Do not look for a sanctuary in anyone except your self.

— Buddha

আলো-মানুষ

আলোমানুষ_Sarita-Mahesh-র মানুষের জন্য নিজ প্রাণ বলিদান সবাই ভুলে গেলেও এই গান ভোলেনি সে খুনের ইতিহাস

কতখানি নদী সেই মেয়ের চোখে
ছেলেটিতে ফসলের ঘ্রাণ
সে কি তুই জেনেছিস বলেছে তোকে
আমার দুয়ারে ডেকে আন।

কে বলেছে, ‘তারা নেই’?
তাহলে তো ভোর
রাত্রির বুকে থেমে যাবে!
তাহাদের হাতে সেই পরশপাথর
মৃত বাঁচা প্রাণেতে ভাসাবে।
যায় যদি যাক ভেসে সকল দুয়ার
একবার নদী হতে চাই
আমিও স্রোতের মত বলব আবার,
ভালোবাসা আসলে লড়াই!

বলো বলো পেলে তুমি কতটা মাটি
মহেশ সে ছেলেটির নামে
সে মেয়েটি সরিতা বুকের বাটি
কত ঢালে মানুষের গ্রামে!
মাটি, মানুষের কাছে কতটা গেলে
মাফিয়া ও নেতা ভয় পায়
কত ভয় মাফিয়ার বুলেটে মেলে
দুটি লাশে লেখা হয়ে যায়।
কত ভালোবাসলে লাশ হওয়া যায়
ক্ষত খুলে জেনে নিতে চাই
আমার দুয়ারে ক্ষতবিক্ষত আয়
আয় লাশ দু-হাত বাড়াই…

আয় লাশ দু-হাত বাড়াই…

আলোমানুষ_Sarita-Mahesh-র মানুষের জন্য নিজ প্রাণ বলিদান সবাই ভুলে গেলেও এই গান ভোলেনি সে খুনের ইতিহাস

২০০৩-এর অক্টোবর। আনন্দবাজারে বেরিয়েছিল খবরটা। গয়া শহর থেকে চল্লিশ কিমি দূরের এক গন্ডগ্রাম, শব্দগাঁওতে সরিতা ও মহেশকান্ত নামে পাটনার দুটি তরতাজা ছেলেমেয়ে, দুই বন্ধু, গ্রাম গড়ার সাধনায় মেতেছে। ওরা দু-বছরেরও কম সময়ে ওখানে যে কর্মকান্ড করে ফেলেছিল তা এই পোড়া দেশে অলৌকিক বললেও কম বলা হয়।
ওই গ্রামে খণ্ড খণ্ড জমির আল ভেঙে ফেলেছিল বাসিন্দারা। সেখানে তখন বিরাট একখণ্ড জমি, চাষ করে সবাই মিলে। ফসল, জমির অনুপাতে ভাগ করে নেয়। রুক্ষ ওই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম। জমিদারি আমলে খাল একটা ছিল যা বুজে গেছে। সরিতা-মহেশের নেতৃত্বে হৈ হৈ করে দূর পাহাড় থেকে চল্লিশ কিমি দীর্ঘ সেই খাল নতুন করে কেটে এনেছিল গ্রামের মানুষ। সেই সঙ্গে পুরোনো আমলের প্রায় ২০০ টি বিল সংস্কার করেছে তারা। ওই গ্রাম নয় শুধু, চারপাশের চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ গ্রামের হাজার হাজার মানুষ মেতে উঠেছিল সেই কর্মযজ্ঞে। ফসলের উৎপাদন বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ। ওই খালে জমে উঠেছিল মাছচাষ। বাসিন্দারা পশুপালনও শুরু করেছিলেন যৌথভাবে। ওই গ্রামে প্রতিটি বাড়িতে শৌচালয়, প্রতিটি মানুষ সাক্ষর, কেউ মদ-বিড়ি খায় না, রাস্তায় থুতু বা কোনো নোংরা ফেলে না, প্রতিটি শিশু স্কুলে যায়। স্কুল যাওয়ার আগে ভোরে বাচ্চারা গ্রাম ঝাঁট দেয়, তারা গাছ লাগায়, গান করে। মহেশ-সরিতার স্পর্শে বদলে যাচ্ছিল সব। আশপাশের গ্রামে আগুনের মত ছড়িয়ে পড়ছিল ওদের আদর্শ। ওরা হয়ে উঠছিল দেবতার মত জনপ্রিয়।
সেটাই কাল হল। ওদের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তায় ওখানকার নেতা, এমএলএ, মাফিয়া সবাই কেমন বেঁটে হয়ে যাচ্ছিল। জনগণ উপেক্ষা করছিল তাদের। নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছিল মানুষ। রাজনৈতিক দল বা প্রশাসনের মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধানের চেষ্টা করছিল ওরা, এমন কি খাস জমি দখল করে বাসিন্দারা ভূমিহীনদের ভেতর বিলিয়ে দিচ্ছিল এই স্বপ্নফেরিওয়ালা দুটির নেতৃত্বে। অতএব অমোঘ সত্যের মত সরিতা-মহেশের বাঁচা শেষ হয়ে গিয়েছিল। আনন্দবাজারে খবরটা বেরনোর তিন মাসের ভেতর, ২০০৪-এর ২৫ জানুয়ারী মাফিয়ারা গুলি করে হত্যা করে ওদের।

সেই অভিঘাতে, গাঢ় কান্নার ভেতর লেখা হয়েছিল এই গান। তবে এ নিছক গান নয়, সেই লড়াই, সেই স্বপ্ন, আর সেই হত্যার ইতিহাস আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখা হয়েছে এ গানের ছবিতে, কিছুটা তথ্যচিত্রের ঢং-এ। সেদিক থেকে এটাকে বরং খানিকটা ‘সাঙ্গীতিক তথ্যচিত্র’ বা Musical documentary বলা যায়।

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply