Be a lamp, or a lifeboat or a ladder. Help someone’s soul heal.

পহেলা ফাল্গুন

ভালোবাসা”আমার কাছে শুধু একটা শব্দ ই ছিল। হঠাৎ এই শব্দ টাই একটা বড় সত্যি তে পরিণত হলো,যখন‌ না জেনে এই শব্দে আবদ্ধ হয়ে গেলাম। দুটো অচেনা মানুষ যাদের মধ্যে ৫৬০কি.মি. দূরত্ব । দূরত্ব টা শূধু পথের মনের নয়।
আমাদের পরিচয়: কবরস্থানে বসে আছি (আমার প্রিয় জায়গা) হঠাৎ একটা লাস দাফন করা হয়, কিন্তু সাথে শুধু চারজন লোক। দাফন সম্পন্ন,কবর দেওয়ার পর সবাই চলে গেল কিন্তু ওই ছেলেটা বসে রইল । দুপুর গড়িয়ে বিকেল এতক্ষন ছেলেটা একটা কথা ও বলেনি , শুধু কেঁদেছে ।হঠাৎ সে আমার পাশে এসে বসল। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার কী কোনো প্রিয় মানুষ এখানে আছে কি?? এতক্ষন পর উনাকে একটু অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। আমি কিছুই বললাম না। উনি বলতে শুরু করলেন ঐ যে ঐ কবরে তাকে রেখে এলাম উনি বড্ড একা উনি ঐ রাস্তায় বসে থাকতেন, আর আমি যখন মেডিকেলে যেতাম তখন খাবার দিয়ে যেতাম । উনি আজ চলে গেলেন।আর কেউ এই পথে আমার জন্যদুটো কাঠগোলাপ নিয়ে অপেক্ষা করবে না। সেদিন অনেক দিন পর কোন জানিনা চোখে জল চলে এল। আমি কিছুই বলতে পারলাম না। সন্ধ্যা হয়ে গেল। আমি চলে এলাম। আমি বান্দরবান যেকদিন ছিলাম প্রায়ই দেখা হতো । থানচি যাওয়ার পথে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে যায় (এলার্জির কারণে), আমাকে মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। আবার দেখা হয় নব ডাক্তার এর সাথে। কিছুক্ষণ পর আমি কিছুটা সুস্থ হয়‌ ,নব ডাক্তার সাহেব এলেন। আমি খুব বিরক্ত করেছিলাম উনাকে, তাকিয়ে ই ছিলাম, বুঝতে পারছিলাম উনি বিরক্ত হচ্ছেন কিন্তু আমার বেশ ভালো লাগছিলো। হঠাৎ উনি আমার সামনে এসে বসলেন। আমি একটু ইতস্তত বোধ করছিলাম। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমার নাম কি? আমি বললাম ,”রোদেলার এখন নাম বলতে ইচ্ছে করছে না”। উনি বললেন ,”জি আবিরের একটু অস্বাভাবিক লাগছে রোদেলার তাকিয়ে থাকায়”। কিছুক্ষণ পর আমি দেখলাম উনি আমার মামাকে কিছু বললেন‌। তারপর আমি বাড়ি ফিরে এলাম।ঢাকায় ফিরে আসবার আগের দিন, আমি ঐ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম মানে অপেক্ষা করছিলাম হাতে কাঠগোলাপ নিয়ে কিন্তু উনি এলেন না। ঠিক তার পরের দিনই আমাকে ঢাকায় ফিরতে হবে, আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কেন অপেক্ষা করছিলাম কেন কাঁদছিলাম ?? তারপর কবরস্থানে ঐ কবরের পাশে বসে রইলাম যেখানে আমাদের প্রথম দেখা। হঠাৎ করেই উনি এলেন আমি আগের মতই চুপ করে বসে আছি।আজ উনি বললেন আপনি আমার জন্য অপেক্ষা করছিলেন? ফুলগুলো দেবেন না? আমি অবাক হলাম। হঠাৎ দেখি আমার হাতের ফুল গুলো উনার হাতে। আমি বললাম, “রোদেলা কাল ফিরে যাচ্ছে”। উনি বললেন,”ভালো থাকবেন”। বাড়ি ফিরলাম, বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছে, খুব কষ্ট হচ্ছিল। মামনি ব্যাগ গুছিয়ে দিয়ে বলল , “খুব তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে। “কেন মামনি ঐ কথাটা বলল বুঝতে পারছিলাম না। সকাল এ বাবা গাড়িতে ব্যাগ রাখছে,মামা জিনিস এগিয়ে দিচ্ছে,সব জায়গায় কেমন যেন আনন্দের ছাপ । কিন্তু আমার কোনো আনন্দ হচ্ছে না, ইচ্ছে করছিল ছুটে যায়, একবার জিজ্ঞেস করি সত্যি কি ভালো থাকব? মনে হচ্ছিল এই বুঝি উনি আসবে, আমার যাওয়াটা আটকে দেবেন। কিন্তু উনি এলেন না। আমি ফিরে এলাম ঢাকায় । প্রতিদিন ভাবতাম আজ উনি আসবেন। দেখতে দেখতে ১০ দিন হয়ে গেল,ক্লাস ভালো লাগছিলো না। আমার জিবনের সবচেয়ে খারাপ ১০দিন ছিল ঐ দিন গুলো। মেডিকেলে যেদিন ভর্তি ছিলাম উনার ফোন নাম্বার টা জোগাড় করেছিলাম। অনেক বার ফোন ও করেছিলাম, উনি ফোন ধরেননি।১০ দিন এর মধ্যে ১০ তম দিন টি ছিল সবচেয়ে খারাপ দিন।বড়ি থেকে আমার বিয়ে ঠিক করে। তারপর ভাবলাম এইবার উনাকে বলতেই হবে। অনেক মেসেজ পাঠালাম কিন্তু উনি কোনো রিপ্লাই দিলেন না। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলিয়ে ফেললাম। মেসেজ আর ফোন করতে করতে পাহাড় জমিয়ে ফেললাম কিন্তু কোনো কিছুই হলো না। বুঝতে পারলাম আমার ভালোবাসা টা উনি বোঝেন নি। আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আত্নীয় স্বজন আসতে শুরু করল ।মামা এলেন, আমি কিছু না ভেবেই মামনি কে জিজ্ঞেস করে ফেললাম,”নব ডাক্তার??”মামনি আমাকে কিছু বললেন না, আমি কাঁদতে থাকলাম। বিয়ের দিন সকালে আমার কাছে ফোন এলো, “আবির রোদেলা কে ভালোবাসে”। আমার আর কিছুই বুঝতে বাকি থাকল না। একদিকে পরিবারের সম্মান, একদিকে ভালোবাসা । আমি কোনো কথাই বলতে পারছিলাম না। উনি বললেন,” আমি জানি আমার ই ভুল এতদিন সময় নিয়ে ফেলেছি এই কথাটা বুঝতে।আজ অনেক দেরি হয়ে গেছে। ভালো থেকো রোদেলা, অনেক শুভকামনা রইল।”আমার খুব রাগ হচ্ছিল। ঐদিন আমি চুপ থাকতে পারিনি। আমি বললাম,”রোদেলা আপনাকে এত ফোন করল , মেসেজ দিল ,যদি একবার ফোন টা ধরতেন , মেসেজ গুলো পরতেন, তাহলে আজ আমাদের এইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো না। ভালো থাকবেন।আর যাকে ভালোবাসেন তাকে আগলে রাখতে শিখুন।ওও মাফ করবেন, আপনি তো ভালোবাসা ই বোঝেন না।”উনি কিছু বললেন না। আমি ফোন টা রেখে দিলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি মামনি দাঁড়িয়ে আছে। আমার কান্না আরও বেড়ে গেল। মামনি আমাকে নিচে নিয়ে গেল । নিচে গিয়ে দেখি বাবা মা আর বাড়ির সবাই বসে আছে(গম্ভীর পরিবেশ),আর সাথে নব ডাক্তর ও। থমকে গেলাম, কি হচ্ছে এসব।সবার সামনে আমার হাত ধরে উনি আমার বাবার সামনে গিয়ে বললেন,”আবির রোদেলা কে ভালোবাসে,আর আবির রোদেলা কেই বিয়ে করবে।” আমি এই পরিস্থিতির জন্য একটুও প্রস্তুত ছিলাম না। বাবা হঠাৎ হাসতে লাগল। আমি আরও ভয় পেয়ে গেলাম।বাবা বললেন,”বিয়ে তো আরও কত আগে ই ঠিক, নতুন করে আর কি রোদেলা কে বোঝাতে হবে?”তারপর বুঝতে পারলাম ঐদিন মেডিকেলে নব ডাক্তার কি এমন বলেছিলেন মামাকে…
অতঃপর…
আবির জিজ্ঞেস করল,”আজ কি বলবেন কি নাম আপনার??”
আমি বললাম,”রোদেলার এখন নাম বলতে ইচ্ছে করছে না…..”
আবির কখনো ই রোদেলা কে ভালোবাসে নি।নিছক গল্পেও কখনো কখনো ভালবাসা পরিপূর্ণতা পায়….

Writer: Jannatul Fahria Jaman Shoshi

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply