অপরুপ সৌন্দর্য হাম হাম ঝর্ণা। হাম হাম ঝর্ণার কাছে যাওয়া যতটা সহজ ভাবছেন, কাজটা কিন্তু ততটা সহজ নয়। এর গভীর জঙ্গলে রয়েছে সাপ, পোকামাকড় আর বিশেষত জোঁকের অত্যাচার সহ্য করে পথ চলতে হয়। অনেক ঝিরিপথ ও ছড়ার কাদামাটি দিয়ে পথ চলতে হয🏃
সকল বাধা পেরিয়ে আপনি যখন হাম হামের ঝর্ণার কাছে পৌছাবেন।
যতটা কষ্ট হবে হাম হাম ঝর্ণা দেখতে যাওয়ার সময়। ঠিক ততটাই কষ্ট ভুলে যাবেন হাম হাম ঝর্ণার সামনে যাওয়ার পর। প্রথমে একটু কষ্ট হলেও পরবর্তীতে ঝর্ণার পাশে বসতেই সব কষ্ট নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। ঝর্ণার আওয়াজ আপনাকে আরেকটা অদ্ভুত অনুভূতি দিবে💕
*লোকেশনঃ
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গভীরে ২০১০ সালের শেষের দিকে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মাকে সাথে নিয় একদল পর্যটক হাম হামের এই অনিন্দ্য জলপ্রপাতটি আবিষ্কার করেন। স্থানীয়দের কাছে এই ঝর্ণা চিতা ঝর্ণা হিসাবে পরিচিত, তাদের মতে এই জঙ্গলে আগে চিতা পাওয়া যেত। প্রায় ১৪০ফিট উঁচু এই ঝর্ণার বুনো সৌন্দর্য দেখার জন্যে অনেক কষ্ট স্বীকার করে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসে। শীতকালে তুলনামূলক পানি অনেক কম থাকে তাই বর্ষা কাল হাম হামের বুনো সৌন্দর্য্য দেখার উপযুক্ত সময়।
*নেটওয়ার্ক এ সমস্যা হবে📞
যাওয়া আসার পথে আপনি পুরোটাই নেটওয়ার্কের বাইরে থাকবেন। যারা এডভেঞ্চার ট্যুর পছন্দ করেন তাদের জন্য,একেবারে নেটওয়ার্ক এর বাইরে এক ভিন্ন পরিবেশ।
*যাতায়াত🚗
দেশের যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, প্রথমে আপনাকে শ্রীমঙ্গল যেতে হবে। শ্রীমঙ্গল থেকে সকাল সকাল হাম হামের জন্য রওনা দিলে ভাল হয়। প্রথমে আপনাকে কলাবন পাড়ায় যেতে হবে। শ্রীমঙ্গল থেকে কলাবন পাড়া আপ ডাউন সিএনজি ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকার মতো লাগবে, এক গাড়িতে ৫ জন যেতে পারবেন। এছাড়া যাওয়ার জন্যে আছে জীপ গাড়ি। কলাবন পাড়া পৌছে ৫০০ টাকার মধ্যে। একজন ভাল গাইড সাথে নিবেন। ভ্রমণ সঙ্গীর প্রত্যেকে বাঁশের লাঠি নিতে ভুল করবেন না, বাশের লাঠি কলাবন পাড়া পাবেন। আর অবশ্যই জোঁকের কথা মাথায় রাখবেন। কলাবন পাড়া থেকে হামহাম যাবার দুটো ট্রেইল আছে, ঝিরি পথ ও পাহাড়ি পথ। ঝিরি পথে একটু সময় বেশি লাগলেও এই পথের সৌন্দর্য পাহাড়ি পথের চেয়ে অনেক বেশি। তবে বর্ষাকালে ঝিরি পথে অনেক জোঁক থাকে। কলাবন পাড়া থেকে হামহাম যাওয়া আসা ৫-৬ ঘন্টা লাগবে। তবে পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটার অভ্যাস না থাকলে সময় আরও একটু বেশি লাগতে পারে। সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন যেন হামহাম থেকে ফিরে আসার পথেই সন্ধ্যা না হয়ে যায়।
আর সাথে করে পানি শুকনো খাবার এবং এমন কোন ছোট ব্যাগ বা পিলিতিন সাথে নেবেন যেটাতে মোবাইল এবং অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ জিনিস্পত্র রেখে দিতে পারবেন। ঝিরিপথ এবং পাহাড়ি পথে উঠতে নামতে গিয়ে বা ঝর্ণার পানিতে পরে ভিজে যেতে পারে। সাবধানে না থাকার কারনে আমার মোবাইল ঝর্ণার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। সাবধানে থাকা ভালো সাবধানের কোন মাইর নাই।
হাম হাম ঝর্ণা যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ংকর। কলাবন পাড়া থেকে হাম হাম ঝর্ণার যাওয়ার পুরো রাস্তাটি পায়ে🏃হেটে যেতে হয়, রাস্তার দুরত্ব আনুমানিক ৮কিলোমিটার, পাথর/পাহাড়/ঝর্ণার পানি রূপে যেমন আপনার চোখ আটকাবে তেমনি পিচ্ছিল পাথরে যাওয়া আসার পথে পা ফসকে বড় ধরনের বিপদে পড়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই ভালো এক জোড়া ট্র্যাকিং সু 👟পড়ে নিবেন।
*কি খাবেন🍽🍴
খিদে মেটানোর জন্য কলাবন পাড়ায় কিছু খাবার খেয়ে নিতে পারেন। এছাড়া সাথে শুকনো খাবার নিয়ে যেতে পারেন। কলাবন পাড়ায় স্থানীয় মানুষদের দেওয়া একটা ছোট হোটেল আছে। যাবার সময় খাবার অর্ডার করে গেলে ফিরে আসার পর খেয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া শ্রীমঙ্গল ফিরে এসে শহরে ভালো মানের রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে খেয়ে নিতে পারবেন।
*আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
- মাধবপুর লেক
- চা বাগান
- লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
- সাত রঙের চা – নীলকন্ঠ কেবিন
- বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট
*হামহাম ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা👇 - ট্রেকিং এর জন্যে ভালো ট্র্যাকিং সু 👟 পড়ে নিবেন।
- ব্যাকপ্যাক যত সম্ভব হালকা রাখবেন।
- সাথে পর্যাপ্ত পানি রাখবেন, প্রয়োজনে সাথে করে স্যালাইন নিতে যাবেন।
- পাহাড়ি উঁচু নিচু পথ, চলার সময় সাবধান থাকবেন।
- ফার্স্ট এইডের জন্যে যা প্রয়োজন সাথে রাখবেন।
- ঝর্ণা ও ট্রেইলে দয়া করে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।
- স্থানীয় মানুষদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করুন।
- সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন যেন হামহাম থেকে ফিরে আসার পথেই সন্ধ্যা না হয়ে যায়।
*নোটঃ
🚯প্রকৃতিকে তার মতো থাকতে দিন,দয়া করে কোথাও ঘুরতে গিয়ে ময়লা আবর্জনা ফেলে,তার সুন্দর পরিবেশটাকে নষ্ট করবেন না,ঘুরতে গিয়ে নিজের পদচিহ্ন ছাড়া কোথাও কিছু ফেলে আসবেন না,ধন্যবাদ ভালোবাসা অবিরাম।
Happy_Travelling 🏍🚗✈️🌍
পাশা ভাই(Travelers of Bangladesh (ToB))