You will face many defeats in life, but never let yourself be defeated.

— Maya Angelou

কাহিনী সংক্ষেপ:মিজারি,স্টিফেন কিং

কাহিনী সংক্ষেপ:মিজারি,স্টিফেন কিং

পল শেলডন একজন আমেরিকান বেস্ট সেলিং রোমান্টিক সিরিজ উপন্যাস এর লেখক। উপন্যাসের নায়িকার নাম মিজারি চেসটাইন। সিরিজের শেষ বই “মিজারিস চাইল্ড” লেখক পল এই সিরিজ উপন্যাসের কাজ সমাপ্ত করেন।রোমান্টিক উপন্যাস লিখে সাফল্য অর্জন করলেও তিনি পল তার লেখনীর স্বাদ বদলাতে চায়। সে অপরাধ বিষয়ক একদমই নতুন একটি উপন্যাস লেখার সিদ্ধান্ত নেন। উপন্যাসের নাম দেন “ফাস্ট কারজ”। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। অতিরিক্ত মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর কারণে পল গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে গুরুতর জখম হয় এরপর একের পর এক যে ঘটনা তার জীবনে ঘটতে থাকে তা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক এবং সেগুলোর জন্য তিনি প্রস্তুত ছিল না। একজন নারী তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে আশ্রয় দেয়।একপর্যায়ে তার এর জ্ঞান ফিরে আসে এবং নিজেকে তিনি একটি অপরিচিত বাড়িতে আবিষ্কার করে। চোখ মেলে দেখে তার পাশে বসা একজন নারী। তার নাম অ্যানি উইলকিস। পেশায় তিনি একজন নার্স ।অ্যানি উইলকিস পলকে জানায় সে তার সবচেয়ে প্রিয় লেখক। এনি আহত লেখককে বাইরে রেখেই চিকিৎসা করাতে শুরু করে। আহত লেখকের ব্যথানাশক ঔষধের প্রয়োজন ছিল যা অ্যানি তাকে দিত। অ্যানির আচার আচরন মোটেই আর দশটা স্বাভাবিক মানুষের মতো ছিল না। তার উগ্র মেজাজ আর অদ্ভূত সকল কান্ডকারখানা লেখককে সর্বদা অস্বস্তিতে রাখতো।

তার অস্বাভাবিক কাজের মধ্যে একটি ছিল পলকে ব্যথানাশক ওষুধ না দিয়ে অপেক্ষা করানো। পল প্রচন্ড ব্যথায় আর্তনাদ করে ছটফট করলেই কেবল ওষুধ পেতো অ্যানির কাছে থাকে। দিন যায় আর লেখক পল খুব অসহায় হয়ে পড়ে। গুরুতর আহত হয়ে চলাফেরা বন্ধ হওয়ার কারণে অ্যানির উপর নির্ভরশীল হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না তার। একই সাথে অ্যানির উপর খুব বিরক্ত হতে থাকে লেখক।
অ্যানি জানায় সে লেখক এর সাম্প্রতিক লেখা সিরিজের শেষ খন্ড টি পড়েছে। অ্যানি পলকে জানায় লেখাটি সে খুবই উপভোগ করছে। লেখাটি পড়ে তার যে ভালো লাগার অনুভূতিগুলো তৈরি হয় সেগুলোও সে পলকে জানায়। সে আরও জানায় তার ব্যাগে সে নতুন আরেকটি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি খুঁজে পেয়েছে এবং পাণ্ডুলিপিটি পড়ার জন্য তার কাছ থেকে অনুমতি চেয়ে নেয়। কিন্তু পরের দিন অ্যানির আচার-আচরণ পুরো বদলে যায়। অ্যানিকে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ দেখা যায়। কারণ পলের অনুমতি পেয়ে যে নতুন বইটি সে পড়েছে তা তার একদমই ভাল লাগেনি। এমনকি সে এতটাই রাগান্বিত ছিল যে উত্তেজিত হয়ে সাবান-পানি দিয়ে লেখক পলকে ওষুধ খেতে দেয়। দুইদিন পরে অ্যানিকে আবারো প্রচন্ড অস্বচ্ছন্দ্য দেখায়। কারণ পলের সাম্প্রতিক লেখা “মিজারিস চাইল্ড”উপন্যাসে নায়িকার মৃত্যুর ব্যাপারটি সে মেনে নিতে পারেনি। এবার সে পলের উপর এতটাই ক্ষিপ্ত হয় যে তাকে রুমে একা রেখে অন্যত্র চলে যায়। অ্যানি ফিরে আসেনা দুদিন হয়ে যায়। এই দুই দিন ছিল লেখক পলের জন্য খুবই দুর্বিষহ সময়। এ সময়ে পলের কোন ঔষধ বা খাবারের ব্যবস্থা ছিলনা। ব্যথায় এবং ক্ষুধায় আর্তনাদ করতে থাকে পল। যখন অ্যানি ফিরে আসে তখন পলকে একটা অদ্ভুত শর্ত জুড়ে দেয়। সে তাকে তখনই ব্যথানাশক ওষুধ দেবে যদি সে তার কাছে থাকা উপন্যাসের মুদ্রিতলিপিটি পুড়িয়ে ফেলতে পারে। ব্যথার কাছে হার মেনে নেয় পল আর এই অদ্ভুত শর্তে রাজি হয়ে যায় অন্য কোন উপায় না পেয়ে। এই ঘটনার কারণে সে মনে মনে অ্যানিকে হত্যার পরিকল্পনা করতে শুরু করে।

একদিন লেখোকের ঘুম ভাঙলে অ্যানি তাকে বলল তাদের মধ্যে আর কোন ঝামেলা ঝঞ্ঝাট রাখা উচিত নয়। এতে করে পল তাড়াতাড়ি সুস্থ হবে না।সে তাকে একটি পুরাতন টাইপরাইটার এনে দেয় যেখানে কেবলমাত্র ইংরেজি “n” বর্ণটি ছিলনা। সে পলকে নতুন আঙ্গিকে “মিজারিস চাইল্ড” উপন্যাসটি লিখতে বলে যেখানে উপন্যাসের নায়িকা জীবন্ত থাকবে। পল অন্য কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে এবারও অযৌক্তিক আবদারে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু সে বলে ফেলে যে কাগজটি অ্যানি তাকে লেখার জন্য দিয়েছে তা তার পছন্দ হয়নি। এই কথা শুনে অ্যানি আবার খুব বিরক্ত হলো। রেগে গিয়ে তার পায়ে ঘুষি দেয় এবং আবার তাকে ঘরে একা ফেলে রেখে চলে যায়। ঘর ব্যথানাশক থেকে বাহির হলে পল হেয়ার পিন দিয়ে শোবার ঘরের দরজাটা খুলে। বাথরুমে সে ব্যথানাশক ওষুধের সন্ধান পায়। সে বাড়ির টেলিফোনটি পরীক্ষা করে দেখে যে টেলিফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা। সে ব্যথানাশক ঔষধ গুলো তোষকের নিচে লুকিয়ে রাখে যাতে অ্যানি দেখতে না পায়।
পল নতুন করে “মিজারিস চাইল্ড” উপন্যাসের কাজ শুরু করে অ্যানির কথামতো। কিন্তু অ্যানিকে কোনভাবেই সন্তুষ্ট করতে পারেনা। একদিন অ্যানির বাড়িতে ট্যাক্স অফিস থেকে একজন লোক আসে। লোকটি অ্যানির হাতে পাঁচশত ডলারের একটি বিল ধরিয়ে দেয়। কানের কাছে এত অর্থ ছিল না। তার এই অবস্থা দেখে পল বলল তার মানিব্যাগ থেকে টাকা নিয়ে বিল পরিশোধ করতে। তিন সপ্তাহ কেটে যায়, “মিজারিস চাইল্ড” উপন্যাস লেখার ভালো অগ্রগতি হয়। বৃষ্টি আসলে অ্যানির মেজাজ খারাপ হয়ে তার অস্বাভাবিক আচরণ এর মাত্রা বেড়ে যায়। সে পল কে সাথে নিয়ে আত্মহত্যা করার চিন্তা করে। পল তাকে নানা ভাবে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করে। অ্যানি আবারো তাকে ঘরে একা রেখে অন্যত্র চলে যায়। তবে এবার পলের জন্য কিছু ওষুধ রেখে যায়,কিন্তু কোন খাবারের ব্যবস্থা করে রেখে যায় না। পল আবার হেয়ার পিন দিয়ে দরজা খুলে। এবার সে পালানোর জন্য রাস্তা খুঁজে। কিন্তু জানালা দরজা সব তালাবদ্ধ ছিল। বসার ঘরে তখন সে অ্যানির ব্যক্তিগত সামগ্রী ঘাটাঘাটি করে একটা অ্যালবাম খুঁজে পায় যেখানে কেটে রাখা কিছু খবরের কাগজের টুকরো ছিল। খবরের কাগজ গুলোতে ত্রিশ বছর আগের কিছু রহস্যময় খুনের ব্যাপারে লেখা। লেখাগুলো পড়ে পলের বুঝতে দেরী হয়না যে অ্যানি একজন ভয়াবহ মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত সিরিয়াল কিলার। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় সে অ্যানিকে খুন করবে, না হলে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। এই মৃত্যুপুরী থেকে বাঁচতে সে রান্নাঘর থেকে একটা বড় আকৃতির ছুরি নিয়ে ঘরে চলে যায় আর অ্যানির ফেরার অপেক্ষা করে। এনি ঘরে ফিরে এসে টের পেয়ে যায় পল ঘর থেকে বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল। অ্যানি প্রতিশোধ নিতে পলের পা হাতুড়ি দিয়ে থেতলে দেয়। এরপর পল আবার তাকে রাগালে পলের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে ফেলে।

একজন তরুণ পুলিশ কর্মকর্তা অ্যানির বাড়িতে এসে তাকে নিরুদ্দেশ লেখক এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পল ভেতর থেকে চিৎকার করে সাহায্য প্রার্থনা করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অ্যানি পুলিশ কর্মকর্তাকে খুন করে ফেলে। অ্যানি পলকে একটা ছোট্ট কুঠুরিতে আটকে রেখে লাশ সরাতে চলে যায়।

পল লেখার কাজ থামায় না। সে “মিজারিস চাইল্ড” উপন্যাসটি লেখা শেষ করে। অ্যানিকে বলে সিগারেট খেয়ে এই বিশেষ ঘটনাটিকে সে উদযাপন করতে চায়। অ্যানি বই খুলে পড়ার আগেই পল বইয়ের পাতায় সিগারেটের আগুন আর আগেই লুকিয়ে রাখা কেরোসিনের তেল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। অ্যানি মরিয়া হয়ে বইয়ের পাতাগুলো কে রক্ষা করতে চায়। এই সুযোগে লেখক টাইপরাইটার দিয়ে তার মাথায় প্রচন্ড জোরে আঘাত করে। অ্যানি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। সেও পাল্টা আক্রমণের চেষ্টা চালায়। এভাবে দুজনেই আপ্রাণ চেষ্টা চালায় একে অপরকে বিনাশ করার। শেষ পর্যন্ত পল অ্যানিকে মেরে ফেলতে সমর্থ হয়। এরপর লেখক পল নিউইয়র্কে নিজের বাড়িতে ফিরে এসে নতুন জীবন শুরু করে। কিন্তু মৃত্যুপুরীর সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতিগুলো তাকে তাড়া করে দুঃস্বপ্ন হয়ে।

Writer: Mysha Islam

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply