দিনটি ছিল- শনিবার। শনিবান বলতেই সকলের মনে ভয়ের চিহ্ন দেখা যায়। কৃষ্ণপুরের মানুষের কুসংস্কার আছে, শনিবারে যে রেললাইনে ট্রেন আগে আসে সেই ট্রেনে শয়তান পেতা আত্মারা উঠে আসে। শনিবার নামক দিনটিকে কৃষ্ণপুর বাসিন্দারা খুব মেনে চলে। সেই শনিবারের ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা আমরা জানব।
রায়গঞ্জ উপজেলার রাখাইন মা-রা জেলাই থাকত এক যুবক ছেলে। তার নাম ছিল আসিফ। ঘুরাঘুরি ও আনন্দ ফুর্তি করে জীবনের প্রায় অনেকটা বছর সে কাটিয়ে ফেলেছে। তার আরো তিন বন্ধু তাহের, নুপুর, মাধব। চারজনে মিলে বিভিন্ন বনাঞ্চলে ঘুরে বেড়াতো। তাদের এবারের যাত্রা নবী-নগরের পাহাড় দর্শন। চার বন্ধু একসাথে শলাপরামর্শ করল কিভাবে তারা নবী-নগর যাবে।
প্রথমে নুপুর বলল- আমি বা-বা মেয়ে মানুষ এতো দূরের ভ্রমণ আমার সহ্য হয় না। তোরা যা, গিয়ে আমাকে জানাইস।
মাধব বলে উঠল- তোকে ছাড়া কখন, কোথায় গেছি রে। যেতেই হবে বলে দিলাম।
মাধবের জোরাজোরিতে নুপুর শেষ পর্যন্ত রাজি হলো।
আসিফ বলল – চল আগে জানি কিভাবে যাবো।
কৃষ্ণপুর যাওয়ার পথে প্রথমে বাসে যেতে হবে ৬কিলোমিটার এরপর ট্রেণে যেতে হবে। পথের মাঝে ১০ মিনিটের হাঁটা রাস্তা তারপর নবী নগরের পাহাড়। ইচ্ছে করলে পাহাড়ে ওঠা যায়, ওঠতে সময় লাগে প্রায় ৩ঘন্টা।
আসিফ, তাহের, নুপুর ও মাধব পাহাড় দর্শনের জন্য ব্যাগ গুছানো শুরু করে দিল। বাবা – মায়ের কাছে আর্শিবাদ নিয়ে তারা পাহাড় দর্শনের জন্য রওনা হল।
প্রথমে তারা বাসে উঠে ব্যাগগুলো নিজেদের কাছে রাখল।
তাহের বলল- এবারের ভ্রমনটা অনেক বেশি রোমাঞ্চকর হবে।
আসিফ বলল- সবাই একসাথে থাকতে হবে। অনেক দুরের যাত্রা, তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
বাস থেকে নেমেই- কিছু দূর হাঁটার পর রেল স্টেশন। সেখানে আসিফ গিয়ে টিকিট কাটলো। তাহের, নুপুর ও মাধব রেলস্টেশনের বেঞ্চে বসেছিল। আসিফ টিকিট কেটে নিয়ে সবাইকে বলল ট্রেন আসতে আরও 30 মিনিট সময় লাগবে, তাই তারা আশেপাশে যদি ঘুরে আসে তবে হয়তো অনেক ভালো লাগবে। নুপুর গিয়ে চায়ের দোকানে বসল। চা, খেতে খেতে চিপস, চানাচুর কিনে নিল ইতিমধ্যে তাহের গল্প – গুজব শুরু করে দিল।
কিছুটা সময় পার হয়ে যাওয়ার পর, একটি ট্রেন আসলো তারা আস্তে আস্তে চায়ের দোকান থেকে উঠে গিয়ে রেল স্টেশনে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।
মাধব বলল- কিছুক্ষণ পর ট্রেন আসবে তাই সবাই যেন একসাথে থাকে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি ট্রেন আসল। মাধব বলল- এইতো ট্রেন এসে গেছে । চলো চলো সকলেই একসাথে ট্রেনে উঠি। ট্রেনে উঠে যাওয়ার পর, তারা জানালা দিয়ে ট্রেন এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখছিল। নুপুর সকলকে চিপস দিল।
মাধব বলল – তোর চিপস খেয়ে আজ আমাদের পেট ভরতে হবে।
নুপুর বললো- না বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে এসেছি। একটু দুপুর হোক খুদা লাগলে দিব। তাহের কোন কথা বলছিল না দেখে, আসিফ বলল -তাহের একটা গান শোনা।
তাহের – একটু মুচকি হেসে বলল, নারে অনেকদিন হয়ে গেছে গানের চর্চা নেই ।এখন গান গাইলে কাক – পক্ষী ও ট্রেনে বসে থাকতে পারবে না।
নুপুর বললো – আরে না শুনাতো, তোর গান অনেক ভালোই লাগে। তুই গান না শুনালে কাউকে আজ দুপুরের খাবার দিব না।
এ কথা শুনে সকলেই হাসা-হাসি শুরু করে দিল। ইতিমধ্যে, তাহের গান গায়তে শুরু করে দিল। গানের সাথে সাথে নুপুর খাবার বাড়তে শুরু করলো। সকলে মজা করতে করতে খাবার খেয়ে নিল। মাধব মোবাইল ফোন বের করে লুডু খেলা বাড় করতেই নুপুর রেডি হয়ে গেল। লুডু খেলে, গল্প করে তারা সময় পাড় করতে লাগল। ঘন্টা খানেক বাদে তাহেরপুর রেল স্টেশনে ট্রেন থামল।
আসিফ বলল – সকলকে নামতে হবে। সকলে রেল স্টেশনে নেমে পড়ল।
মাধব বলল- এখান থেকে দশ মিনিটে হাটা পথ।
সকলে হেটে যেতে লাগল। তাহের গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে পথ চলতে লাগল। দশ মিনিটের পথকে মনে হচ্ছিল দুই মিনিটে ভ্রমন।
অবশেষে তারা কৃষ্ণ নগরের রেলপথ পাড় করে নবীনগর পৌচ্ছাল। তারা দেখল- অপরূপ সৌন্দর্য্যের ভরা এই আকর্ষনীয় পাহাড়টি। তারা অনেক আনন্দ করল। নুপুর অনেক ছবি তুললো। তারা দু’দিন থেকে সেই পথ ধরে বাড়ি ফিরে এলো।
সমাপ্ত
Writer: Sudipta Ray