If you don’t set goals, you can’t regret not reaching them.

— Yogi Berra

ক্রিস্পারের বিপ্লব

আমাদের প্রায় সকলের ক্ষেত্রে যেটা হয় একজন নোবেলজয়ী বিজ্ঞানীর আবিষ্কারের কথা জানতে পারি তার নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পরে| মানে যখন একজন বিজ্ঞানী তার কাজের জন্য নোবেল পুরস্কার পান ,তারপরে আমরা জানতে পারি ও উনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন? তার মানে উনি একজন অনেক বড় বিজ্ঞানী|কিন্তু এবার রসায়নে নোবেল পুরস্কারটা নিয়ে আমরা অনেকেই অনেক কিছু জানতাম| এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমগুলোতে অনেকে অনেক কথাই বলেছেন এবং পত্রিকাগুলোতেও অনেক লেখালেখি হয়েছে|
নোবেল প্রাইজ পাওয়ার আগেও হয়ত আপনারা অনেকে Crispr শব্দটা দেখেছেন, হয়তোবা শুনেছেন ,হয়ত বা অনেকেই গবেষণা করেছেন এরই মধ্যে|
অর্থাৎ এবারের রসায়নে নোবেল পাওয়ার বিষয়টা একটু হলেও পরিচিত|কিন্তু ক্রিসপার জিনিসটা আসলে কি? এবং এটা নোবেল পেয়ে গেল কেন?
খুব সহজ করে যদি বলতে হয় Crispr এমন একটা রাসায়নিক যৌগ, যেটা দিয়ে ডিএনএ এডিটিং করা যায়| ব্যাপারটা বোঝার জন্য সহজ একটা উদাহরন চিন্তা করুন, আমরা যখন কম্পিউটারে বা ফোনে কোনো কিছু লিখতে থাকি বা টাইপ করতে থাকি তখন মাঝে মাঝে আমাদের লেখায় ভুল হয়ে যায়, আর আমাদের কম্পিউটার বা ফোনের মধ্যে এই প্রযুক্তি আছে যে আমরা ভুলটা কেটে সঠিকটা লিখতে পারি| কিন্তু টাইপরাইটারে এই সুব্যাবস্থা ছিল না | এভাবে লেখার মধ্যে কোন পরিবর্তন করাকে বলা হয় এডিটিং, এটা যে শুধু ভুল সংশোধনে ই হবে তা কিন্তু না, যেকোনো ধরনের পরিবর্তন করাকেই এডিটিং বলে|
এবার চিন্তা করুন, আমাদের দেহে নীল নকশা বলে যদি কিছু থাকে তা হল ডিএনএ| ব্যাকটেরিয়া থেকে শুরু করে গাছপালা ,মানুষ, হাতি এমনকি ডাইনোসর এবং যত রকমের জীব আছে সব ধরনের জীবের গঠন বৈশিষ্ট্য এবং কার্যক্রম সংক্রান্ত প্রায় সমস্ত তথ্য যে অণুর মধ্যে লেখা থাকে তাহলে ডিএনএ| সেভাবে দেখলে ডিএনএ কিন্তু এক ধরনের ভাষাই| ডিএনএ তে চারটি অক্ষর ATGC ব্যবহার করে এই তথ্যগুলো লেখা থাকে| Crispr হচ্ছে এমন একটি রাসায়নিক যৌগ, যেটা ব্যবহার করে এই নীল নকশা তে পরিবর্তন আনা যায় বা এডিটিং করা যায়| খুব সহজে বলতে গেলে Crispr এর কাজ এটাই|
লক্ষ্য করুন এবার, রসায়নে নোবেল পুরষ্কার কিন্তু বিজ্ঞানীরা ডিএনএ এডিটিং এর জন্য পান নি বরং তারা পেয়েছেন Crispr এর জন্য| Crispr আবিষ্কারের পূর্বে ও ডিএনএ এডিটিংয়ের প্রযুক্তি ছিল, এবং Crispr আবিষ্কারের পর ও পূর্বের পদ্ধতিগুলো ক্ষেত্রবিশেষ ব্যবহৃত হয়| তাহলে প্রশ্ন হল এই Crispr এর নতুনত্ব কোথায়?
সেটা বোঝার জন্য মনে করুন কেউ আপনাকে কম্পিউটারে একটা লেখা দিয়ে বললো, এই লেখাটার অমুক বাক্যে একটা জায়গায় বানান ভুল আছে, যেটা সংশোধন করতে হবে| আপনি সেটা কিভাবে করবেন? প্রথমে আপনাকে ভুল বানান দেয়া শব্দ টা খুঁজে বের করতে হবে , এরপর আপনার কাজ হচ্ছে ভুল বানান টা কেটে সঠিক শব্দ টা লিখে দেয়া,মানে এডিটিং করা| ডিএনএ এডিটিং করার সময়ও বিজ্ঞানীদের এই দুটো কাজই করতে হয় ১) খুঁজে বের করা ও ২) কেটে ঠিক করা| ডিএনএ এক্ষেত্রে এই কেটে ঠিক করা বা মেরামত করা কাজটা কিন্তু আপেক্ষিক ভাবে অনেক সহজ| কারণ বিজ্ঞানীদের কাছে এ কাজটা করার খুব সহজ প্রযুক্তি অনেক আগে থেকেই আছে| কাজেই ডিএনএ কে কেটে মেরামত করা আসলে ডিএনএ এডিটিং এর মূল চ্যালেঞ্জ নয় ,এর মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ডিএন এর মধ্যে সংশোধনের নির্দিষ্ট জায়গাটা খুঁজে বের করা|
লক্ষ্য করুন কোষের মধ্যে কয়েক শ’ কোটি অক্ষরের ডিএনএ থাকা অস্বাভাবিক নয়| [ একজন মানুষের সম্পূর্ণ ডিএনএ এর দৈর্ঘ্য 300 কোটি অক্ষরের] এত এত ডিএনএ এর মধ্যে কোথায় কোন জায়গায় সংশোধন করতে হবে তা নির্দিষ্টভাবে খুঁজে বের করা আসলেই মাথা ব্যথার বিষয় |Crispr এই জিনিসটাই সহজ করে দিয়েছে| crispr এরমধ্যে একটা অনু আছে যেটাকে আমরা গাইড আরএনএ (gRNA )বলে থাকি| এই পথ প্রদর্শক আরএনএ এর মধ্যে নির্দিষ্ট করে লেখা থাকে ডিএনএর কোন জায়গায় গিয়ে Crispr এর এডিটিং এর কাজ করতে হবে|
এখন আপনাদের Crispr এর মজার বিষয়টা বলি| একজন গবেষক চাইলেই এই গাইড আরএনএ এর মধ্যে পরিবর্তন করে নিজের পছন্দমত তথ্য লিখে দিতে পারেন| এটা খুবই সহজে সম্ভব| কম্পিউটারের ভাষায় বললে Crispr এই গাইড আরএনএ ভাষা প্রোগ্রাম করা যায়| তার মানে গবেষক ডিএনএ-এর যেখানে চাইবেন Crispr সেখানে গিয়ে এডিটিংয়ের কাজ করবে|
আমরা আবার সেই পুরোনো উদাহরণে চলে যাই, কম্পিউটারের মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে ফাইন্ড দ্য রিপ্লেস বলে একটি ফাংশন থাকে সেখানে রিপ্লেস এর ঘরে আমরা লিখি কি পরিবর্তন করতে হবে … আর ফাইন্ড ঘরে লিখি লেখার কোথায় এই পরিবর্তনটা করতে হবে| Crispr হচ্ছে এমন এক প্রযুক্তি যা দিয়ে আমরা ডিএনএ এর মধ্যে ফাইন্ড এন্ড রিপ্লেস এর ফাংশন সহজেই ব্যবহারব করতে পারব| এত সুবিধা এর আগে কোন ডিএনএ এডিটিং প্রযুক্তিতে ছিল না| এটাই হচ্ছে Crispr এর বিপ্লব|
সোর্স: ইন্টারনেট
নাবিলা রব

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply