When you reach the end of your rope, tie a knot in it and hang on.

— Franklin D. Roosevelt

অভিমানী

আজ সকাল থেকেই চিরচির করে বৃষ্টি পড়ছে। আজ তেমন কাজ নেই। তাই বাসার বাইরে বের হইনি। লাইব্রেরি রুমে এসে পুরনো বইগুলো নড়াচড়া করছি। কোন এক বইয়ের ভেতর থেকে একটা ছবি মেঝেতে পড়ে। ছবিটা তুলে কিছুক্ষণ সেদিকে তাকাই। মনে পড়ে যায় কিছু স্মৃতি।
অনার্স পরীক্ষা শেষ করে বন্ধুর বাসা চট্টগ্রামে যাই। এর আগেও কয়েকবার গিয়েছিলাম তার বাসায়। তবে তা পাঁচ বছর পূর্বে। তাই কোন খবর না দিয়ে চলে আসি তার বাসায়। দরজায় নক করার কিছুক্ষণ পর এক মেয়ে এসে দরজা খুঁলে। অপলক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকি তার দিকে। এর আগে কোন মেয়েকে এভাবে দেখিনি আমি। নিজের অজান্তে যেন হাত বাড়িয়ে দিই।
আপনি….কাকে চান?
মুহুত্বের মধ্যে জ্ঞান আসে আমার । হাত নামিয়ে নেই। একটু ইতস্তত করে বলি , জয়….
ভেতরে আসুন। কন্ঠটা কেমন চেনা লাগলো। ভেতরে ঢুকে ছোপায় বসে মাথা ঘুড়িয়ে চারপাশটা একবার ভালো করে দেখি। না! সবকিছু আগের মতোই আছে। কিন্তু বাসায় কাউকে দেখতে পেলাম না, মেয়েটিকে ছাড়া। তাকে প্রশ্ন করতেই শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল, ওরা বাইরে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে। এরপর বেশ কিছুক্ষণ নিস্তব্ধ থাকলাম। আপনি ?
এক মুহুত্বের জন্য মনে হলো আমার প্রশ্ন শুনে সে বুঝি একটু মুচকি হাসল।
আমি মিনি। এক অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকালাম তার দিকে। সেই ছোট্ট মিনি আজ এত বড় হয়ে গেছে! সেই দুষ্টু মেয়েটি আজ এত শান্ত!
চা খাবেন?
একটু অন্য মনস্ক হয়ে মাথা নাড়ালাম। সে উঠে চলে গেল রান্নাঘরের দিকে। মিনিট চারেক পর চা নিয়ে এলো। একটা কাপ বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। কাপটা হাতে নিয়ে বললাম, এবার তো তুমি এইচএসসি দিয়েছো?
হ্যাঁ। ভাইয়া আপনার উপর অনেক অভিমান করেছে। বিয়েতে আসেননি কেন? আমিও কিন্তু…
কথা শেষ করতে পারল না মিনি। দরজায় নক করার আওয়াজ হলে কাপটা রেখে সেদিকে যায়। একটা ছায়ামূর্তি এগিয়ে এলো আমার দিকে। তার চোখে মুখে অভিমানের স্পষ্ট ছাপ দেখতে পেলাম। কাছে এসেই দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল আমায়। কেমন আছিস? এতদিন পর বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ায় মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হলো না। মিনির সাথে গল্প কর আমি আর তোর ভাবি ফ্রেস হয়ে আসছি।

রাতে ছাদে বসে ছিলাম। হঠাৎ পিছন থেকে এক আওয়াজ ভেসে এলো। চা খাবেন? পিছনে ঘুড়ে তাকালাম। মিনি চায়ের কাপ হাতে দাঁড়িয়ে আছে। একটা কাপ আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। আপনি কিন্তু বলেন নি সেই কথা? আমি কোন জবাব দিলাম না। শুধু একটু হাসলাম। পাশে এসে বসল সে। কিছুক্ষণ গল্প করলাম দুজন। এক সময় একটা কবিতা শুনালোর আবদার করল। না বলতে পাললাম না।
কোন এক নিস্তব্ধ রজনীতে
হয়েছে কত কথা দুজনার মাঝে।
তবু আমি পারিনি বোঝাতে
মনের এই ব্যাকুলতার মানে।
উঠে চলে গেল মিনি। কিছুদূর গিয়ে থমকে দাঁড়াল। অভিমানী চোখে তাকালো আমার দিকে। হলুদ বর্ণের চোখ দুটো ভীষণভাবে কেঁপে উঠল।
পরের দিন বিকালে বিদাই নেই জয়ের কাছে। মিনির রুমে যাই। কিন্তু নেই সে। একটা ছবি পড়ে আছে মেঝেতে। তুলে নেই সেটা। বইয়ের ভেতর আড়াল করে রাখি। বাইরে বেরিয়ে চোখ যায় পাশের ছাদে। অভিমানে জলজল করা দুটো চোখ তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

ছবিটা হাত থেকে পড়ে যায়। পিছন থেকে একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসে। লাইব্রেরিতে কি করো তুমি? পিছন ঘুড়ে তাকাই। হেঁটে আসছে মিনি। অভিমানী জলজল চোখে।

Writer: মোঃ শফিকুল ইসলাম আবির

What’s your Reaction?
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0
+1
0

Leave a Reply