Success is never ending, failure is never final.

— Dr. Robert Schuller

হিজলতলী মাঠ

সেদিন হিজল গাছ নিয়ে একটি অসাধারণ পাঠ্য লিপি পড়তে গিয়ে জানতে পেরেছিলাম, শালিক পাখির হলুদ রঙের দু’খানা পা এবং খয়েরী ডানায় ভর করে চলার কথা। জানতে পেরেছিলাম শালিক পাখির হিজল গাছের প্রতি আসক্তির কথা। পশু, পাখিদের গাছের প্রতি আসক্তি আছে তা’ গল্পের ভাবার্থক না বুঝতে পাড়লে হয়তো আজ গল্পটি লেখার সাহস পেতাম না।
দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। আগের দিনে শুনেছি রাখাল বালকেরা মাঠে গরু চড়াতে যেত। তবে ২০২০ সালের লক ডাউনর এ- করুন সময়কে বা যাবে মাঠে গরু চড়াতে। পাড়া প্রতিবেশী সকলেই মধ্যবিত্ত, বড়লোক হয়ে গেছে। তবুও,
☞আলিম মিয়া নামে এক মধ্যবিত্ত বাঙ্গালি ছিল।
☞ বয়স প্রায় পয়তাল্লিশ কি পঞ্চাশ হবে হয়তো।
☞তার চার পুত্র এবং দুই কণ্যা ছিল।
☞তার স্ত্রী আম্র ভানু। তিনি সহজ, সরল ও সত্যনিষ্ঠ ধর্মপরায়ন মানুষ।
◑ আলিম মিয়া পাশের দূর গায়ে বাস করতেন। আমাদের প্রায় তিনবেলায় সেই গায়ে যাতায়াত ছিল। আলিম মিয়াকে দেখতাম প্রতিদিন হিজল গাছের কাছে গরু রেখে, সারাটা দিন হিজল গাছের নিচে শুয়ে থাকতেন।
হিজল গাছের নিচে ঠান্ডা বাতাসের কারণে প্রাণ জুড়িয়ে যেত। আশে পাশে অবাধ বিচরণ ছিল পাখিদের। গাছের সবুজ পাতার ভিতর চিকচিকে কালো রঙের দোয়েল পাখি লাফালাফি করছিল। আলিম মিয়াকে দেখতাম কখনো-সখনো উঠে একটু দূরে গাভীটিকে রেখে আবার গভীর নিদ্রা যাপন করত। তাকে দেখলেই মনে হয়> < ঈশ্বর তার জন্যই এই একটি কাজ তৈরি করে রেখেছেন।
◑ সেদিন দুপুর নাগাদ আমি, আলিফ ও মীরা সেই গায়ে ঘুরতে গিয়ে ছিলাম। হালকা মৃদু বাতাস কানের পাশ দিয়ে শু শু করে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কাছেই তিনটি হিজল গাছ ছিল। একটির পর একটি সারিবদ্ধভাবে সাজানো ছিল। তিনটি হিজল গাছের রূপ দেখেই মনে হবে রাতের বেলায় হিজল গাছ গুলোতে প্রবল নৃত্য হয়। হিজল গাছ তিনটির সঠিক কোনো মাথা আমি দেখতে পাই নি। তবে ডালপালা অনেকটা বাকানো ও ছড়ানো। পাখিদের অবাধ্য বিচরণ ছিল তাতো বুঝায় যায়।
হিজলতলী মাঠে গিয়ে আলিম মিয়ার সাথে দেখা। আলিম মিয়ার জন্য তার স্ত্রী আম্র ভানু দুপুরের খাবার নিয়ে এসেছে। আমাকে দেখেই আলিম মিয়া ডাক দিল। হিজল গাছটির নিচে মৃদু বাতাসে আলিম মিয়ার পাশে বসে তাদের খাওয়া দেখছিলাম। হিজলতলীর মাঠটি ছিল বিশালাকার। হিজল গাছের নিচে বসে যতদূর চোখ যায় শুধু মাঠ দেখতে পাচ্ছিলাম। আলিম মিয়া একজন রসিক মানুষ। তার মুখভর্তি বড় বড় গোফ ও দাড়ি ছিল। খাওয়া – দাওয়া চলা কালীন সময় ; তিনি আমার সাথে অনেক মজার মজার কথা বলছিলেন। তার কথা গুলো আমি ও মীরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুনতে লাগলাম। আমাদের মনে হয়, তার মতো রসিক মানুষ আর একজনও হয় না। তার স্ত্রী আম্র ভানু আমাদের তাদের সাথে খাওয়া নিমন্ত্রণ জানালেন। বললেন, আগামীকাল পৌষ সক্রান্তি। সেই উপলক্ষে তিনি আগামীকাল খুব ভোবে চিতই পিঠা, পুলি পিঠা ও মিষ্টি তৈরি করবেন। আমার সকল বন্ধুকে নিয়ে আসার কথা বললেন। আমি বললাম, যদি এই খাওয়া দাওয়ার অানন্দটা হিজলতলীর মাঠে হয় তবে কেমন হবে? তিনি রাজি হয়ে গেলেন।
◑ পরের দিন, কাক ভোরে উঠে আমি, আলিফ ও মীরা তিন জনে চলে গেলাম হিজলতলীর মাঠে। দেখলাম সেখানে মাটির চুলায় বানানো হচ্ছে চিতয় পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা ও ভাপা পিঠা। মীরা আম্র ভানুকে সাহায্য করতে চলে গেল। আমি ও আলিফ চলে গেলাম আলিম মিয়ার সাথে গল্প করতে।
~ কিছুক্ষণ পর- মীরা চিতই পিঠা, পাটিসাপটা ও ভাপা পিঠা এনে আমাদের দিল। মীরাকে নিয়ে এক সাথে বসে হিজলতলীর মাঠে বসে পিঠা খেলাম। সকলেই হাসি- তামাশায় ভরিয়ে দিলাম হিজলতলীর মাঠ। ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল হিজলতলীরা মাঠ। দুপুরের দিকে সকলে আনন্দ করে বাড়িতে ফিরে এলাম।
সমাপ্ত

সুদীপ্ত রায়
What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply