ির উদ্দ্যেশ্যে লোকাল বোট ছেড়ে যায়। যার ভাড়া জনপ্রতি ★৫৫ টাকা। যেহেতু আমরা চারজন, তাই লোকাল বোট ছাড়া গতি নেই। ঘাট থেকে সোয়া দশটার ৪টা টিকিট কেটে নিলাম। এর ভিতরেই ঘাটের পাশের বাজারে নাস্তা সেরে নিলাম ডিম পরটা দিয়ে। ডিম ২০ আর পরটা ৫ টাকা করে রাখল মোট ★৩৫ টাকা। আর বোটে খাওয়ার জন্য কলা আর ঠান্ডা পানি কিনে নিলাম। যা প্রতিজনে ★২০ টাকা পড়বে। তো সময়মতই ছাড়ল বোট, পথিমধ্যে আর্মি ক্যম্পে পরিচয়ও দিলাম। লোকাল বোট হওয়ার কারনে লেকের পাশের ছোট্ট পাহাড়ি বাড়িতে যাত্রিদের উঠানামা দেখতে পেলাম। যেটাতে অতবেশী সময় নষ্ট হওয়ার ব্যাপার নেই। প্রায় দুইঘন্টা পর আমরা বিলাইছড়িতে পৌছলাম। লেকের পাশে বেশ স্বয়ংসম্পুর্ণ একটা উপজেলা বিলাইছড়ি। কারেন্ট আছে, তাই চার্জ দিতে সমস্যা নেই। আসার আগেই বিলাইছড়ির নিজাম ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। উনার কটেজ আছে আবার বিলাছড়ি থেকে ধুপপানি যাবার বোট ও উনি ঠিক করে দিবেন মোট কথা যা যা লাগবে উনি সবই ম্যানেজ করে দিতে পারবেন। খুবই অমায়িক একজন মানুষ। উনার কটেজ আগেই ফিলাপ হওয়ার কারনে, আমরা নিরিবিলি নামের একটি কটেজে উঠি। ওইখানে দুইজনের রুম তিনশ (প্রতিজন★১৫০)একজনের রুম দুইশ করে রাখে। ব্যাগ ব্যাগেজ রেখে নিজাম ভাইয়ের বলে রাখা বোট দরদাম করে ২৩০০(৮ জন হলে প্রায় ★৩০০ করে) টাকায় ঠিক করি। যা প্রথমদিন মপ্পোছড়া ও নকাটায় নিয়ে যাবে।পরদিন ধুপপানিতে নিয়ে যাবে। আপনারা চাইলে আরেকটা গ্রুপের সাথে শেয়ার করে যেতে পারেন। এই নৌকায় পনের বিশজন আরামসে যাতায়াত করতে পারবেন।
কটেজ ও নৌকা ঠিক করেই কলা বিস্কুট পানি (প্রতিজন ★৩০ টাকা) নিয়ে প্রথমদিন মুপ্পোছড়া ও নকাটা ঝরনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। বোটে আধঘন্টা গিয়ে, সেনাবাহিনী নির্ধারিত ৫০০ টাকা (৮জন হলে ★৭০টাকা) দিয়ে স্থানীয় গাইড ঠিক করে হাটা শুরু করলাম। পথে অনেকগুলা সুন্দর ছোট ছোট ঝর্না পড়ল। মুপ্পোছড়ার লোয়ার স্ট্রিমই এইগুলা। প্রায় ৪০ – ৫০ মিনিট হাটার পর দেখতে পেলাম অবলীলায় পাহাড় বেয়ে নেমে পড়ছে মপ্পোছড়ার স্বচ্ছ পানি। ঠান্ডা শীতল পানিতে আধঘন্টা গা ভিজিয়ে ফিরতে শুরু করলাম নকাটার দিকে। আসার পথে নিচে কিছুক্ষন হেটে নকাটায় নেমে খুব আয়েশ করে ঝর্নায় গা এলিয়ে শুয়ে শুয়ে ভিজলাম। ট্যুর শুরু থেকে এই পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সকল প্রতিবন্ধকতা নিমিষেই ভুলে গেলাম। সুবহানআল্লাহ!
ফিরতি ৫০ মিনিট হেটে বোটে ফিরে গেলাম। পথিমধ্যে পাহাড়ি আদিবাসীদের ছাগল বেচাকেনা দেখতে পেলাম। বোটে উঠে যখন ফিরে যাচ্ছি তখন আদিবাসিদের একেকটা গ্রাম রুপকথার গ্রামের মত মনে হচ্ছিল যাদের দূর থেকে বিলাইছড়ি, মায়ের মত আগলে রাখছিল।
সন্ধ্যায় পৌছে বিলাইছড়ি ঘাটের, ভাতের হোটেলে খাওয়া দাওয়া করলাম। ভাতের সাথে লেকের অস্থির মজার মাছ ( চাপিলা/ বাংলা/ আইর),ডাল, ভর্তা, কাচামরিচ দিয়ে বেশ সুখময়ী একটা ভোজন সেরে নিলাম যা জনপ্রতি ★১১০ টাকা করে পড়েছিল। খেতে খেতে রাত সাতটা বেজে যাওয়ায় রাতের খাবারের অর্ডার দিয়েও ভাতের ক্ষিধে না থাকায় রাতে আর খাওয়া হয় নি। খুব মিষ্টি হওয়ার কারনে সারাক্ষন কলা খেয়েছি। রাতে বিলাইছড়িটা ঘুরে বেড়িয়েছি, তেমন কিছুই নেই ভিতরে।
পরদিন ১১ই আগস্ট সকাল ৫ টায় ধুপপানির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিব তাই রাতে নিজাম ভাইকে বলে ★৭০ টাকা করে খিচুড়ি অর্ডার করে দিলাম। পরদিন ভোর ৫টায় বোটের বিপ্লব ভাইকে কল দিয়ে ঘাটে এনে কটেজ এর ভাড়া বুঝিয়ে দিয়ে, খিচুড়ি ও ব্যাগ ব্যাগেজ সবকিছু নিয়ে কটেজ ছেড়ে নৌকায় উঠে গেলাম। চাইলে আপনারা ব্যাগ কটেজ মালিকদের কাছে রেখে যেতে পারবেন। যেহেতু আমরা রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হব তাই সবকিছু নিয়ে বের হয়ে গেলাম। বোটে করে ধুপপানির পথে যেতে সেনাবাহিনীর দুটি ক্যাম্পে বোট থামিয়ে দুবার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়ে দিয়েছি। ধুপপানি যাওয়ার পথে বিলাইছড়ি থেকে উলুছড়ি দুইঘন্টার নৌপথ। ওইখান থেকে সেনবাহিনী নির্ধারিত গাইড ৫০০ টাকা আর ডিংঙি নৌকা ৩০০ টাকা। মোট ৮০০ টাকা( ৮ জন হলে জনপ্রতি ★১০০ হবে) গুনতে হবে। ডিংঙি নৌকায় ২০ মিনিট আর হাটাপথ দেড়ঘন্টায় পৌছেছিলাম ধুপ্পানি। হাটাপথে যেতে দুইটা পাহাড় উঠতে হবে আসার সময় ওই পথটাই আবার নামতে হবে। ধুপপানি ছড়ার অভিজ্ঞতা আর কি বলব বিশাল একটা ঝরনাধারা। যেই পাহাড় বেয়ে ঝর্নাটা নেমেছে সেইটা উচ্চতায় আকাশ ছুই ছুই করছে। সামনে প্রচুর পানি জমে আছে বিশাল বিশাল পাথর পাশ কাটিয়ে হেটে ঝরনার প্রান্তে যখন পৌছাবেন তখন ঠান্ডা পানির একটা বাতাস আপনার গা ও মন ভিজিয়ে দিবে 😇।
চোখে মুখে পরিপূর্ণ তৃপ্তির ছোয়া নিয়ে, বিকাল পৌনে চারটায় আমরা বিলাইছড়ি পৌছাই। ঘাটের সেই হোটেলে খাওয়া দাওয়া করে (★১১০টাকা), সাড়ে চারটার শেষ লোকাল বোটটি ধরে কাপ্তাই (★৫৫)পৌছাই। কাপ্তাই থেকে সাড়ে আটটার বাসে( ★৫৫০) ১১আগস্ট রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে, সহি সালামতে বাড়ি ফিরে যাই।
★দিয়ে প্রতিজনের টাকার হিসেব বুঝিয়েছি। মোট ২২০৫ টাকা আসছে। পানি বাবদ আরো ৪৫ টাকা খরচ দিলাম। আর ৮ জনের বেশী হলে টাকা আরো কম লাগবে…😀। আমরা চারজন গিয়েছিলাম তাই বেশী পড়েছে।

আমরা অপচনশীল কোন ময়লা যেন লেকের পানিতে না ফেলি সেদিকে খেয়াল রেখেছি। আশা করি আপনারাও সতর্ক থাকবেন।

# ঝর্নায় কোন ময়লা ফেলিনি। আশা করি আপনারাও ফেলবেন না।

ধুপপানি বৌদ্ধ ধর্মাবলাম্বীদের জন্য পবিত্র জায়গা তাই হৈচৈ থেকে বিরত থাকি। শুনেছি ঝর্নার উপরের পাহাড়ে নাকি সন্ন্যাসী ধ্যান করে থাকেন।

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply