Patience is the key to joy.

তাৎক্ষনিক স্নেহ

ঢাকা শহর খুব একটা পছন্দ না আমার। কিন্তু কাজের জন্য থাকা হয়। যখনই ছুটি পাই নিজ গ্রামের দিকে চলে যাই। সেটা একদিনের জন্য হোক অথবা এক সপ্তাহ। এই মাসে ছুটি পেলাম ৫ দিনের।দেরি না করে গ্রামে চলে এলাম।প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে নিজের ইচ্ছা মতো উঠলেও সকাল ১০ টার থেকে বেশি সময় ঘুমাতাম না। মা নিজে নাস্তা বানিয়ে দিতেন,সেই নাস্তা খেয়ে মানিব্যাগ আর মোবাইল হাতে বাসা থেকে বের হতাম।
আমার গ্রামের বাড়িটা মেইন রাস্তার থেকে একট ভেতরে, একটা চওড়া ব্রিজ দিয়ে মেইন রাস্তার সাতে যুক্ত ছিলো আমার ও আমার প্রতিবেশী বাড়ি গুলো।
ছুটির ২য় দিন নাস্তা খেয়ে বের হলাম,উদ্দেশ্য ছিলো নাস্তা শেষে মোড়ের দোকানে বসে চা খাব আর সাথে একটা বেনসন,আর বসে বসে এলাকার মাতব্বর দের আলাপ শুনবো। আমি যখন ব্রিজের মাজ বরাবর তখন দেখলাম ব্রিজের শেষ প্রান্তে একজন বয়স্ক মহিলা একটা হাত পাখা নিয়ে বসে আছে। আমি তাকে দেখে সালাম দিলাম,,,
আসসালামু আলাইকুম চাচি,
ওয়ালাইকুমাসসালাম,বাবা ভালো আছো?
জি আলহামদুলিল্লাহ চাচি।
তোমারে তো চিনতে পারলাম না বাবা,বাড়ি কোনডা তোমার,,?
চাচি আমি মাতবর বাড়ির ছেলে,ঢাকা তে চাকরি করি তো তাই বেশি দেখেন নাই আমাকে।
অ,,,তুমি তাইলে আমির মাতবরের পোলা,,,সেই পিচ্চি কালে একবার দেখছিলাম তারপর আর দেখা হয় নাই।ভালো থাইকো বাবা।
আচ্চা, দুয়া কইরেন।
এই কথা বলে চলে আসলাম।
‌সেদিন বিকেলেও অই চাচির সাথে দেখা,সেই ব্রিজেই।চাচির সাথে বসে কথা বল্লাম।সে বেশ কিছুদিন এলাকায় ছিলো না।কাজের জন্য অন্য এলাকায় থাকতে হয়েছে।এখন তার ছেলে আর ছেলের বউ তাকে নিয়ে আবার গ্রাম এ থাকা শুরু করেছে।তার ছেলে ইজিবাইক চালায়।আর ছেলের বউ ঘর সামলায়।নিজের ছেলে আর ছেলের বউ এর অনেক প্রশংসা করেলন তিনি,দুজনেই অনেক খেয়াল রাখে তার।সে বিকেলে বা সকালে এই খানে আসেন একটু হাওয়া খাওয়ার জন্য।
‌সন্ধা সন্ধা ভাব দেখে সেদিনের মত বিদায় নিয়ে উঠে পরলাম।চাচি মাথা হাতিয়ে অনেক দুয়া করে দিলেন।
‌আর মাত্র ৩ দিন ছুটি বাকি ছিলো, কিছু পুরাতন বন্ধুদের সাথে এলাকার আসে পাসে ঘুরতে যেতাম। প্রতিদিন ই সকালে হোক আর বিকেলে চাচির সাথে একবার হলেও দেখা হত।
‌আমার ছুটির শেষ দিন,সকালে চাচি কে দেখলাম না।ভাবলাম বিকেলে হয়তো আসবেন।বিকেলেও চাচির দেখা পেলাম না।ভেতর থেকে কেমন জেন খারাপ লেগে উঠলো, ভাবছিলাম ঢাকা জাওয়ার আগে চাচির সাথে দেখা করে যাবো।
‌চাচির বাড়ি আমি চিনতাম।কি ভেবে চলে গেলাম।বারিতে শুধু চাচির ছেলের বউ ছিলো, তার কাছ থেকে জানতে পারলাম সকালে চাচির শরীর খারাপ হয়েছিল, তাই তাকে জেলা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।খবর টা শুনে আর দেরি করলাম না, একটা রিকশা নিয়ে হাসপাতালের দিকে যেতে লাগলাম।মনে মনে ভাবলাম গরিব মানুষ তারা,তাকে দেখে আসি আর কিছু সাহায্য করে আসি।
‌রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম,ঢুক্তেই চোখে পড়ল একটা স্ট্রেচার, ততে একটি লাশ,আর তার পাসেই চাচির ছেলে দারিয়ে মাথায় হাত দিয়ে অঝরে কেদে যাচ্ছে,আমি শুধু নিস্তব্ধ দারিয়ে রইলাম,,,,
‌পরের দিন সকালে চাচির দাফন সম্পন্ন হলো,, আমি শুরু থেকে শেষ অবধি ছিলাম।

‌বিকেলে যখন ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হলাম তখন ব্রিজে দাঁড়িয়ে রইলাম,এইতো এখানেই চাচি আমার সাথে কথা বলতেন, মাথা হাতিয়ে দুয়া করে দিতেন,হাতে একটা হাতপাখা নিয়ে বাতাস করতেন।আজ ব্রিজ টা আছে কিন্তু চাচি নেই, সেই হাসি মুখের কথা গুলো নেই,এই কথা ভাবতেই চোখ ঝাপসা হয়ে গেল,,,,,
‌ঠিক মত চিনতাম না যাকে তাকেই আজ কতটা আপন মনে হচ্ছে,,, তার সেই তাৎক্ষনিক স্নেহ অন্য রকম যায়গা করে নিয়েছে আমার মনে,,,,,

Writer: Abir

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply